নকীব উদ্দিন গাজী ডায়মন্ড হারবার: গ্রামবাংলার লৌকিক দেবতা বারাঠাকুরের পূজা সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশে হয়ে থাকে। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি প্রভৃতি জেলার গ্রামাঞ্চলে এই দেবতার পূজা প্রচলিত। তবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় এই বারাঠাকুরের পূজার প্রচলন রয়েছে অত্যধিক। ‘বারা’ শব্দের অর্থ বাধা দেওয়া বা নিবারণ করা। মূলত ব্যাঘ্র-ভীতি নিবারণ ও সাংসারিক মঙ্গল কামনায় এই দেবতার পূজা করা হয়। সুন্দরবন অঞ্চলে বারাঠাকুরের পূজা বেশি হয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বারাঠাকুরের পূজা করেন। এই দেবতার জন্য বাংলার লোকশিল্পের আদি ধারা আজও টিকে আছে।
আরও পড়ুন-জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : ইন্দিরার নাম বাদ দিল কেন্দ্র, অভিনেত্রী নার্গিসের নামও নেই
লোক বিশ্বাস, বারা হল দক্ষিণরায়ের কাটা মুণ্ড। বারা বলতে সাধারণত ঘট-কে বোঝায়। চারিদিকে ঘেরা একটু উঁচু বেদিকেও ‘বারা’ বলা হয়। এই ধরনের বেদিতে অধিষ্ঠান করে যে দেবতা পূজা পান তাঁকে ‘বারাদেবতা’ বলা যেতে পারে। বারা ঠাকুরের জাঁতাল পূজার কালে তাঁর ছোট বেদিটা খেজুর গাছের ডাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। বারাঠাকুর কোনও শাস্ত্রীয় দেবতা নয়। তবুও এই পুজোয় ব্রাহ্মণ পৌরোহিত্য করেন, শাস্ত্রীয় বিধানও অনুসরণ করা হয়। খোলা মাঠে, গাছের তলায় বা কোনও জলাশয়ের ধারে বারাঠাকুরের মুণ্ডমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে মূর্তি বিসর্জন করা হয় না। এই বারাঠাকুরের দু’রকমের প্রতিমার প্রচলন আছে। একটিতে নরের ও অপরটিতে নারীর মুখ আঁকা থাকে। নরমূর্তির মুখে গোঁফ, গালপাট্টা খোদিত, নারীর মুখে শুধু গালপাট্টা দেখা যায়।বারা ঠাকুরকে অনেকে গণেশের মুণ্ড মেনেও পুজো করে।
আরও পড়ুন-অন্নদাতা কৃষকদের সমর্থন, কেন্দ্রের জেল তৈরির প্রস্তাব খারিজ, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের
দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণ বারাসতের নামকরণই হল শত বারা থেকে। দক্ষিণ বারাসতেই রয়েছে শতবারা মূর্তি। প্রচলিত রয়েছে, বহু যুগ আগে যখন দক্ষিণ বারাসাতের উপর দিয়েই বয়ে যেত আদিগঙ্গা, সেই সময় কোনও একজন ব্যবসায়ী নৌকা নিয়ে বাণিজ্য করতে বেরিয়েছিলেন। উত্তাল গঙ্গায় সেই বণিকের নৌকা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন তিনি ঈশ্বরের শরণাপন্ন হলে দৈববাণী হয়। সেইমতো বারা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা অর্চনা শুরু করেন ব্যবসায়ী। ১০০টি বারামুর্তি এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় এরপর থেকেই এই এলাকার নাম হয়ে যায় দক্ষিণ বারাসত।