ভরা থাক স্মৃতি সুধায়

রবীন্দ্র-গানের দুই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী। যুগের ব্যবধান থাকলেও রবীন্দ্রনাথের দুই বরপুত্রীর মধ্যে ছিল সুন্দর সখ্য। এক অদ্ভুত সমাপতনে দুজনেরই তিরোধান দিবস ৩ জানুয়ারি। তাঁরা হলেন কিংবদন্তি গায়িকা সুচিত্রা মিত্র এবং সুমিত্রা সেন। প্রয়াণদিবস উপলক্ষে তাঁদের স্মরণ করলেন তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরক

Must read

সুচিত্রা মিত্র
শৈশব থেকেই পরিচিত হয়েছিলেন গান ও সাহিত্যের সঙ্গে। কেননা বাবা সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় ছিলেন পেশায় আইনজীবী, নেশায় রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট সাহিত্যিক।
শিশুসাহিত্যিক হিসেবে সে-যুগে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। তাঁর লেখা ‘চালিয়াত চন্দর’, ‘মা কালীর খাঁড়া’, ‘পাঠান মুল্লুকে’ কিশোর-কিশোরীদের খুব পছন্দের বই ছিল।
দুই পুত্র তিন কন্যা। কনিষ্ঠার জন্ম হয়েছিল চলন্ত ট্রেনে। গুজুন্ডি স্টেশনে হয়েছিল তাই বাবা আদর করে ছোট্ট পুতুলের মতো কন্যের নাম রেখেছিলেন গজু। কিন্তু এত আদরের নাম সেটা তো আর সবখানে চলবে না! রবীন্দ্রভক্ত পিতা এরপর মেয়ের নাম দিলেন নন্দিনী। পরে অবশ্য অন্য একটি নামও দিয়েছিলেন তিনি।
ট্রেনে জন্ম তাঁর, তাই ট্রেন নিয়ে নিজেই ছড়া লিখেছিলেন একটি—
শুনেছি, রেলগাড়িতে জন্মেছিলাম
দু পায়ে তাই চাকা
সারা জীবন ছুটেই গেলাম
হয়নি বসে থাকা।
যায় যদি আজ উত্তরে ভাই
কালকে যাব দক্ষিণে
পশ্চিমে যাই দিনের বেলা
রাত্তিরে ঘুরি পূবকে চিনে।
হিল্লী দিল্লী স্বদেশ বিদেশ
চক্করের আর নাই রে শেষ
প্রাণটা বাঁচে চাকা দুটো
কেউ যদি ভাই নেয় কিনে।
প্রায়ই ভাবি আপন মনে
ফুরোবে পথ কোন বিজনে
ছোটা ফেলে ছুটির আশায়
রই চেয়ে তাই নির্নিমেষ।

আরও পড়ুন-শহরে জমে উঠেছে বাংলা সঙ্গীত মেলা

কে এই চলন্তিকা? পরবর্তী সময়ে যিনি নিজেই মজা করে বলতেন— ‘ট্রেনে জন্মেছি তো, তাই আমার পথ চলাতেই আনন্দ।’
রামায়ণ অনুবাদক কবি কৃত্তিবাস ওঝার (পঞ্চদশ শতাব্দী) উত্তরপুরুষ সৌরীন্দ্রমোহনের কনিষ্ঠা কন্যাটি আর কেউ নন, তিনি কিংবদন্তি গায়িকা সুচিত্রা মিত্র।
একেবারে ছোট বয়স থেকেই সঙ্গীত শিক্ষায় হাতে-খড়ি। বাবা সৌরীন্দ্রমোহন এবং মা সুবর্ণলতা দু’জনেই সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন।
অচিরেই পরিবারের সঙ্গীতানুরাগ শিশুটির মনেও প্রবাহিত হয়। ছোটবেলায় পঙ্কজ মল্লিকের কাছে গানে হাতে-খড়ি। এরপর সেভাবে আর তাঁকে থামতে হয়নি।
সঙ্গীতের সঙ্গেই জীবন বেঁধেছিলেন।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই চলে যান শান্তিনিকেতনে।
চার বছর সঙ্গীত ভবনের ডিপ্লোমা কোর্স করেন। তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে।
পরবর্তী সময়ে কলকাতা ফিরে এসে পড়াশোনা সারেন স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত প্রকৃতি ও মাস্টারমশাই শান্তিদেব ঘোষের উদাত্ত প্রাণবন্ত গায়নশৈলী সুচিত্রাকে প্রভাবিত করেছিল।
তবে গান ছাড়াও বাদ্যযন্ত্র যেমন এসরাজ, তবলা, সেতার বাজানো, অভিনয়, আবৃত্তি, নাচ, লেখা, ছবি-আঁকা সবই করেছেন। অর্থাৎ আদ্যন্ত শিল্পী যাকে বলে!
সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠে ইন্দিরা গান্ধীর খুব প্রিয় ছিল একটি গান। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’…
নিঃসঙ্গতাকে আপন করে নেওয়ার জাদুমন্ত্র ছিল তাঁর কণ্ঠে।

আরও পড়ুন-কলেজ পড়ুয়া পঞ্চায়েত প্রধান সোনম. জনজাতির গ্রামের স্বপ্ন দেখা শুরু

বলা হয়ে থাকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাসের মতো তিনিও রবীন্দ্রসঙ্গীতকে সাধারণ শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেওয়ায় খুব বড় ভূমিকা পালন করেছেন।
তাঁর উদাত্ত কণ্ঠ ও স্পষ্ট উচ্চারণের গায়কি সাধারণ মানুষকে তো বটেই প্রথিতযশা ব্যক্তিরাও মুগ্ধ হতেন। তাঁর ভক্ত-তালিকায় মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মতো জগৎ-বিখ্যাতরাও ছিলেন।
কেউ আবার প্রিয় শিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা, গড়েছেন ভাস্কর্য।
তাঁকে নিয়ে বিষ্ণু দে-র লেখা কবিতা আর রামকিঙ্কর বেজের তৈরি আবক্ষমূর্তি এখন কিংবদন্তি।
নিঃসঙ্গতাকে আপন করে নেওয়ার জাদুমন্ত্র ছিল কণ্ঠে। কণ্ঠের জাদুমায়ায় মুগ্ধ ছিলেন ভক্তরা।
‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’ গেয়ে তখন তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন এমন যে বিদগ্ধ মহলে কৃষ্ণকলি মানেই তখন সুচিত্রার নাম।
তাঁর কণ্ঠ ছাড়া এই গান অন্য কারও গলায় শুনতে তখন অনেকেই ইতস্তত করেন। সমস্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতপ্রেমীর কাছে এই কণ্ঠের দীপ্তি ছুঁয়ে যেত।

আরও পড়ুন-গঙ্গাসাগর মেলার আগেই নদীপথে কড়া পুলিশি নজরদারি!

রবীন্দ্রসঙ্গীতে নিবেদিত সুচিত্রা নিজেই বলতেন— ‘এই গানই আমার সঙ্গী, আমার সব চাওয়ার সমাপ্তি।’
শান্তিনিকেতনের শিক্ষায় তিনি পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার স্কুল রবিতীর্থ। সেখানে বিভিন্ন গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য পরিচালনার কাজে লাগিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের ঘরানা। কেননা, শান্তিনিকেতনের স্মৃতি তাঁর জীবনে ছিল অমলিন।
দীর্ঘকাল তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান ছিলেন।
জীবনে ওঠা-পড়ার সঙ্গে আজীবন যুদ্ধ করেছেন তিনি। তবে কখনও আপস করেননি। সংসারসাম্রাজ্য সামলে, নিজের ব্যস্ততম সাঙ্গীতিক জীবন, গণনাট্য সংঘ ও মিটিং-মিছিলে যোগদান।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে তাঁর জ্ঞান পড়াশোনা ছিল অগাধ। অসম্ভব সাহস ছিল সৌরীন্দ্র-কন্যার। সততাও ছিল। ছকভাঙা জীবনকে অন্যরকমভাবে দেখতে চেয়েছিলেন।
একটা সময়ের পর স্বামী ধ্রুব মিত্রের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় নানা কারণে। তবু বিচ্ছেদই যে শেষ কথা নয় তা প্রমাণ করেছেন তিনি। সম্পর্কের সুতো ছেঁড়েননি।
দম্পতির পরিচয় মুছে যাওয়ার পরও সকলের কাছে পরিচয় করিয়েছেন স্বামীকে বন্ধু বলে।
একবারও কুকথা বা অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেননি বা দ্বিতীয়বার বিয়ে করার কথা ভাবেননি।
প্রাক্তন স্বামীকে সম্মানপ্রদর্শন এবং সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ শিক্ষণীয়।
মানবতার দিশারি এই শিল্পীর কাছে জীবনের পাঠ ছিল একেবারে অন্যরকম। তাঁর দৃঢ়তা, ঋজুতা, দায়িত্ববোধ, স্বধর্ম পালনে একাগ্রতা, ধৈর্য, জীবনযন্ত্রণাকে হাসিমুখে সহ্য করবার অসীম ক্ষমতা আজও অনুপ্রেরণা জোগায় মানুষকে।
জীবনের জটিলতা এড়িয়ে জীবনকে অনায়াস দক্ষতায় তিনি শুনিয়েছিলেন জীবনের জয়গান। তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা এ সমুদ্রে আর কভু হবনাকো দিশেহারা৷
সুমিত্রা সেন
উত্তর কলকাতায় জন্ম। ছোটবেলায় নাম ছিল অরুণা, ডাকনাম বুলবুল। বাবা অতুলচন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন বিদ্যাসাগর কলেজের দর্শনের অধ্যাপক।
তাঁর উৎসাহেই ছোটবেলায় ছবি আঁকা, বাটিকের কাজ শিখেছিলেন।
মা অমিয়া দাশগুপ্ত গান-বাজনা জানতেন শুধু নয়, বাড়িতে অর্গান বাজিয়ে গান করতেন। মার কাছেই তাঁর গানের হাতে-খড়ি।
শুধু গানই নয়, বাবার উৎসাহে সেতারও শিখেছিলেন। কলকাতার বালিগঞ্জ গার্লস স্কুলে সেখানে বেঙ্গল মিউজিক কলেজের ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ আসার উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীতটি পরিবেশন করেন অতুলচন্দ্রের কন্যা।
গান শুনে ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ বলেছিলেন, ‘তোমার গান হবে। ভাল করে শেখো। তোমার গলাটা খুব মিঠা।’
ওস্তাদজির কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিল। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। লেডি ব্রেবোর্নে পড়ার সময় ইন্টার কলেজ কম্পিটিশনে বিভিন্ন ধরনের গানে নাম দেওয়ার সূত্রে পল্লিগীতি, কীর্তন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের নানা শাখার গান শিখলেন এবং প্রথম হয়ে গোল্ড মেডেল পেলেন।
এতকিছু যাঁর সম্পর্কে বললাম পাঠকদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে কে তিনি? তিনি সুমিত্রা সেন। সঙ্গীতের সব শাখায় ছিল তাঁর অগাধ বিচরণ। রবীন্দ্রসঙ্গীত তো বটেই, নজরুলগীতি, ভজন, কীর্তন, পল্লিগীতি ও আধুনিক গানে শ্রোতাদের মনোহরণ করেছিলেন এই গুণী শিল্পী।

আরও পড়ুন-মিলল না জামিন, জেলেই চিন্ময়কৃষ্ণ

অজয় করের পরিচালনায় উত্তম-সুপ্রিয়া অভিনীত ‘শুন বর নারী’ ছবিতে রবিন চট্টোপাধ্যায়ের সংগীত পরিচালনায় প্রথম নেপথ্যে গাইলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত সুপ্রিয়া দেবীর লিপে। ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে। এই ছায়াছবিতে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্বয়ং উত্তমকুমার।
অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল এই গান। এরপর প্রায় চোদ্দো-পনেরোটি ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেছেন। একটি ছাড়া সব ক’টিতেই রবীন্দ্র- সঙ্গীত।
কোমল গান্ধার ছবিতে সুপ্রিয়া দেবীর লিপে তিনি গাইলেন ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’, আবার জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রর সঙ্গীত পরিচালনায় ‘কাঁচের স্বর্গ’তে, আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, ভি বালসারার সঙ্গীত পরিচালনায় ছায়াসূর্যতে ‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে’, আলি আকবর খাঁর সঙ্গীত পরিচালনায় একই অঙ্গে এত রূপ, আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার, রবিশংকরের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে ‘সখি ওই বুঝি বাঁশি বাজে’, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘নবরাগ’-এ ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে মন, মন রে আমার’, ‘আলো আমার আলো’ ছবিতে অতসী রূপে সুচিত্রা সেনের লিপে সুমিত্রা সেন গাইলেন ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা বিপদে আমি না যেন করি ভয়’। এই সন্ধ্যারতির গান তো প্রতিটি বাঙালির মননে মনে আজও অমলিন।
অজস্র ছবিতে তাঁর কণ্ঠ ও গায়কি মন ছুঁয়ে গিয়েছিল রবীন্দ্রপ্রেমীদের।
সুমিত্রা সেন একমাত্র ব্যতিক্রমী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী যিনি সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন সমস্ত তাবড় অভিনেত্রীদের লিপে প্লেব্যাক করেছেন। সমস্ত প্লেব্যাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী রবীন্দ্রসঙ্গীত দেওয়া বেশ কঠিন ছিল। তিনি অনায়াস দক্ষতায় শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিলেন।
উত্তম কুমারের সঙ্গে সুমিত্রা সেনের শেষ দিন অব্দি সুন্দর সম্পর্ক ছিল। সে-সময় যে নায়ককে দেখলে প্রায় সব মহিলাই অস্থির হয়ে উঠতেন অথচ সুমিত্রা সেনের সঙ্গে ছিল অত্যন্ত সম্ভ্রমের সম্পর্ক। উত্তম কুমার তাঁকে দিদিভাই বলে ডাকতেন।
এইবার তিনি ঠিক করলেন যে, তাঁর প্রকৃত ক্ষেত্র রবীন্দ্রসঙ্গীত। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গানে তাঁর সুমধুর গলা, সাবলীল গায়কি ও আতিশয্যহীন অভিব্যক্তি দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করলেন। এইচএমভি থেকে প্রকাশিত লং প্লে রেকর্ডে বিভিন্ন গীতিনাট্য, রবীন্দ্র গীতি আলেখ্য তিনি করেছেন।
ত্রিবেণী নামে এক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন।
সুমিত্রা সেন তাঁর মেয়ে ইন্দ্রাণী সেনের বিয়েতে উত্তম কুমারকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সবাই সংশয়ে ছিলেন অত বড় শিল্পী তিনি আসবেন কি না! কিন্তু প্রত্যেকের দ্বিধার সংশয় উড়িয়ে উত্তম কুমার নিজে এসেছিলেন শুধু নয়, তাঁর প্রিয় দিদিভাইয়ের মেয়েকে উপহার দিয়েছিলেন সুন্দর একটা বেনারসি শাড়ি।
অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন সহজ সরল আন্তরিক মনের বিখ্যাত এই শিল্পী সুমিত্রা সেন। কন্যা ইন্দ্রাণীর বিয়ের পর কোথাও নেমন্তন্ন বাড়ি গেলেই তিনি বলতেন উত্তম কুমারের দেওয়া সেই শাড়িটা পরে যেতে। এতটাই খুশি হয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন-হিমাচলের বানিখেতে রিসর্ট মালিককে খুনের অভিযোগ তিন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে

উস্তাদ আলী আকবর খাঁ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্ট শিল্পী সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। তিনিও দীর্ঘদিন অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তেসরা জানুয়ারি বারো বছর আগে এবং পরে একই দিনে মৃত্যু মিলিয়ে দিল বাংলা তথা দেশের দুই কিংবদন্তি গায়িকাকে। ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি মারা গিয়েছিলেন সুচিত্রা মিত্র। তার ঠিক বারো বছর পর প্রয়াণ হল সুমিত্রা সেনের। দু’জনেই বিভিন্ন ধরনের গান গেয়েছেন তবে দুজনেরই মূল খ্যাতি রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে।
সুচিত্রার জন্ম ১৯২৪-এ। ঠিক ন’বছর অর্থাৎ প্রায় এক যুগ পরে ১৯৩৩-এ জন্ম সুমিত্রার। একটা সময় রবীন্দ্রসঙ্গীত গীতিনাট্য নৃত্যনাট্যের রেকর্ডের পরিচিতিতে উজ্জ্বল দুটি নাম ছিল সুচিত্রা এবং সুমিত্রার। একাধিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে গান গেয়েছেন তাঁরা।
শাপমোচন নৃত্যনাট্যে কমলিকা চরিত্রে সুচিত্রার গলা এবং অরুণেশ্বরের চরিত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলা বাঙালি মননে চিরদিনের জন্য জায়গা করে নিয়েছে। সেই রেকর্ডেই সুমিত্রার কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল ‘ভরা থাক স্মৃতিসুধায়’ গানটি, আর সেই গান সুমিত্রার গায়নভঙ্গির নিজস্ব গুণে বাঙালির কাছে আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছিল। অগ্রজা সুচিত্রার গায়কি নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন সুমিত্রা। রবীন্দ্রভারতীর সহকর্মী হওয়ায় জীবনের একটা বড় অংশ দু’জনের একসঙ্গে কেটেছিল। হয়তো আবার দেখা হয়েছিল দুই গুণী শিল্পীর। সুরে সুরে ভরে উঠেছিল সেই মায়ালোক। জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে।

Latest article