প্রতিবেদন : রাজ্যে তৃণমূলকে হারাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছে রাম-বাম জোট। শুক্রবার নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়ায় শহিদ তর্পণের পর ফের এই অভিযোগে সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিএমের হার্মাদরাই এখন জার্সি বদলে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেই অভিযোগেই সিলমোহর দিলেন রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রকাশ্য সভায় তিনি স্বীকার করে নেন, সিপিএমের অনেকেই তাঁকে ভোট দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতার এই দাবির পরই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নামতে হয় সুজন চক্রবর্তীর মতো সিপিএম নেতাদের। তবে বিস্ময়ের সঙ্গে শুভেন্দুর ‘সিপিএমের ভোট’ পাওয়া নিয়ে তাঁকে তীব্র কটাক্ষ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, শহিদ দিবসের কথা কোথায়! এ তো শুধু ‘আমি আমি’ শুনলাম। নাম না করে শুভেন্দুকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, বিজেপির অন্যদের ভোট প্রয়োজন হয় না, আমরা নিজেদের ভোটেই জেতার ক্ষমতা রাখি। এভাবেই এদিন ফের আরও একবার সামনে চলে এল বঙ্গবিজেপির অন্দরের ফাটল।
তার আগে এদিন ভোর চারটের সময় নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়ায় শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে। অন্ধকারের মধ্যেই শহিদদের স্মরণে হল মোমবাতি মিছিল। মিছিল শেষে শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। একদিকে কনকন ঠান্ডা, তার ওপর অন্ধকার। কিন্তু কোনও কিছুতেই দমানো যায়নি মানুষের উৎসাহ। শহিদ তর্পণে মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল নজরকাড়া। ২০০৭-এর ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে সিপিএম হার্মাদদের গুলিতে নিহত হন বিশ্বজিৎ মাইতি, শেখ সেলিম ও ভরত মণ্ডল। সেই থেকে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে শহিদ দিবস পালিত হয় নন্দীগ্রামে। শহিদ তর্পণের পর সভায় বিজেপি তথা শুভেন্দু অধিকারীকে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেন, সেদিন সিপিএমের যে হার্মাদরা তৃণমূল কর্মীদের মেরেছিল আজ তারাই শুভেন্দুর সঙ্গে শহিদ দিবস পালন করছে। বাম এখন রামের সঙ্গে এক হয়ে তৃণমূলকে হারাতে নেমেছে। নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীরা কেউ বিজেপির সঙ্গে নেই।
আরও পড়ুন-অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির মতো বেহিসেবি টাকা নয়, দাবি রিপোর্টের
কুণালের অভিযোগ, সিপিএম যেমন আন্দোলনকারীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাত, এখন শুভেন্দু কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে আন্দোলনকারীদের ফাঁসাতে চাইছে। এই অভিযোগ করে ফের একবার শুভেন্দুকে কলার ধরে জেলে ভরারও হুঁশিয়ারি দেন কুণাল। বলেন, ও নিজেকে বাঁচাতে বিজেপিতে গিয়ে অমিত শাহের জুতো পালিশ করছে। কুণাল ছাড়াও ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ সুফিয়ানও বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তাঁরা ছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি, যুব তৃণমূল নেতা সুপ্রকাশ গিরি, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় পাল, নন্দীগ্রাম ব্লক ১-এর তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ, নন্দীগ্রাম ব্লক ২-এর সভাপতি অরুণাভ ভুঁইয়া। সভাপতিত্ব করেন কালীকৃষ্ণ মণ্ডল, সভা পরিচালনা করেন প্রণব গুহ। সভায় সংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা মধুসূদন মণ্ডল।