বাংলা আজ ডুরান্ডই চায়

বড় ম্যাচের আগে যেমন টেনশন হত এখন সেটা হচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে আমি আর আকাশ (বন্দ্যোপাধ্যায়) একসঙ্গে বসেছিলাম।

Must read

মানস ভট্টাচার্য
মনে হচ্ছে আমি আবার খেলোয়াড় জীবনে ফিরে গিয়েছি। বড় ম্যাচের আগে যেমন টেনশন হত এখন সেটা হচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে আমি আর আকাশ (বন্দ্যোপাধ্যায়) একসঙ্গে বসেছিলাম। আমার অবস্থা দেখে ও বারবার বলছিল মানসদা কুল ডাউন। কুল ডাউন। পরে ভাবলাম ও আমার থেকে এত ছোট, তবু কী সুন্দর মাথা ঠান্ডা রাখতে পেরেছে। আমি পারলাম না কেন। এই দেখুন এখনও বোধহয় সেটা পারছি না।
আসলে এই একটা ফাইনালের সঙ্গে বাংলার হৃদয়, আবেগ, সম্মান সব জড়িয়ে আছে। তিন প্রধানের পর বাংলার আরও একটা দল খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই জায়গায় উঠে এসেছে। আমি বলতে পারি ডায়মন্ড হারবার এফসি অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো ছুটছে। একের পর এক বাধা টপকে এগিয়ে গিয়েছে ছেলেরা। এখন শুধু ফাইনালের বাধা টপকানোর অপেক্ষা। জানি আজকের ম্যাচ খুব কঠিন। নর্থ ইস্টের পাহাড়ি ছেলেরা খুব দৌড়বে। ওদের আলাদিন আজারিকে ফাঁকা জায়গা একদম ছাড়া যাবে না। আমার বিশ্বাস কিবু সেটা বুঝে গেমপ্ল্যান করবে।

আরও পড়ুন-অভিষেক থাকতে পারেন ফাইনালে

আমি ডায়মন্ড হারবারের কোচ কিবুর কথা বলছি। খুব ঠাণ্ডা মাথার লোক। আমাদের সবার কথা শোনে। তবে সিদ্ধান্ত ওই নেয়। কেন নেবে না? একটা আনকোরা দলকে ও ওই জায়গায় নিয়ে এসেছে। এটুকু ওর প্রাপ্য। তবে আমরা যারা ডায়মন্ড হারবার এফসির সঙ্গে যুক্ত, কেউ ওর কাজে মাথা গলাই না। ওকে ওর কাজটা করতে দিই। আমরা শুধু পাশে থাকি। আর ওই যে বলেছি হৃদয় দিয়ে গ্যালারি থেকে চিৎকার করি। ভুলে যাই যে আমিও একদিন ভারতীয় দলে খেলেছি। আসলে চেষ্টা করেও টেনশন থামাতে পারি না।
ডুরান্ডে ডায়মন্ড হারবার এফসির খেলারই কথা ছিল না।  সুযোগটা এসে গিয়েছিল। তারপর মোহনবাগানের কাছে পাঁচ গোল খাওয়া। কিন্তু দেখুন দলটা কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ছেলেরা টিম গেম খেলেছে। নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে কিবুর স্ট্র্যাটেজি ছিল প্রথমে গোল খাব না। আর উপরে বল না তুলে পাসিং ফুটবল খেলব। ওদের মিগুয়েল বাঁ পায়ের প্লেয়ার। ও যাতে জায়গা না পায় খেলার সেটা নিশ্চিত করার ব্যাপার ছিল। ছেলেরা তাতে সফল হয়েছে। এই উদ্যম নিয়ে আজ নর্থ ইস্টকেও রুখে দিতে হবে।
দেখুন ফুটবল এখন অনেক বদলে গিয়েছে। আমাদের সময় ইন্ডিভিজুয়াল ব্রিলিয়ান্সের জায়গা ছিল। সুরজিৎ সেনগুপ্তর স্কিল, বিদেশ বসুর উইং ধরে দৌড় বা সুভাষ ভৌমিকের ড্যাশিং ফুটবল বহু ম্যাচে জয় এনে দিয়েছে। কিন্তু এখন সব কোচ টোটাল ফুটবলের উপর জোর দেন। এখন দেখবেন ডেড বল সিচুয়েশন থেকে গোল হচ্ছে। কর্নার বা ফ্রিকিকে পিছন থেকে উঠে এসে হয়তো স্টপার গোল করে বেরিয়ে গেল। এইসঙ্গে পাসিং ফুটবলের কদর বেড়েছে। লং বল না খেলে যতটা পারো বল নিজেদের দখলে রেখে দাও।
কিন্তু কিবু আজ কি স্ট্র্যাটেজি নেবে সেটা জানি না। জানতে চাইও না। এটা ওর ব্যাপার। কিন্তু এটা জানি যে জবিদের জন্য এমন কোনও স্ট্র্যাটেজি রাখবে যা নর্থ ইস্টের ডিফেন্স ভাঙতে সক্ষম হবে। এই জবি আর আমাদের গোলকিপার দুজনেই বড় ক্লাব খেলে এসেছে। তাই প্রেশার সিচুয়েশন কি সেটা জানে। আমার মনে হয় ওদের অভিজ্ঞতা ওরা দলের মধ্যে ভাগ করে নেবে। আমিও ছেলেদের বলেছি তোমরা লড়াই করে এই জায়গায় এসেছো। কেউ একা জেতোনি। একা হারোনি। এটা টিম গেম। ডায়মন্ড হারবার এফসি জিতেছে। তোমরা এমন সুযোগ আর পাবে না। আরও অনেকদূর এগোতে হলে এই ম্যাচ জিততে হবে তোমাদের।
আক্রমণে জবি নেতৃত্ব দিচ্ছে। অনেক বড় ম্যাচ খেলেছে ও। জানে কিভাবে নর্থ ইস্টের বাধা টপকাতে হবে। জবির দলের ডিফেন্সও খুব শক্তিশালী। রবি, অজিতরা খুব ভাল খেলছে। স্পেন থেকে আসা নতুন স্টপারকে প্রথম দেখেই ভাল লেগেছিল। ও কিন্তু জাত চেনাতে শুরু করেছে। শুনলাম এই প্রথম ও দেশের বাইরে খেলছে। সাবাস। দেখুন যে কথাটা দিয়ে শুরু করেছিলাম তাতেই আবার ফিরছি। বাংলার ফুটবলের স্বার্থে আজকের ফাইনাল জেতা খুব জরুরি ডায়মন্ড হারবার এফসির। যুবভারতীর গ্যালারি যদি সেটা ভেবে আজ ভরে ওঠে তাহলে খুব ভাল লাগবে। আজ আমরা কেউ ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা মহামেডান নই, আমরা সবাই ডায়মন্ড হারবার এফসি। আমাদের সবার হৃদয় আজ নিজেদের ঘরে ঐতিহ্যের ডুরান্ড দেখতে চায়।

Latest article