মৃত্যুমিছিল চলছে বাংলায় (Bengal)। গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে এক নয়া পদ্ধতিতে। পদ্ধতিটির নাম এসআইআর।
গত ২৭ অক্টোবর রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ‘আতঙ্কে’ অনেকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। কেউ আত্মহত্যা করেছেন, কোথাও আবার ‘আতঙ্কে’ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।
মরছে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। দরিদ্র, অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত, এবং অসহায়। বিজেপি ও তার শাখা সংগঠনের স্বীকৃতি পাওয়া নির্বাচন কমিশনের এসআইআর নিয়ে নতুন নতুন হুমকির জেরে এই মৃত্যুমিছিল।
যেমন, বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন ৬৩ বছরের এক প্রৌঢ়।
ওই প্রৌঢ়ের নাম অশোক সর্দার। বেলঘরিয়ার কামারহাটি পুরসভার অন্তর্গত প্রফুল্লনগর এলাকার বাসিন্দা অশোক পেশায় রিকশাচালক। অশোকের পরিবারের দাবি, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে থাকছেন তাঁরা। কোনও কারণে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় অশোকের নাম পাওয়া যায়নি, যদিও ওই ব্যক্তির মায়ের নাম সেই তালিকায় ছিল। কিন্তু সেই নামের বানান ভুল ছিল। পরিবার সূত্রে খবর, রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অশোক। এ বার কী হতে চলেছে, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে কি না, এ-সব নিয়ে সারাদিন চিন্তিত থাকতেন। সেই আতঙ্ক থেকেই চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা তাঁর। এমনটাই পরিবারের দাবি।
শুধু সাধারণ মানুষ নন, এখনও পর্যন্ত দুই বিএলও-রও মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, এসআইআরের কাজের চাপই মৃত্যুর কারণ!
শুধু বাংলায় (Bengal) নয়, ভিন রাজ্যেও মরছে বাঙালি।
যেমন, শেরফুল শেখ। তিনি মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লকের বালি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে তিনি থাকতেন বেঙ্গালুরুতে। পরিবারের অভিযোগ, এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই আতঙ্কিত ছিলেন শেরফুল। তিনি এই সংক্রান্ত বিষয়ে বহু ভিডিয়ো দেখতেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে আতঙ্ক আরও বেড়েছিল তাঁর। স্থানীয় বিএলও-কে প্রায়ই ফোন করে এসআইআর নিয়ে খবর নিতেন শেরফুল। শেরফুল নাকি বারবার বিএলও-কে বলেছিলেন, তাঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে? সেই বিএলও অবশ্য বারংবার তাঁকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এরই মাঝে বুধবার নাকি শেরফুলের বুকে ব্যথা শুরু হয়। তাঁকে সেখানে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা শেরফুলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে, এসআইআর আতঙ্কের কারণের প্রাণ গিয়েছে শেরফুলের।
১৭ নভেম্বর কলকাতার পূর্ব পুঁটিয়ারিতে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন যমুনা মণ্ডল নামে এক বৃদ্ধা। বৃদ্ধার ছেলে মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল বলেন, এসআইআর নিয়ে তাঁর মা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। আগে থেকে নার্ভেরও সমস্যা ছিল তাঁর। এই আবহে ১৫ নভেম্বর এনুমারেশন ফর্ম পান বৃদ্ধা। তারপরও তাঁর মা আতঙ্কে ছিলেন বলে দাবি মৃত্যুঞ্জয়ের। এই পরিস্থিতিতে ১৭ তারিখ গায়ে আগুন দেন বৃদ্ধা। তাঁকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর।
১৭ নভেম্বর দক্ষিণ দমদমেও বৈদ্যনাথ হাজরা, বয়স ৪৬ বছর, এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যা করেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরএন গুহ রোডের ওই বাসিন্দার। গত ১৫ নভেম্বর মোবাইল ফোন বাড়িতে রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
গত ১৯ নভেম্বর, ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায়। সরকারি নথিতে ভুল থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন ৫৭ বছরের শফিকুল মণ্ডল। এসআইআর হলে দেশ ছাড়তে হবে, এই ভয়ে কয়েক দিন ধরে কিছু মুখেই তোলেননি প্রৌঢ়। তার পরেই নিজেকে শেষ করে দেন তিনি।
এ-বার ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ আত্মহত্যার ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায়। মৃতের পুত্রের দাবি, সরকারি নথিতে ভুল থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন ৫৭ বছরের শফিকুল মণ্ডল। এসআইআর হলে দেশ ছাড়তে হবে, এই ভয়ে গত কয়েক দিন ধরে কিছু মুখেই তোলেননি প্রৌঢ়। তার পরেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন তিনি। বুধবার প্রৌঢ়ের মৃত্যুতে শোরগোল বাদুড়িয়ার যদুরহাটি এলাকায়।
শফিকুলের পরিবারের দাবি, কয়েক পুরুষ ধরে তারা বাদুড়িয়া তথা বাংলার বাসিন্দা। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে শফিকুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর পরিচয়পত্রে যে বয়স দেওয়া হয়েছে, তার ব্যবধান প্রথম পক্ষের সন্তানদের সঙ্গে কম। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কীভাবে ওই নথি ঠিক করবেন বা ভুল সংশোধন করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন স্বল্পশিক্ষিত মানুষটি। ছেলের দাবি, গত ১৫ দিন ধরে নানা জায়গায় ছোটাছুটি করেছেন বাবা। কিন্তু কাজ হয়নি। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন শফিকুল। মঙ্গলবার সবার নজর এড়িয়ে বাড়ির অদূরে একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে বিষ খান শফিকুল।
আগেও তো এসআইআর রাজ্যে (Bengal) হয়েছে, তখন তো এসব হয়নি। এমন কথা অনেকেই বলছেন। কিন্তু এবারের এসআইআর-এ শুধু ভোটার তালিকায় ভোটারদের নামের সংযোজন বিয়োজন নয়, যোগ করা হয়েছে আর একটা কার্যক্রম। বিদেশি চিহ্নিতকরণ। আর সেটি যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিজেপি ব্যবহার করতে পারে সেজন্য অ্যাপে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ম্যাপিংয়ের (শেষ এসআইআরের বছরের ভোটার তালিকায় সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম) ক্ষেত্রে ভুল হয়ে থাকলে তা বাতিল করা বা সংশ্লিষ্ট ভোটারকে আনম্যাপ করার ক্ষমতা থাকছে বিএলওদের হাতে। এমন অপশনে এবার যোগ্য ভোটারদের আনম্যাপ করে দেওয়ার ক্ষমতা তুলে দেওয়া হল।
বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপি কী চাইছে।
অবিলম্বে এসআইআর-এর জালিয়াতি বন্ধ হোক।
আরও পড়ুন-”বিনোদন জগত কর্ম প্লাবন সৃষ্টি করে”, কর্মসংস্থানের নতুন দিশা দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী

