জয় বাংলা জয় তৃণমূল

মহাত্মা গান্ধী, বাবাসাহেব আম্বেদকরের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে বিজেপি দেশের সাধারণ মানুষের কখনও কল্যাণ করতে পারে না। লিখেছেন ফারুক আহমেদ

Must read

আমরা জানি বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানেন বৈচিত্র্যময় ভারত হল নানা ভাষার ও নানা জাতের মানুষের মিলন ক্ষেত্র। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের দেশ হল ভারত। মিশ্র সংস্কৃতি আমাদের অর্জিত বৈভব, তা আমরা কখনওই নষ্ট হতে দেব না। ২১ জুলাই ২০২৪ শহিদ স্মরণে ধর্মতলায় ঐতিহাসিক বক্তব্য রাখলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশে জুলাই মানেই আবেগ-জর্জরিত এক দীপ্তিময় আলোর ছটা। আজ সারা বাংলার মানুষের বাঁধনছাড়া উল্লাস, সীমাহীন উচ্ছ্বাস এবং অভূতপূর্ব ভালবাসায় আমি এবং গোটা তৃণমূল কংগ্রেস পরিবার কৃতজ্ঞ। আমার প্রণম্য গণদেবতা আজ প্রমাণ করেছেন, বাংলার আকাশে-বাতাসে মুখরিত এবং জয়ধ্বনি কল্লোলিত হচ্ছে শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের। এই বছরের একুশে জুলাই আমাদের কাছে পুনরায় নবরূপে ধরা পড়েছে।

আরও পড়ুন-কবে দেওয়া হবে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রভিশনাল রেজিস্ট্রেশন? জানাল সংসদ

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ প্রমাণ করেছেন, এই পবিত্র মাটিতে কোনও দুর্বৃত্তদের স্থান নেই। আগামীর লড়াইয়ে কোনও আত্মতুষ্টি নয়, মানুষের এই আশীর্বাদ-দোয়া-ভালবাসাকে পাথেয় করে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।
নয়া নাগরিকত্ব আইন, সিএএ, এবং এনআরসির বিরুদ্ধে উদার সহিষ্ণু ভারতের কোটি কোটি মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে, সংবিধানকে সামনে রেখে সভা-সমাবেশে, প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। বিভেদকামী সরকারের পতন সুনিশ্চিত করতে জনতার এই একতা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতানেত্রীদের অনেক স্বপ্ন ছিল ৪০০ পার করার তা দেশের সচেতন মানুষ রুখে দিয়েছেন।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল। মহম্মদ আলি জিন্নাহ বলেছিলেন, হিন্দু আর মুসলমান দুটি পৃথক জাতি, তাই দুটি আলাদা দেশ হওয়া দরকার। হিন্দু মহাসভার নেতা সাভারকারও একই নীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু ভারতের সংবিধান প্রণেতারা জিন্নাহ বা সাভারকারের পথ নেননি। তাঁরা ভারতবাসীকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর সেই সংবিধানকে অস্বীকার করে মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে বাবাসাহেব আম্বেদকর পর্যন্ত সবার সেক্যুলার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্যা-এর নামে দ্বিজাতিতত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের সরকার। সংখ্যার জোরে নয়া নাগরিকত্ব আইন সিএএ পাশ করেছে ঠিকই, কিন্তু বিভাজনের রাজনীতির ঘৃণ্য পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে বিজেপি সরকার কতটা সফল হবে তা কিন্তু সময় বলবে। কারণ, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে রক্ষা করতে দেশবাসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আরও পড়ুন-সর্বসম্মতিক্রমে শপথ পাঠ নিব নির্বাচিত বিধায়কদের! বললেন মুখ্যমন্ত্রী, তীব্র আক্রমণ রাজ্যপালকে

আমরা সবাই জানি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার নেতারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিলেন এবং দেশ বিভাজনের মূলেও ছিলেন তাঁরাই। আজ তাঁদের উত্তরসূরিরা আমাদের দেশপ্রেম শেখাচ্ছেন! এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে! যারা বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তারা দেশের সাধারণ মানুষের কখনও কল্যাণ করতে পারে না।
প্রতারক ব্যবসায়ীরা দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়েছে। আর তাদেরকে ধরে আনতে বিজেপির সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কালো টাকা ফেরত আনতে পারেনি নরেন্দ্র মোদির সরকার। সাধারণ মানুষের একাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি এই প্রতিশ্রুতিও পূরণ করতে পারেননি।
ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ফলে প্রতিদিন কত সাধারণ মানুষ নিঃশব্দে শেষ হয়েছেন এবং হচ্ছেন। নোটবন্দি থেকে জিএসটির মতো অবিমৃষ্যকারী পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংসের শেষ কিনারায় দাঁড়িয়েছে। নরেন্দ্র মোদির কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই, কোন বক্তব্য নেই। ধর্মের বড়ি খাইয়ে গোটা দেশকে আজ ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে চলেছেন তিনি।
দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদি সরকার। বিগত ৫০ বছরের পরিসংখ্যানে বেকারত্ব সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ দিন দিন দিশেহারা বোধ করছেন। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে উপযুক্ত রোজগারের সুযোগ-সুবিধা থেকে অসংখ্য মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। এসবের প্রতিকারে নরেন্দ্র মোদির সরকার নিশ্চুপ।

আরও পড়ুন-গরিব বিরোধী-জনবিরোধী বাজেট: মুখ্যমন্ত্রী

দেশের নাগরিকদের হাজার সমস্যার সমাধান করতে না পেরে, অন্য দিকে দৃষ্টি ঘোরাতে, গোটা বিশ্বের মানুষের সামনে সংবিধান বিরোধী নতুন নাগরিকত্ব আইন, ধর্মের নামে হিংসা ছড়ানো ও কৃষি বিল হাজির করে নরেন্দ্র মোদি সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে তা বুঝতে হবে। বিভেদমূলক শক্তিকে রুখতেই হবে। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার চোখে দেখে মেরুকরণের রাজনৈতিক ফয়দা তোলা যাবে না ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সাধারণ মানুষ যোগ্য জবাব দিয়েছেন।
মানবিক চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক, সর্বোপরি আম-জনতার সচেতন অংশটি গেরুয়া শাসনের প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজ-বেত্তা, প্রাবন্ধিকগণ তাঁদের ভাবনাচিন্তাকে তুলে ধরেছেন লেখালেখির সুবাদে। পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম ছিল ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন।
ভারতের ঐতিহ্যের, পরম্পরার এবং সংহতির ঘোর বিরোধী গেরুয়া শাসনের অবসান ঘটাতে এগিয়ে এসেছেন সচেতন পশ্চিমবাংলার নাগরিকগণ। সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে, ঘাড়ে-গর্দানে এক-হয়ে-যাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের রাজাবাবুরা এতদিন যে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের উপস্থিতিকেই স্বীকার করত না, আজ তারাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে যাচ্ছেন প্রান্তিকের কাছে ভোটভিক্ষা চাইতে।
ইতিহাস বলে, বিজেপি’র মূল চালিকা শক্তি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। বরং ইংরেজদের পক্ষেই ছিল তারা। শুধু তাই নয়, দেশভাগের মূলে প্রকৃতপক্ষে ওই দুই সংগঠনের নেতাদের ভূমিকাই ছিল আসল। অথচ, সেই আরএসএস-জাত বিজেপি’র অধুনা নেতারা দেশভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাতে কী না করছেন! বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’র শাসনে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, তীব্র বেকারত্ব ও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ধাক্কায় দেশবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রায় কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারছেন না মোদি ও তাঁর দোসররা। কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলন চলছে আজ-ও কৃষি বিল বাতিল করতে এগিয়ে আসছে না বিজেপির জোট এনডিএ সরকার।

আরও পড়ুন-বাড়ল দুর্গাপুজোর অনুদান, কার্নিভালের দিনও জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

এই ব্যর্থতা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে ধর্মকে হাতিয়ার করছেন গেরুয়া নেতারা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবাসীকে বিভক্ত করে নিজেদের আসন নির্বিঘ্ন রাখতে মরিয়া তাঁরা। সেই পরিকল্পনার আরও একটি অংশ হল বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেওয়া। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের স্বপ্নে বিভোর তাঁরা। ওই স্বপ্ন সফল করতে তারা হাত বাড়িয়েছিল বাংলার দিকে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দখল নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। বাংলার মানুষের রায়ে বিজেপি বড় চোট পেয়েছে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত হয়েছে বিজেপির ৬টা জেতা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় এসেছে।
বাংলার যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর সবার প্রিয় দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রতি মানুষ আস্থা রেখেছেন এবং বাংলা থেকে বিজেপির পতন শুরু হয়েছে। আগামীতে বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করবে বিরোধী শক্তি। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করতে আরও বিনয়ী হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীদেরকে। জোটবদ্ধভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে জয় সুনিশ্চিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন ভরসা।

Latest article