নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে প্রকৃত অর্থেই গোটা দেশকে পথ দেখিয়ে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অষ্টাদশ লোকসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলা। মহিলা সাংসদ সংখ্যার শতাংশের বিচারে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি এবং তার বন্ধু দলগুলিকে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপির মোট সাংসদ-সংখ্যার মধ্যে যেখানে মাত্র ১৩ শতাংশ মহিলা, সেখানে সংসদে নির্বাচিত তৃণমূলের মহিলা প্রতিনিধি ৩৮ শতাংশ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস যে ১২ জন মহিলাকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ১১ জনই জনগণের রায়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। একটু গভীরে গেলেই স্পষ্ট হবে গেরুয়া শিবিরের আসল ছবিটা। বিজেপির ২ জোটসঙ্গী জেডিইউ এবং তেলুগু দেশমের মহিলা সাংসদ যথাক্রমে ১৭ এবং ৬ শতাংশ। অর্থাৎ শুধু গেরুয়া দল নয়, সংসদে মহিলা প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে অনেকটাই পিছনে পড়ে রয়েছে তাদের দুই বৃহৎ জোটসঙ্গীও।
পরিতাপের বিষয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংসদগুলিতে মোট আসনের ২৬ শতাংশই মহিলা সদস্যে পরিপূর্ণ থাকলেও অষ্টাদশ লোকসভায় তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৬ শতাংশ। এমনকী সপ্তদশ লোকসভার তুলনায়ও এবারে কমে গিয়েছে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা। সেবারে শতকরার অঙ্কটা ছিল ১৪.৪ শতাংশ। কিন্তু কেন হবে এমনটা? দেশের ভোটারদের প্রায় ৫০ শতাংশই তো মহিলা। তবুও কেন প্রায় ১৫০ আসনে একজনও মহিলা প্রার্থী নেই? দুঃখের কথা, সংসদের নিম্নকক্ষে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যার বিচারে সারা বিশ্বে ১৮৫টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৪৫। এটা স্পষ্ট, মহিলা প্রার্থীর প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে বিশ্বমানের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করতে সক্ষম একমাত্র বাংলাই। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন বাংলা থেকেই।
আরও পড়ুন- বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
মজার কথা, এবারে নির্বাচনী প্রচার শুরু করার জন্য বাংলার যে ৩টি কেন্দ্র বেছে নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি, সেই আরামবাগ, কৃষ্ণনগর এবং বারাসত আসনে সাংসদ ছিলেন তৃণমূলেরই ৩ মহিলা সাংসদ। এবং মোদির ঢাকঢোল পিটিয়ে এত প্রচারকাণ্ডের পরেও সেই ৩টি আসনেই মানুষ দু’হাত ভরে ভোট দিয়েছেন এবং আবার সংসদে পাঠিয়েছেন তৃণমূলের ৩ মহিলা প্রার্থীকেই। আরামবাগে জিতেছেন মিতালি বাগ। বারাসত এবং কৃষ্ণনগরে আবার নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং মহুয়া মৈত্র। নিজের দলের দুই মহিলা প্রার্থীর সঙ্গে টেলিফোনে ব্যক্তিগত বাক্যালাপ এবং তা নিপুণভাবে মিডিয়ায় প্রচার করে দেওয়া— মোদির কোনও কৌশলেই কোনও লাভ হয়নি।