মণীশ কীর্তনীয়া : বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে বিজেপি বিধায়করা অংশগ্রহণ করছেন না। কিন্ত বিধানসভার হাজিরা খাতায় সই করছেন। কারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ না করলেও একজন বিধায়ক বিধানসভায় এসে তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট হাজিরা খাতায় সই করলে ঐ দিনের জন্য তিনি তাঁর বিধায়ক ভাতা পাবেন। বিজেপির বেশ কিছু বিধায়ক ঠিক এই কাজটিই করছেন। অধিবেশন যাক চুলোয় বিধায়ক ভাতায় যেন হাত না পড়ে— এই হল এই বিধায়কদের মনোভাব। এই ঘটনা নিয়ে এদিন দিনভর বিধানসভায় কানাঘুষো চলেছে। সোমবার শুধুমাত্র শোক প্রস্তাব পাঠের সময় বিজেপির বিধায়করা অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। যদিও বিরোধী দলনেতা আসেননি। মঙ্গলবার অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী সমাপ্তি উপলক্ষে প্রস্তাব এনে আলোচনা করা হয়। তাতেও অংশ নেননি বিজেপির কোনও বিধায়ক। অথচ সই জারি থেকেছে।
আরও পড়ুন : জয়ের অভিনন্দন মমতা-অভিষেকের
১. অমরনাথ সখা, ২. অরূপ ধাড়া, ৩. চন্দনা বাউড়ি, ৪. দেবপ্রসাদ বাগ, ৫. দিবাকর ঘরামি, ৬. মনোজকুমার ওঁরাও, ৭. নির্মল ধাড়া, ৮. সুদীপ মুখার্জি, ৯. তাপসী মণ্ডল— এঁরা ছাড়াও বিজেপির আরও কিছু বিধায়ক অধিবেশনে না এসেও সই করে গিয়েছেন। বিধানসভায় বিধায়কদের সই করার জন্য ৬টি হাজিরা খাতা আছে। এই খাতাগুলিতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিজেপির বিধায়করা সই করেছেন। একজন বিধায়ক তাঁর মাসের প্রাপ্য মাইনে ছাড়াও অধিবেশনে অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন কমিটির মিটিংয়ে যোগদানের জন্য ভাতা পান। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কটা নেহাত কম নয়। বিধানসভার মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারে সৌজন্যে পেট্রোল-ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম— সবই বেড়েছে। তা বিজেপি বিধায়করাই বা কী করবেন! বেচারারা না পারছেন তাঁদের দলের বিরুদ্ধে কিছু বলতে না পারছেন পকেট সামলাতে। বিরোধী দলনেতা যতই বড় বড় ভাষণ দিন না কেন বিজেপি সরকারের আসল ছবিটা ওদের বিধায়করাই বেআব্রু করে দিলেন তা-ও আবার বিধানসভার ভিতরে। এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই। এটা অনৈতিক। বিরোধী দলনেতা মুখে নৈতিকতার বুলি না আউড়ে নিজের দলের বিধায়কদের নৈতিকতার পাঠ দিন। প্রশ্ন হল বিরোধী দলনেতা বিধানসভার অধিবেশনে অংশ বা নিয়ে বাইরে থেকে সরকারকে গালমন্দ করছেন সঙ্গীসাথী জুটিয়ে। তিনি বা তাঁর দল বিজেপির নেতৃত্ব কি জানেন তাঁদের বিধায়কদের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড? শীতকালীন অধিবেশন কিছুদিন চলবে। এরপর বিজেপি বিধায়করা কী করবেন? অধিবেশনে অংশ না নিয়েও চুপিসারে বিধানসভার হাজিরা খাতায় সই করে যাবেন। আর তাঁদের তৎকাল বিজেপি বিরোধী দলনেতা নীতির বুলি কপচাবেন। সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্য বিজেপির হরেক কিসিমের সার্কাসের মধ্যে এ-ও এক নতুন সার্কাস।