নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি করতে তৎপর নির্বাচন কমিশন। ২০০৩ সালের পর প্রথমবার, বিহার থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া (Special Intensive Revision বা SIR)। গোটা দেশেই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। তালিকা থেকে অবৈধ নাম বাদ দেওয়া এবং প্রকৃত ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যেই এই হাউজ-টু-হাউজ সমীক্ষা।
কমিশনের এই পদক্ষেপকে বড় ষড়যন্ত্র বলে দিঘা থেকে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, বিহার বাহানা মাত্র, বাংলাকে টার্গেট করা হচ্ছে। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক ও তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতেই এই চক্রান্ত করা হচ্ছে।
কমিশন এর তরফে জানানো হয়েছে ইনটেনসেনসিভ রিভিশনের মূল আধার নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫। ভোটার তালিকায় নাম রাখার যোগ্যতা প্রমাণ করতে এবার জন্মস্থান সংক্রান্ত দলিলও বাধ্যতামূলক। নতুন নিয়ম অনুযায়ী—
১২ ডিসেম্বর ২০০৪-এর পরে জন্মানো ব্যক্তিদের নিজের এবং মা ও বাবা—উভয়ের জন্মস্থান ও জন্মতারিখের দলিল জমা দিতে হবে।
১ জুলাই, ১৯৮৭ সালের আগে জন্মেছেন যাঁরা, তাঁদের নিজের জন্মতারিখ ও/বা জন্মস্থান-এর প্রমাণ দিতে হবে।
১ জুলাই ১৯৮৭ থেকে ১২ ডিসেম্বর ২০০৪-এর মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের নিজের পাশাপাশি মা বা বাবা, যে কোনও এক জনের জন্মতারিখ ও জন্মস্থান সংক্রান্ত নথি জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকে ‘প্রমাণিক নথি’ হিসেবে ধরা হবে। সেই তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁদের নাগরিকত্বের স্বপক্ষে সরকারি যেকোন নথি জমা দিয়ে নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে হবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন অভিযোগ করেন, ”রিভিশনের নামে আরও একটা এনআরসি করতে চাইছে বিজেপি সরকার। এর নেপথ্যে রয়েছে আরএসএস। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা না বলে নির্বাচন কমিশন কখনই এটা করতে পারে না। আমাদের গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক দল বা নির্বাচিত সরকার কখনই ক্রীতদাস নয়।’’
যখন বিজেপি-সহ একাধিক দলের মধ্যে ‘অবৈধ ভোটার’ প্রকাশ্যে আসছে সেই সময় কমিশন নতুন করে এই বিশেষ সংশোধনের উদ্যোগ নিল।এমনকি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। কমিশনের চিঠি নিয়ে আপত্তি তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন আমি আমার দলের বুথ স্তরের এজেন্টদের তথ্য দেব? আমি কেন তাঁর গোপনীয়তা জানাব? এটা মারাত্মক। ১৯৮৭ সালের আগে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক নয়! ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়েছে। কেন ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যেকার সময়কে নিশানা করা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।’’
মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘‘তরুণপ্রজন্ম যাতে ভোট দিতে না পারে, সেই কারণেই কি এই নিয়ম? গরিবেরা কী ভাবে বাবা-মায়ের শংসাপত্র পাবেন? এটা কি এনআরসি? এ ভাবেই এনআরসি চালু করা চেষ্টা হচ্ছে কি? কী উদ্দেশ্য তাদের, তা পরিষ্কার করে জানাক। এটা কি হচ্ছে দেশে। আমি কমিশনকে অনুরোধ করব নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে ভোটার তালিকা সংশোধক করুক, যাতে কোনও ভোটারের নাম বাদ না পড়ে। আমাদের তাতে আপত্তি নেই। রাজ্যের বাইরে লোক দিয়ে ভোটার তালিকা ভর্তি করার চেষ্টা চলছে! কমিশন কখনও বলতেই পারে না, আবার নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি করবে। এতে অনেক ঘাপলা আছে, দুর্নীতি রয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম তো ১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসে। নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্দেশিকায় সাধারণ মানুষের বাবা-মায়ের জন্ম-জায়গা ও জন্ম-সার্টিফিকেট দাখিল করতে বলা হয়েছে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা কী হচ্ছে? গোটা বিষয়টিতে বিরাট ঘাপলা রয়েছে। আরও ঘাপলা বেরোবে। এরা বাংলাকে টার্গেট করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের টার্গেট করেছে। আসলে ভোটার তালিকা থেকে সব জেনুইন ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে বাইরে থেকে নাম ঢোকাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে চিঠি দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ লেভেল কর্মীদের নাম ও ফোন নাম্বার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন? এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন নেত্রী। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলি কোনও বন্ডেড লেবার নয়। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারপর এতগুলো বছর কেটে গেছে। এখন এই বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশিকা জারি করার মানে কি? তিনি সরাসরি কৈফিয়ত চেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, আমরা ব্যাটিংটা শুরু করলাম। বাকি রাজ্যগুলো বোলিং করুক এবার। তবে বিজেপির এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত কিছুতেই আমরা বাংলায় হতে দেব না। নির্বাচন কমিশন দেখে দেখে এমন অবজারভার দেয় তারা বিজেপিকে সাপোর্ট করে। এটাই এমারজেন্সি উইপেন বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য। এটা ইলেকশন কমিশনের কাজ নয়, ওদের নিরপেক্ষ থাকা উচিত।