প্রতিবেদন : জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতির মাশুল দিতে হয়েছে কোন্নগরের তরতাজা যুবককে। আরজি করে বিনা চিকিৎসায় যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন বছর বাইশের বিক্রম ভট্টাচার্য (Bikram Bhattacharya)। আর ৩ ঘণ্টা ধরে চোখের সামনে নিজের ছেলের এই যমে-মানুষে লড়াই দেখে ভেঙে পড়েছেন মা কবিতা ভট্টাচার্য। সন্তানহারা সেই মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে একটাই দাবি, আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই। শনিবার সকাল থেকেই হাসপাতালের মর্গ থেকে দেহ নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। যে ছেলেকে সুস্থ করার আশায় আরজি করে নিয়ে এসেছিলেন, চোখের জলে সেই ছেলের প্রাণহীন দেহটা নিতে কোন্নগর থেকে আসেন মা। সঙ্গে আসে পরিবারও। শিয়ালদহ আদালতের সম্মতিক্রমে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শুরু হয় পোস্টমর্টেম। বিকেল ৫টা নাগাদ দেহ নিয়ে পরিবারের লোকজনরওনা দেন কোন্নগরের উদ্দেশে।
আরও পড়ুন: ফের মণিপুরে হিংসা, হত ৫
শুক্রবার ভয়াবহ লরি দুর্ঘটনায় জখম বিক্রমকে প্রথমে শ্রীরামপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেখান থেকে আরজি করে রেফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানেই ঘটে বিপত্তি। ৩ ঘণ্টা ধরে আরজি করের জরুরি বিভাগের বাইরে পড়ে থাকলেও তাঁর চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেননি কোনও চিকিৎসক। মৃত যুবকের মা কাঁপা-কাঁপা গলায় জানিয়েছেন, ৩ ঘণ্টা ধরে অনেক চেষ্টা করেছি। চিকিৎসকদের হাতে-পায়ে ধরেছি। যদি ছেলেটাকে বাঁচিয়ে দেয়… কিন্তু তাতেও ছেলের পালসটা চেক করতে একজন ডাক্তারও আসেননি। শুধু এই বিল্ডিং থেকে ওই বিল্ডিং পাঠানো হয়েছে। শেষে একজন সিনিয়র চিকিৎসক ছেলের পালস দেখে বললেন, সব শেষ। এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্বভাবতই আরজি করের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তুলেছেন বিক্রমের মা। কাঁপা-কাঁপা স্বরে সেই অসহায় মায়ের প্রশ্ন, রোগী না দেখে ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন আর রোগীরা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন! এটা কেমন বিচার? আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে রোগী পরিষেবা গোল্লায় দিয়ে টানা ২৯ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু এই কর্মবিরতির জেরে বিনা চিকিৎসায় যেভাবে একটা তরতাজা প্রাণ চোখের নিমেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল, এর বিচার কে দেবে?