সৌমেন্দু দে, বোলপুর : বিশ্বভারতীতে চলছে উপাচার্যের স্বৈরাচারী শাসন। চতুর্থ দিনে পড়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে মন্তব্য করতে এই অভিযোগ রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী ও বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহার। মঙ্গলবার তিনি বলেন, উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী অকারণে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সঙ্ঘাতে যাচ্ছেন। ওঁর উচিত কথা বলে সমস্যার সমাধান করা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার পড়ুয়াদের আছে। তা বলে প্রতিবাদী হলেই ছাত্রছাত্রীদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত নিন্দনীয়। আসলে উপাচার্য বিশ্বভারতীকে বিজেপির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত করে সমগ্র বীরভূমকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছেন। যা বাস্তবে কোনওদিনই সম্ভব হবে না। মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন উনি।
প্রসঙ্গত, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের জেরে নিজের বাসভবনে চারদিন ধরে ঘেরাও উপাচার্য যথেষ্ট বেকায়দায় পড়ে নিজেকে মুক্ত করতে মরিয়া চেষ্টায় ঘনিষ্ঠ কিছু অধ্যাপকের সঙ্গে ২০০/২৫০ কর্মীকে সোমবার রাতে আচমকা ধরনা মঞ্চে পাঠান বলে জানা গিয়েছে। যদিও তাঁরা সমাধান করতে গিয়েছিলেন বলে জানালেও সমাধানসূত্রটি কী, তা স্পষ্ট করে বলতে চাননি অধ্যাপকবৃন্দ। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের দাবি, করোনা বিধি লঙ্ঘন করে এত মানুষ একসঙ্গে প্রতিবাদ মঞ্চের কাছাকাছি চলে আসায় আতঙ্কিত হয়ে গো ব্যাক স্লোগান দিলে ফিরে যান তাঁরা। উপাচার্য গায়ের জোরে ছাত্রছাত্রীদের হটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যে কোনও কারণেই হোক, তাঁরা পেরে ওঠেননি। এর পরই পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্য আবেদন করেছেন বলে জানান জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় আমরা ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি।
আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে মূলস্রোতে কেএলওরা
আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের পাল্টা অভিযোগ হিসাবে শান্তিনিকেতন থানায় ছাত্রী শ্রেয়া চক্রবর্তী তাঁর লিখিত অভিযোগে বলেছেন, উপাচার্য পুরুষ নিরাপত্তাকর্মীদের নির্দেশ দেন, মহিলা নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না, তারাই সামলাক। এরপর পুরুষ নিরাপত্তাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন, তাতেই বেশ কয়েকজন ছাত্রী বেসামাল হয়ে নীচে পড়ে গিয়ে আঘাত পান। জানা গিয়েছে, সকালে জিয়ার বাসভবনের সামনে ফেস্টুন লাগাতে গেলে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারের নির্দেশে বেশ কিছু পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী ছাত্রীদের উদ্দেশে অশালীন কথা বলেন ও শ্লীলতাহানি করেন।
বহিষ্কৃত ছাত্র সোমনাথ সৌ বলেছেন, বাড়িতে বসে উপাচার্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজেকে ঘেরাও মুক্ত করার। কিন্তু আমাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত যতক্ষণ না তিনি ফিরিয়ে নিচ্ছেন, ততক্ষণ ঘেরাও কর্মসূচি চলবে। কেন্দ্রীয় সরকারের করোনা বিধি ভেঙে গতকাল ধরনা মঞ্চের কাছে হাজির হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তাঁর অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীদের প্রাণহানি ঘটলে তার দায় কি উপাচার্য নিতেন! মঙ্গলবার শহরে এই সব ঘটনার প্রতিবাদে বেরনো মিছিলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে, আরএসএস-ঘনিষ্ঠ উপাচার্য পদ ছাড়ুন। আশ্রমিক কুন্তল রুদ্র বলেন, রবীন্দ্র-আদর্শ মেনে রাজনৈতিক ভাবনার ঊর্ধ্বে উঠে যদি উপাচার্য বিশ্বভারতী পরিচালনা করতেন, তাহলে আজ অন্ধকারে ডুবে যাওয়া এই বিশ্বভারতী বিশ্বকে দেখতে হত না।