প্রতিবেদন: ডবল ইঞ্জিন সরকারের উদাসীনতা এবং অপদার্থতায় অসমে বাল্যবিবাহ যে কোন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে তার প্রমাণ মিলল মাত্র একরাতেই। জনরোষের চাপে পড়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে বাধ্য হল রাজ্যের গেরুয়া পুলিশ। এবং মাত্র একরাতেই গ্রেফতার করল ৪১৬ জনকে। শনিবার সারারাত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ। সবমিলিয়ে ৩৩৫টি মামলা দায়ের করে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যে রাজ্যে বাল্যবিবাহের ঘটনায় একরাতেই ধরা পড়ে ৪১৬ জন, সেইরাজ্যে নিয়মিত অভিযান চালালে ধরা পড়বে কতজন? সব জেনেবুঝেও তা হলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালায় না কেন? তা হলে ধরে নিতে হবে, যে বাল্যবিবাহের নেপথ্যে নীরব সমর্থন রয়েছে শাসক বিজেপির? নাকি ভোটের লোভে এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে মুখ খুলতেই ভয় পান দলের নেতারা?
আরও পড়ুন-ঢাকায় ছিনতাইবাজদের দাপট, সাড়ে ৪ মাসে খুন ৭
অথচ, গেরুয়া মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ২০২৩ সাল থেকে প্রচার ও ধরপাকড় চালাচ্ছে তাঁর পুলিশ। তা সত্ত্বেও বাগে আনা যায়নি বাল্যবিবাহ। কেন? সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে যে নজরদারি জরুরি, তার বিন্দুমাত্রও করে না হিমন্তের পুলিশ। এই সামাজিক রোগ নিরাময়ের জন্য জনমত গড়ে তোলাও জরুরি। কিন্তু সেব্যাপারেও তেমন কোনও আগ্রহই দেখায় না গেরুয়া সরকার। যা হয়, তা নিছকই দায়সারা। ফলে বাল্যবিবাহ কমার বদলে তা বেড়েই চলেছে দিনের পর দিন। শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করতে মাঝেমধ্যে চলছে আইওয়াশ।
গ্রামীণ অসমে বাল্যবিবাহের মতো ঘটনার সঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে এক সময় স্বীকার করে নিয়েছিল বিজেপি সরকার। ২০২৬ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। এরপরেও শীতে বিয়ের মরশুমের শুরুতে ও শেষে রেকর্ড সংখ্যক বাল্যবিবাহের অভিযোগ জমা পড়ছে প্রশাসনের কাছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪,৫১৫ টি অভিযোগ জমা পড়েছিল বাল্য বিবাহ নিয়ে। দ্বিতীয় দফায় অক্টোবরে অভিযোগ জমা পড়ে ৭১০টি। এই তথ্যই প্রমাণ করছে বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা এবং অপদার্থতা।
আরও পড়ুন-নিজেদের যুদ্ধবিমানকেই গুলি করে নামিয়ে দিল মার্কিন সেনা
সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা যায় স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দাদেরও বাল্য বিবাহে ইন্ধনের অভিযোগে গ্রেফতার করে হিমন্ত সরকারের পুলিশ। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর রাত থেকে ২২ ডিসেম্বর বিকাল পর্যন্ত ৩৩৫টি অভিযোগের ভিত্তিতে ৪১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। একাংশ সমাজকর্মীদের দাবি, অনেক গ্রামীণ ও আদিবাসী এলাকায় বাল্যবিবাহকে বেআইনি মনে করা হয় না। সেই সব জায়গায় এটি প্রথা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ফলে গ্রামের মানুষকে গ্রেফতারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। অন্যদিকে গ্রামের মানুষদের গ্রেফতার না করে তাঁদের মধ্যে এই প্রথা বন্ধে কোনও প্রচারের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।