ঘোড়া কেনাবেচায় গেরুয়া শিবির, সতর্কতা রাজ্যগুলিতে

Must read

মণীশ কীর্তনীয়া, নয়াদিল্লি: গুজরাতে ব্যর্থ কংগ্রেস। দিকে দিকে ব্যর্থ বিজেপি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার নিজের রাজ্যে হেরে এবার ঘোড়া কেনাবেচায় (Horse trading-BJP) নেমে পড়েছে বিজেপি। ফলে দিকে দিকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে রাজনৈতিক দলগুলি। গুজরাট-হিমাচলের সঙ্গে একধিক রাজ্যে বিধানসভার উপনির্বাচন হয়েছে। সেখানেও জোর ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। একলহমায় এই হল দুই রাজ্যের হাই-ভোল্টেজ নির্বাচনী ম্যাচের নির্যাস। যা মোটেই স্বস্তিতে রাখবে না বিজেপিকে। একইরকম ভাবে গুজরাটে একা লড়েও কংগ্রেস কিছু করতে পারেনি৷ দীর্ঘ ১৫ বছর পর দিল্লি পুরনিগমের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে হারের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই এই ফল বিজেপিকে— বলা ভাল বিশেষ ভাবে মোদি-শাহ জুটিকে প্রবল অস্বস্তিতে রাখবে। অতীতে যেভাবে অপরাজেয় অশ্বমেধের ঘোড়া তাঁরা ছোটাতে সক্ষম হয়েছিলেন আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তা কেবলই সুখস্মৃতি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে ফাইনাল ধরা হলে ২০২২-এর গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের নির্বাচন নিশ্চিতভাবে সেমিফাইনাল। আর গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল ম্যাচেই আটকে গেল বিজেপির বিজয়রথ। ২০২১-এ বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপিকে গোহারা হারিয়ে যার শুরুয়াত করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী দিনে বিজেপি-বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে এগোলে তাতে বিজেপির বিপদ বাড়বে বই কমবে না।

আরও পড়ুন-নতুন শিল্পকে ঘিরে মালদহে কর্মসংস্থান

ফলাফল বেরোনোর পর তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, জোট মোদির চিন্তার বিষয়। তবে বিরোধী জোট নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই৷ গুজরাটে ১৮২ আসনের বিধানসভায় জয় প্রত্যাশিতই ছিল। না জিতলেই বরং সেটা অঘটন হত। সেক্ষেত্রে হিমাচলে মোদি-শাহ যে ‘রিওয়াজ’ বদলানোর ডাক দিয়েছিলেন তাতে কর্ণপাত করেনি পাহাড় ও বরফের রাজ্যের আমজনতা। গুজরাটে কোনওমতে ৪টে আসন পেলেও হিমাচলে আপ কোনও দাগ কাটতে পারেনি। শুক্রবার সকাল ৮টায় হিমাচলের ভোট গণনা শুরু হতে প্রথম দিকে কিছুটা এগোলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পিছিয়ে পড়ে বিজেপি। ৬৮ আসনের হিমাচলে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস ৪০ ও বিজেপি ২৫টি আসন পেয়েছে। এখানে ম্যাজিক ফিগার ৩৫। হিমাচলের জয়ের জন্য সেখানকার মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে ঘোড়া কেনাবেচা (Horse trading-BJP) হওয়ার আশঙ্কায় কংগ্রেস তাদের জয়ী বিধায়কদের রাজস্থানের একটি রিসর্টে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এদিন উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি প্রধান মুলায়ম সিং যাদবের প্রয়াণে তাঁর কেন্দ্র মৈইনপুরীর উপনির্বাচনে তাঁর পুত্রবধূ অর্থাৎ অখিলেশ যাদবের স্ত্রী ডিম্পল যাদব বিজেপি প্রার্থীর থেকে ২ লক্ষ ৮৮ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে জয় লাভ করেছে। এভাবে জেডিউ-সহ একাধিক বিজেপি-বিরোধী দল উপনির্বাচনে বিজেপিকে ধরাশায়ী করে দিয়েছে। যা নিশ্চিতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তবে প্রত্যাশিতভাবে গুজরাট জিতে যাওয়ায় এখন এই জয়কে তুলে ধরে মার্কেটিংয়ে নেমে পড়েছে বিজেপি। কিন্তু জে পি নাড্ডা এবার কী করবেন? ইতিমধ্যেই অন্য রাজনৈতিক দল তো বটেই বিজেপির অন্দরেও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে যে, সর্বভারতীয় সভাপতি নিজের রাজ্যে দলকে জেতাতে পারে না, যেখানে বিজেপি গো হারা হেরেছে, তিনি কোন মুখে এবার অন্য রাজ্যের বিজেপি নেতাদের সংগঠন, নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে জ্ঞান দেবেন? দিলেও তা বাকিরা শুনবেন কেন?

এই নির্বাচনী ফলাফল ও জাতীয়স্তরে আগামী দিনের বিরোধী দলগুলির সমীকরণ নিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, যে রাজ্যে কংগ্রেস ট্র্যাডিশনালি আছে সেখানে অন্য দল বিরক্ত করছে না তো! সেখানে যদি কংগ্রেস লড়তেই না পারে, তাহলে কী হবে? একক ভাবে কংগ্রেস বা একার নয়। জোট নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই৷ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা ফরমুলা দিয়েছিলেন। হাতে অবশ্য এখনও সময় আছে। নো ভোট টু বিজেপি— এটাই স্লোগান হওয়া উচিত। তাঁর সংযোজন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন খুলে কথা বলছেন। অবিজেপি দলগুলিকে নিয়ে চলছেন। আশা করব ভুল, ত্রুটি, শূন্যস্থান মিটবে। কিছু কিছু রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস লড়েনি৷ আমরা চাই কংগ্রেস-আপ বিজেপিকে হারিয়ে দিক। তবে দেশের ক্ষেত্রে বড় আঙ্গিকে লড়তে হবে। সেক্ষেত্রে নেতৃত্বের উচ্চতা ভাবতে হবে। নিশ্চিতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই বিকল্প মুখ হিসাবে এগিয়ে।

Latest article