গুজরাত ভোটে এবার দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে জঞ্জাল পার্টিকে

দলের রাশ দলবদলুদের হাতে। প্রতিশ্রুতির হাঁড়ি ভাঙছে ভোটের হাটে। ভুয়ো কথার বেলুনে হাওয়া আর নেই। একটি বিশেষ দলের থেকে দেশকে মুক্ত করার কথা বলে গেরুয়া পার্টি নিজেরাই এখন ওই দলের বর্জ্য গ্রহণে ব্যস্ত। তাদের এই বিচিত্র হালের ছবি তুলে ধরলেন প্রবীর ঘোষাল

Must read

ইজ্জত কা সওয়াল! সত্যি করেই নরেন্দ্র মোদির প্রেস্টিজ ফাইট। গুজরাত বিধানসভার নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই ঘুম ছুটেছে প্রধানমন্ত্রীর। শুধু মোদি কেন, তাঁর মতোই আরও একজন বিনিদ্র রজনী যাপন করেছেন। তিনি হলেন অমিত শাহ। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মোদি-শাহ দু’জনেরই ঘরের রাজ্য গুজরাত। সেখানে ২৭ বছর একটানা রাজ করছে গেরুয়া-বাহিনী।

আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে দারোগার উপস্থিতিতেই থানা থেকে চুরি!

৭ বছর দিল্লির মসনদের মালিকও মোদি। তাই নিজের রাজ্যে ক্ষমতার প্রত্যাবর্তন করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না তিনি। মোদি-শাহের নেতৃত্বে বিজেপির প্রায় ৫০০ নেতা-কর্মী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রচারে। ভোটের মুখে দান-খয়রাতি-প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকী ভোটের দিন ঘোষণার ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনকে নজিরবিহীনভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মোদি একের পর এক প্রকল্পের ফিতে কাটার পর কমিশন গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে।
কিন্তু এত সব করেও, স্বস্তি পাচ্ছে না পদ্মশিবির। গুজরাতে তাদের তাড়া করছে দলেরই বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। ঠিক যেমনটা হয়েছে হিমাচল প্রদেশে। এই লেখা যখন ছাপা হবে তখন হিমাচলের ভােট শেষ। বিজেপি-শাসিত সংশ্লিষ্ট রাজ্যেও মোদি-শাহের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ বিজেপিরা। ৬৮ আসনের হিমাচল প্রদেশে প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ হতেই দলের মধ্যে ধিকিধিকি জ্বলা আগুন লেলিহান শিখার আকার ধারণ করেছে। পদ্মের প্রতীক না পাওয়া কৃপাল পারমারকে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত ফোন করে অনুরোধ জানাতে হয়, ‘আপনি ক্ষান্তি দিন। নির্দলরূপে ভোটের আসরে অবতীর্ণ হবেন না।’

আরও পড়ুন-১০০ দিনের কাজ হারানো শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর, ৪২ দফতরে কাজ পেলেন ৩০ লক্ষ মানুষ

অবশ্য পারমার সে অনুরোধ কানে তোলেননি। উল্টে মোদিকে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘দেরি হয়ে গিয়েছে, আর কিছু করার নেই। অর্থাৎ নির্দল প্রার্থী হিসাবে তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। কে এই পারমার? বিজেপির একজন প্রবীণ নেতাই শুধুমাত্র নন, তিনি দলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সদস্য। তবে হিমাচলের বাসিন্দা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা তাঁর স্কুলের সহপাঠী হলেও, দলের রাজনীতিতে পারমারের সঙ্গে তাঁর বরাবরের সাপে-নেউলের সম্পর্ক। ওই রাজ্যে ১২টি আসনে বর্তমান দলীয় বিধায়কদের টিকিট দেওয়া হয়নি। পোড়খাওয়া পারমার-সহ বিজেপির বিক্ষুব্ধদের প্রধান অভিযোগ, কংগ্রেস থেকে সদ্য আসা লোকজনকে বিজেপির টিকিট দেদার বিলি করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দলের রাশটাই এখন দলবদলুদের হাতে চলে গিয়েছে!
দলবদলুদের দৌরাত্ম্য গুজরাতে আরও ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে বিজেপির অন্দরে। প্রার্থী-তালিকা ঘোষণার মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে কংগ্রেসত্যাগী বিধায়ক সেখানে পদ্মের টিকিট পেয়েছেন। প্রথম দফায় ১৮২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি কেন্দ্রের প্রার্থী-তালিকা বিজেপি ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে ৬৯ জন দলীয় বিধায়কের জন্য শিকে ছিঁড়েছে। কিন্তু বিধানসভার স্পিকার-সহ পাঁচ মন্ত্রী এবং ১৭ জন বিধায়কের প্রার্থিপদ মেলেনি। হার্দিক প্যাটেল-সহ কংগ্রেস থেকে আসা নেতা-বিধায়কদের ঢালাও টিকিট দিয়েছে বিজেপি। মোদি-শাহের রাজ্যে দলবদলুদের এভাবে দলের গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে পদ্মশিবিরে নানা চর্চা শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন-দিলীপ ঘোষের গ্রেফতার চাই

এতদিন যেমন কেন্দ্রে তেমনি রাজ্যেও মানুষকে বিজেপি উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছে। ভোটের সময় সেই ফানুস ফুটো হয়ে গিয়েছে। মরিয়া মোদি-শাহ জুটি পরিত্রাণ পেতে গুজরাটবাসীর চোখ অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছেন। তীব্র প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া। এমনিতে পাঁচ বছর আগে কানঘেঁষে রাজ্যপাটে ফিরেছিল বিজেপি। ১৮২টি আসনের মধ্যে ৯৯ আসন তাদের দখলে গিয়েছিল। এই পাঁচ বছরে তারা যে জনপ্রিয়তা আরও খুইয়েছে সেটা প্রার্থী-তালিকার পরিবর্তনেই স্পষ্ট। নীতি-আদর্শের বড়াই করা বিজেপি এখন মোদির রাজ্যেই দলবদলুদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে।
এতেও যেন ভরসা পাচ্ছে না গেরুয়া শিবির। মহাত্মা গান্ধীর রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ। ভোট কিনতে মদের ফোয়ারা ছুটছে গুজরাতে। চোরাপথে সেখানে রেকর্ড পরিমাণে মদ-মাদক বিলি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন মাত্র ৯ দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৮০ কোটি টাকার এইসব নিষিদ্ধ নেশার জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে। গণতন্ত্রের পূজারিদের একসময়ে দুর্ভেদ্য দুর্গে আজ কী চরম দুরবস্থা!

Latest article