কেন্দ্রর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাননীয় অমিত শাহ ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় (BJP Bengal) কর্মসমিতির বৈঠকে আবার বাংলাকে টার্গেট করলেন। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে গণতন্ত্রে এদের ভরসা বা বিশ্বাস নেই। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়া বা নানাভাবে হেনস্থা করাই হল বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য। ঠিক যে কায়দায় মহারাষ্ট্রে সরকারকে ফেলে দেওয়া হল ঠিক সেই কায়দায় তারা চেষ্টা করছে একে একে অ-বিজেপি-শাসিত সরকারকে ফেলে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। না-হলে— পাঠকেরা ভাবুন, অসমে যখন ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন ও সর্বস্ব হারিয়েছে, ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে, ঠিক সেই সময় তাদের সাহায্য না করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার পাঁচতারা হোটেলে মহারষ্ট্রের সরকার ফেলার জন্য বিধায়কদের আতিথেয়তা করছেন। মানুষের রায়ের কোনও মূল্য নেই। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার আরও একটা উদাহরণ হল সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদ এবং সাংবাদিক মহম্মদ জুরেবকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টা হচ্ছে ক্রমাগত। একটা সুস্থ সমাজে মানুষকে ভয়ের মধ্যে বাস করতে হবে? আসলে বিজেপির এটা একটা পুরানো পন্থা। নিজেদের সরকারের অপদার্থতাকে আড়াল করতে মানুষের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেবার একটা প্রচেষ্টা।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্যের জেরে দিলীপকে তোপ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বাংলাকে টার্গেট করে বিজেপি (BJP Bengal) তাঁদের ঝুলি থেকে বিড়াল বার করেই ফেললেন। তাঁদের অসাধু উদ্দেশ্যটা আবার সবার সামনে প্রকাশ পেল। কিন্তু তাঁরা বোধহয় জানেন না মহারাষ্ট্র বা অন্য কোনও রাজ্যের সঙ্গে বাংলার অনেক তফাত। বাংলার মানুষ এত বোকা নন। তাঁরা অত্যন্ত বিচক্ষণ ও সুবিবেচক, আর বাংলায় আছেন এমন একজন নেত্রী যাঁর নাম ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’। যিনি শুধু বাংলার বাঘিনিই নন, তিনি বাংলা তথা ভারতবর্ষের ‘মা’। তিনি জানেন কীভাবে মানুষকে রক্ষা করতে হয়। যিনি কখনওই নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করেননি। যাঁর কাছে মানুষের স্বার্থের থেকে বড় আর কোনও কিছুই নেই এবং যাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যই হল মানুষের জন্য সেবা প্রদান করা। রাজদীপ সারদেশাইয়ের মতন একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিকও স্বীকার করেছেন যে, দেশের কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতন ফাইটিং স্পিরিট নেই। সত্যি কথা বলতে কি পৃথিবীতে এরকম আরেকজন অকুতোভয়, অগ্নিকন্যা, ফ্রি স্পিরিটেড নেত্রী পাওয়া যাবে না।
তাই বিজেপি যতই হুঙ্কার দিক তারা বাংলায় কোনও দিন আসতে পারবে না। ঠিক যেভাবে ২০২১-এর প্রাক্কালে বিজেপি নিজেদেরকে অপ্রতিরোধ্যশক্তি হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল, তাদের সেই চেষ্টা ও স্বপ্ন যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছিলেন ঠিক সেভাবেই আবারও তিনি প্রমাণ করবেন যে, তিনিই একমাত্র সমস্ত দিক দিয়ে বিজেপিকে প্রতিরোধ করতে পারেন। এ-কথা মাথায় রাখতে হবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একটা সময়ে কমিউনিস্টদের পরাস্ত করেছিলেন যখন তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের অপরাজিত মনে করেছিলেন এবং ঠিক একইভাবে ২০২৪-এও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে পরাস্ত করবেন। আমার দৃঢ় ধারণা পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন শুধুমাত্র একটা সরকার গঠনের জন্য হবে না। মানুষ ভোট দেবে একটা স্বেচ্ছাচারী সরকারকে উৎখাত করে একটা উন্নয়নশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার লক্ষ্যে। ২০২৪-এ সারা ভারতবর্ষ বুঝতে পারবে এক অনমনীয়, লড়াকু, একরোখা ও আপসহীন নারীশক্তির উত্থান যা শেষ করবে এই বিভেদকামী সরকারকে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দেশের মানুষের দ্বারা এক উদারপন্থী সরকারের আবির্ভাব হবে। তাই পরিশেষে বলতে হয়—
‘গুণে কথায় ও কাজে অদ্বিতীয়া তুমি
তুমি আমাদের দেশনেত্রী তোমার উপমা
যে শুধুই তুমি।’