প্রতিবেদন : ভোটার তালিকা সংশোধনের অজুহাতে ঘুরপথে এনআরসি লাগু করার চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি। দলের অন্তর্বর্তী সমীক্ষায় বিজেপি বুঝে গিয়েছে বাংলার হার নিশ্চিত। তাই বিহারের নাম করে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন শুরু করে দিল কেন্দ্র। নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে সাফ জানিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)।
ভুয়ো এপিক কার্ড ইস্যুতে বিজেপির ষড়যন্ত্র এর আগে হাতেনাতে ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারেও ভোটার তালিকা সংশোধনের কারসাজি ধরা পড়ে গিয়েছে বিজেপির। শনিবার দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এবং সাকেত গোখেল। কলকাতার তৃণমূল ভবনেও সাংবাদিক বৈঠক থেকে একই ইস্যুতে তোপ দাগেন তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও তৃণমূলের (TMC) রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, বিজেপির চক্রান্তের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস একা নয়, ইন্ডিয়া একজোট। সংসদ অধিবেশনের আগেই দিল্লিতে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে।
ডেরেক বলেন, দিল্লিতে ভোটার তালিকা সংশোধনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে পরিকল্পনা করছে তৃণমূল। ২১ জুলাই সংসদ অধিবেশন শুরুর পর ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরোধিতায় লাগাতার প্রতিবাদ চলবে। সংসদের ভিতরে ও বাইরে ধরনা প্রদর্শন করবে। ২০২১ সালে বাংলায় বিজেপির সিএএ আনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনেও একই ফল পাবে বিজেপি। সাগরিকা ঘোষ বলেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। একমাসের মধ্যে জন্মের শংসাপত্র না জমা দিলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাবে। এটা বিজেপির ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। সাকেত গোখেল বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে এনআরসি আনার চেষ্টা করছে বিজেপি। লক্ষ্য একটাই, বাংলার বিধানসভা ভোটে কারচুপি। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে এই নিয়ম প্রত্যাহার করতে হবে।
আরও পড়ুন- কসবাকাণ্ড: সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যে তথ্য ছড়ালে কড়া পদক্ষেপ কলকাতা পুলিশের, তদন্তে SIT গঠন
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, কেন্দ্রের সরকার নিরপেক্ষ সংস্থাগুলিকে রাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে। তারা বিজেপির হয়ে কাজ করছে। আমরা চাই নিরপেক্ষ সংস্থাগুলো নিরপেক্ষতা বজায় রাখুক। সব রাজ্য একটি রাজনৈতিক দলকে দখল করতে হবে, তাই স্বশাসিত সংস্থাগুলিকে ব্যবহার। ১৯৮৭-র ১ জুলাই থেকে ২০০৪-এর ২ ডিসেম্বরের মধ্যে যাদের জন্ম তাদের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে একটা বিশেষ ঘোষণাপত্রে সই করতে হবে, বাবা-মায়ের জন্মের সার্টিফিকেট দিতে হবে। তাঁর প্রশ্ন, হঠাৎ ৮৭ সাল বাছা হল কেন? যাঁরা ওই সময় জন্মেছেন তাঁদের বাবা-মায়ের কত বয়স হবে, তাঁরা তাদের জন্মের সার্টিফিকেট জোগাড় করবেন কী করে? এসব ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা। ঘুরপথে এনআরসির দিকে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত। রাজ্যের এবং দেশের ভোটাররা সচেতন থাকুন। এই অধিকার তাঁদের সংবিধান দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সকলের পাশে আছে। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামবে তৃণমূল।
কুণাল ঘোষ বলেন, বিহারের ভোট শুধু বাহানা, আসল টার্গেট হল বাংলা। বিজেপি অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বুঝতে পেরেছে বাংলায় ২০২৬-এর ভোটে ৪৮-এর বেশি আসন পাচ্ছে না। তাই ঘুরপথে ভোটার লিস্টে কারচুপি করে কৌশল খাটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলা লড়াই থেকে পিছু হটবে না। নির্বাচন কমিশন দলদাসের মতো আচরণ করলে, তৃণমূল কংগ্রেস বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে। আর নিশ্চিত, আড়াইশোর বেশি আসন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চতুর্থবার মা-মাটি-মানুষের সরকার বাংলায় শপথ নেবে।