বিজেপি! তোমার দিন গিয়েছে…

মোদি ম্যাজিক পশ্চিমবঙ্গে তো নেই-ই, গোটা দেশে ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। একইভাবে ক্রমক্ষীয়মান বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে চিরদিনই প্রান্তিক শক্তি। এবার ক্রমে গোটা দেশে সেই পরিণতি প্রকটিত হচ্ছে। সারা ভারতে সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে লিখছেন দেবলীনা মুখোপাধ্যায়

Must read

বঙ্কিম লিখেছিলেন, লাঠি! তোমার দিন গিয়েছে। আর আমরা টের পাচ্ছি, মোদি আর বিজেপি, দুয়েরই এক্সপিয়ারি ডেট সমাসন্ন।
মোদি ম্যাজিক পশ্চিমবঙ্গে তো নেই-ই, গোটা দেশে ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। একইভাবে ক্রমক্ষীয়মান বিজেপি (Shame On BJP)। পশ্চিমবঙ্গে চিরদিনই প্রান্তিক শক্তি। এবার ক্রমে গোটা দেশে সেই পরিণতি প্রকটিত হচ্ছে।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেই প্রমাণিত হয়েছে যে, মোদি ও বিজেপি আর রাজনৈতিক ইভেন্ট সুপারহিট করতে পারছে না। নরেন্দ্র মোদি রামমন্দির প্রতিষ্ঠার বছরে চরম ধাক্কা খেয়েছেন। একা আর সরকার গঠন করতে পারলেন না। আর এবার অপারেশন সিঁদুরকে প্রচার করা হলেও একটিও উপনির্বাচনে দাগই কাটতে পারল না মোদির সাফল্য। অর্থাৎ ওই সাফল্য সেনাবাহিনীর। মোদির নয়। এই ম্যাচিওরিটি দেখাল এই চার রাজ্যের ভোটার। দক্ষিণে কেরল, উত্তরে পাঞ্জাব, পশ্চিমে গুজরাত এবং পূর্বে বাংলা। ভারতের চার প্রান্তের মানুষ চাররকম। তাঁদের সংস্কৃতি পৃথক। খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। ভাষার অমিল। ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি, আচার বিচারও সম্পূর্ণ ভিনধর্মী প্রকৃতির। অথচ এই চার রাজ্যের সম্পূর্ণ আলাদা ভাবনার ভোটাররা কয়েকটি ক্ষুদ্র উপনির্বাচনে একই প্যাটার্নে নিজেদের রাজনৈতিক অভিমত ও অবস্থান জানিয়ে দিল। যা সমমনস্ক।
এই চার রাজ্যই ভারতীয় জনতা পার্টিকে প্রত্যাখ্যান করল বিধানসভার উপনির্বাচনে। সামান্য বিধানসভার উপনির্বাচনে হারজিত সেরকম রাজনৈতিকভাবে মোটেই তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু পাঞ্জাব থেকে কেরল। গুজরাত থেকে পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে একটি প্যাটার্ন। হিন্দুত্ব ইস্যু আর বিজেপিকে জয়ী করতে পারছে না। যে কোনও ইস্যুতে যদি খামতি থাকে, তাহলে সেই অপূর্ণতা মেটাতে আরও একটি অস্ত্র সদাপ্রস্তুত এবং নিশ্চিত কার্যকর ছিল। সেটি হল মোদিত্ব। অর্থাৎ হয় হিন্দুত্ব প্লাস মোদিত্ব। অথবা যে কোনও একটি হাতিয়ারে অন্তত বিজেপি সর্বত্রই জয়ী হয়ে এসেছে। এবার এই চার রাজ্যে দেখা গেল কোথাও কোনও ফর্মুলাই কাজ করল না।
প্রতিটি রাজ্যেই দেখা গেল বিজেপির (Shame On BJP) ভোট কমে যাচ্ছে। বিজেপিকে সবথেকে বেশি ভোট কারা দেয়? বিজেপি নিজেই জোর গলায় বলে, তাদের ভোটার হল হিন্দুরা। অন্যদের ভোটের পরোয়া তারা করে না। এখন রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির ভোট কমছে। তার অর্থ, বিজেপির থেকে হিন্দুরাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। গুজরাতে বিজেপি সরকার চালাচ্ছে তিন দশক ধরে। সেখানে আম আদমি পার্টি বিজেপিকে গুজরাতের উপনির্বাচনে হারিয়ে দিল। পাঞ্জাবে বিজেপি ১০ বছর আগেও চার নম্বরে ছিল। এখনও তাই! কেরলে আজও এলডিএফ বনাম ইউডিএফ। বিজেপি আগেও ছিল না। এখনও লড়াইয়ে নেই! সর্বত্র বিজেপির ভোট কমে গিয়েছে। সবথেকে চমকপ্রদ বার্তা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ২৯৪ আসনের কোথাও উপনির্বাচন হল না। হল এমন এক স্থানে যা মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন। অর্থাৎ যে মুর্শিদাবাদকে বিরাট ইস্যু করে বিভাজনের রাজনীতি প্রচারিত হয়েছিল। রীতিমতো বঙ্গবিজেপির জন্য আতঙ্কের বার্তা দিয়েছে মুর্শিদাবাদ। মানুষ ধর্মীয় বিভাজনকে গুরুত্বই দিচ্ছে না সেটা তো ভোটের ফলাফলেই প্রমাণিত। কিন্তু বিজেপির বিপুল সংখ্যক ভোট কমে যাওয়ার অর্থ হিন্দুদের বড়সড় অংশ বিজেপির উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
নিট ফল, ছিল মোদিত্ব এবং হিন্দুত্ব। দুটোই গিয়েছে। মোদি যুগের শেষের শুরু। মোদি চেয়েছিলেন নতুন ভারত গড়তে। কিন্তু নতুন ভারতে মোদি ক্রমেই ব্যাকডেটেড হয়ে যাচ্ছেন।
তাই ইস্যু খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছেন তাঁর দলবল। সোমবার কসবা-কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে দিল্লি থেকে বিজেপির একটি (Kasba Case) ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। এই টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপির সাংসদ সত্যপাল সিং। ভাল কথা। কিন্তু একটা জিজ্ঞাসা আছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে কেন ফ্যাক্ট খুঁজতে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম যায় না?
আমরা দেখেছি, বিজেপির (Shame On BJP) মহিলা মোর্চার আম্বেদকর নগরের প্রেসিডেন্ট ড্রিঙ্কল সিং রাজ্যসভার প্রেসিডেন্ট ব্রিজলাল সিংয়ের পায়ে পড়ে অভিযোগ করছেন যে তাঁর ওপর অত্যাচার হয়েছে, কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কেন? পহেলগাঁওয়ে টিম পাঠাতে পারে না, হাথরসে টিম যেতে পারে না। কেন?
বিজেপির এই পদক্ষেপ আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে হস্তক্ষেপ। এই ধরনের আচরণ রাজ্যের শাসনব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে।
অথচ সিবিআই তদন্ত এখনই চাইছেন না কসবার সরকারি আইন কলেজের গণধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবার। পুলিশ এবং প্রশাসনের উপর ভরসা রাখছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে আশারাম বাপু থেকে গুরমিত রাম রহিম সিং। একের পর এক ধর্মগুরুর নামে এর আগেও ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার কারণে শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে তাঁদের। এবার পদ্মশ্রী কার্তিক মহারাজকে সেই একই লাইনে দেখা যাচ্ছে।
এক মহিলাকে চাকরি দেওয়ার নাম করে ধর্ষণ এবং জোর করে গর্ভপাত করার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত এই মহারাজের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে নবগ্রাম থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। রাম রহিম থেকে আশারাম বাপু। এঁরা বিজেপির ছত্রছায়ায় থেকেও জেল খাটছেন। তাই আমাদের দেশে কোনও ব্যক্তিই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। এমন মারাত্মক অভিযোগ যখন সামনে এসেছে, তার উপযুক্ত তদন্ত করা হোক। আমরা জানি, বাঙালি মহিলারা লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েও মুখ বুজে সংসার করেন। তাঁরা কোথাও অভিযোগ করতে যান না। একজন ঘরের মহিলা যখন এই ধরনের অভিযোগ আনছেন, গুরুত্ব সহকারে তার তদন্ত করা উচিত। আর ভারত সরকারের উচিত কার্তিক মহারাজের পদ্মশ্রী অবিলম্বে কেড়ে নেওয়া।
এরকম দ্বিচারিতার জন্যই বিজেপি আর মোদির এই হাল।

আরও পড়ুন-সেপ্টেম্বরের মধ্যে অডিট শেষ করাই লক্ষ্য, রাজ্যে সেতু ও উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু

Latest article