প্রতিবেদন: আপেল চাষি (Apple Farmers) এবং ব্যবসায়ীদের রোষানলে বিজেপি। ফলে নির্বাচনের মুখে হিমাচল প্রদেশে, বিশেষ করে সিমলায় চরম অস্বস্তিতে ভুগছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী আপেলের উৎপাদক এবং বিপণনকারীদের অভিযোগ, কথা দিয়ে কথা রাখেনি কেন্দ্র। ফলে এই কাজে যুক্ত রাজ্যের প্রায় আড়াই লক্ষ পরিবার গভীর আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। সমস্যা সমাধানের সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েও আসলে কিছুই করেনি বিজেপি। পরিণতিতে রাজ্যের ৫০০০ কোটি টাকার আপেল-অর্থনীতি এক অভূতপূর্ব বিপদের মুখে। পাহাড়ি রাজ্য হিমাচলে এই ঐতিহ্যবাহী আপেলই এবারের অন্যতম নির্বাচনী ইস্যু। এবং এই ইস্যুতেই ২০১৯এ জেতা রাজ্যের ৪টি লোকসভা আসনেই এবারে বিপর্যয়ের মুখোমুখি পদ্মশিবির।
সামনের শনিবার সপ্তম তথা শেষপর্বের নির্বাচনে রাজ্যের ৪ লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ। একইসঙ্গে বিধানসভার ৬টি আসনেও উপনির্বাচন। বহুজন সমাজ পার্টি নির্বাচনী আসরে থাকলেও হিমাচলে মূল লড়াই কিন্তু বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসেরই। উত্তরভারতে একমাত্র এই রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। লক্ষণীয়, আপেল-চাষিদের মূল ক্ষোভ গেরুয়া কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হলেও কংগ্রেসশাসিত রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও কিন্তু অসন্তোষ লুকিয়ে রাখেননি তাঁরা।
আরও পড়ুন- ধর্মের নামে বিভাজনে মদত দেওয়া বিজেপিকে উৎখাত করুন: অভিষেক
সিমলা, মান্ডি, কাংরা এবং হামিরপুর— মোট ৪টি লোকসভা আসন হিমাচলে। শুধু আপেল নয়, বন্যাত্রাণেও কেন্দ্রের ভূমিকায় প্রবল ক্ষোভ সাধারণ মানুষের মনে। অভিযোগ, প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা তো দূরের কথা, ন্যূনতম ত্রাণও সরবরাহ করেনি কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, প্রবল বন্যায় এই পাহাড়ি রাজ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হওয়া সত্ত্বেও একে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেনি বিজেপির কেন্দ্র। প্রস্তাবিত বিমানবন্দর এবং রেল সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিজেপি-সরকারের ঔদাসীন্যও মেনে নিতে পারছেন না রাজ্যের সাধারণ মানুষ। এরপরে আছে বেকারত্বের সমস্যা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এইসব সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২২-এর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় এলেও মানুষের আশাপূরণ করতে পারছে না তারা। কিন্তু সব সমস্যাকে ছাড়িয়ে আপেল-সমস্যা এবারে বিশেষভাবে উঠে আসছে হিমাচলের নির্বাচনী ইস্যুতে। সিমলা, কিন্নাউর এবং কুলু- হিমাচলের এই ৩টি জেলাতেই আপেল উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। খুব পিছিয়ে নেই লাহুল-স্পিতি, মান্ডি এবং চাম্বাও। আপেল উৎপাদকদের অভিযোগ, রাজ্যে এত আপেল উৎপাদন সত্ত্বেও বিদেশ থেকে আমদানির দরজা উন্মুক্ত করে দিচ্ছে কেন্দ্র। আপেল আমদানি হচ্ছে আফগানিস্তান এবং ইরান থেকে, নামমাত্র আমদানি শুল্কের বিনিময়ে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হিমাচলের আপেল চাষি (Apple Farmers) এবং কারবারিরা। কমে যাচ্ছে উৎপাদনশীলতা। বাজারে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। এবারে নজর কাড়ছে মান্ডি লোকসভা আসন। এখানে কংগ্রেসের বিদায়ী সাংসদ প্রতিভা সিংয়ের ছেড়ে দেওয়া আসনে কংগ্রেসপ্রার্থী হয়েছেব তাঁর ছেলে বিক্রমাদিত্য সিং। পদ্মপ্রার্থী অভিনেত্রী কঙ্গনা রানওয়াতের সামনে নিঃসন্দেহে এক শক্ত চ্যালেঞ্জ। কাংরায় হাতচিহ্নে লড়ছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা। সিমলাতেও পদ্মপ্রার্থীর দিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কংগ্রেস। হামিরপুরে গভীর অনিশ্চয়তায় গেরুয়া শিবির। ধরমশালা এবং লাহুল বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়েছেন বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। পার্টি হুইপ অমান্য করে বিধানসভার আস্থাভোটে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কারণে ৬ কংগ্রেস বিধায়কের বাতিল হয়ে গিয়েছিল বিধায়ক পদ। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তাঁরা সকলেই এবারে নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে পদ্মপ্রার্থী। কিন্তু এবারে সেইসব আসন ধরে রাখা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।