প্রতিবেদন : তৃণমূলের চালে বিধানসভায় মাত বিরোধী বিজেপি। কোনওরকম ভোটাভুটি ছাড়াই সর্বসম্মতিতে বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল তৃণমূলের আনা বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী প্রস্তাব। কিছুতেই বাংলা ভাগ করতে দেব না। ঐক্যবদ্ধ বাংলা ছিল আছে থাকবে, বিধানসভায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তবে সোমবার যেভাবে কৌশলে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী প্রস্তাবে বিজেপিকে কাত করল তৃণমূল তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল বাংলার পরিষদীয় রাজনীতিতে। মুখ্যমন্ত্রী গুরত্ব দিলেন বিরোধী মতামতকেও। বক্তব্য রাখতে উঠে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে অনুরোধ করলেন বিরোধী দলনেতার দেওয়া অখণ্ড বাংলার লাইন প্রস্তাবে যুক্ত করতে। তা করাও হল। এদিন তৃণমূলের কৌশলের কাছে নতজানু হওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না বিজেপির। বঙ্গভঙ্গ নিয়ে তাদের দ্বিচারিতার সলিলসমাধি হল বিধানসভায়। বিজেপি বলতে বাধ্য হল তারা বঙ্গভঙ্গ চায় না। সম্মত হল তৃণমূলের আনা প্রস্তাবে। সম্মতি প্রস্তাবে লেখা হয়, আমরা অখণ্ড পশ্চিমবাংলাকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করব। আমরা বিভাজন চাই না। এই মহতি সদন অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রস্তাবে সই করেন পরিষদীয় মন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা।
আরও পড়ুন- ফুলের তোড়া নয় গাছের চারা দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়ার পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর
সোমবার বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। নাম না করে তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় বিশ্বাসী। কেন্দ্র যেমন সহযোগিতা করবে, তেমনই রাজ্য কেন্দ্রকে সহযোগিতা করবে। তাঁর সংযোজন, নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলে যাবে কেন? পাহাড়ি রাজ্যগুলিকে সাহায্যে করে। সিকিম আছে। সেখানে বাংলার গাড়ি না ঢুকলে সিকিম বন্ধ হয়ে যাবে। বৃহত্তর স্বার্থে বাংলা এক থাকা দরকার। উত্তরবঙ্গকে টাকার অঙ্কে মাপবেন না। এক লক্ষ ৬৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বিভাজন করা আমার উদ্দেশ্য নয়। গাল দেওয়া উদ্দেশ্য নয়। আমি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় বিশ্বাসী। রাজ্য শক্তিশালী হলে তবেই কেন্দ্র শক্তিশালী হবে। নীতি আয়োগের বৈঠকে গঠনমূলক প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আর দু-মিনিট বলতে দিত! আমি নীতি আয়োগের বিরোধী নয়। কিন্তু ওদের কিছু করার নেই।
মুখ্যমন্ত্রী যোগ করেন, পরিকাঠামো উন্নয়নে বাংলা এগিয়ে আছে। একশো দিনের টাকা, রাস্তার টাকা, স্কুলের টাকা, জলের টাকা, আবাসের টাকা বাংলা পাক চান মমতা। একই সঙ্গে তিনি জানান, প্রথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজ অনেক জায়গায় আটকে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে বিষয়টি দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, আমাদের বিধায়করা দুটো করে স্কুল বেছে নিয়ে যদি উন্নয়ন করে, তাহলে ভাল হবে। এছাড়া আমাদের রাজ্যসভার সাংসদদের ফান্ডের ৭৫ শতাংশ টাকা দেব। শিক্ষা দফতরও দেবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমাদের জিডিপি বেড়েছে। গরিবি কমেছে। মুখ্যমন্ত্রী জেলা ভাগ প্রসঙ্গে বলেন, প্রশাসনের কাজের সুবিধার জন্য জেলা ভাগ হয়েছে। দুই মেদিনীপুর। আলিপুরদুয়ার। কালিম্পং— এ-গুলি ভাগ হয়েছে। একটা ঘটনা ঘটলে যাতে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যও অনলাইনে আপ তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। ২৮ লক্ষ নাম আছে। সমস্যায় পড়লে সাহায্য করি। কিন্তু এক কোটি পরিযায়ী শ্রমিক বাংলার বাইরে থাকলেও তাঁরা এখানকার সব সুবিধে পান। স্পষ্ট জানান মুখ্যমন্ত্রী।