আশঙ্কাকে সত্যি করে তড়িঘড়ি দেশের ১২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর ঘোষণা। এই ঘোষণা যে কতটা অপরিকল্পিত তা প্রমাণ করে দিল রাজ্যে এসআইআর নিয়ে বিএলও-দের প্রশিক্ষণের প্রথম দিন। একই সঙ্গে বিএলও-দের (BLO) স্কুলে পঠনপাঠন চালানোর সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা ও ফর্ম ফিলাপের কাজ – দুটিই করতে হবে। কমিশনের এই হঠকারিতার প্রতিবাদে প্রথমদিন প্রশিক্ষণ নিতে আসা বিএলও-রা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। আশ্চর্যজনকভাবে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি শনিবার বিএলও-দের তোলা প্রশ্নের। শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ শিবিরে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে মাঠে নামতে হয়।
শনিবার থেকে রাজ্যের বিএলও-দের (BLO) প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে রাজ্যে ইনিউমারেশন ফর্ম ফিলাপের আগে। মঙ্গলবার থেকে সেই ফর্ম ফিলাপ প্রক্রিয়া শুরু হবে। শনিবার প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার আগেই বিএলও-দের সঙ্গে একপ্রস্থ সংঘাত হয়ে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের। একাধিক অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে ১৪৩ জন বিএলও শুক্রবার পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি। শুক্রবার দুপুর ১২টার মধ্যে নিজেদের রেজিস্ট্রেশন না করালে বিভাগীয় ব্যবস্থা এমনকি সাসপেনশনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল কমিশন। আদতে যে দাবি তুলে বিএলও-রা কাজে যোগ দিতে অস্বীকার করছিলেন, তা কতটা ন্যায্য ছিল, প্রমাণিত হল শনিবার প্রশিক্ষণের প্রথম দিন।
নজরুল মঞ্চে বিএলও-দের প্রশিক্ষণ চলাকালীন দাবি তোলা হয়, ডিউটির স্বচ্ছতা নিয়ে। বিএলও-রা জানান, তাঁদের কোনও অন-ডিউটি ফর্ম দেওয়া হবে না বলেই জানায় কমিশনের আধিকারিকরা। সেক্ষেত্রে যে কর্মক্ষেত্র, মূলত স্কুলে, বিএলও-রা কর্মরত সেখানে যে কাগজ দেখিয়ে নির্বাচনের কাজে যোগ দেবেন রাজ্য সরকারের কর্মীরা, সেরকম কোনও কাগজই তাঁদের হাতে থাকছে না। ফলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম ফিলাপের কাজ তাঁদের স্কুল কামাই করেই করতে হবে। সেখানেই কমিশনের দাবি, স্কুল ছুটির পরে তাঁদের এসআইআর-এর কাজ করতে হবে, এমনটা জানানো হয়। এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিএলও-রা।
আরও পড়ুন- SIR ঘোষণার পর একের পর এক মৃত্যু, ৪ নভেম্বর প্রতিবাদে মিছিল-সভা মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেকের
শনিবার প্রশিক্ষণ নিতে আসা বিএলও-দের দাবি, প্রশিক্ষণ শিবিরে তাঁদের কোনও কথাই শোনা হয়নি। মঞ্চে থাকা আধিকারিকরাই বক্তব্য রেখেছেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিএলও-দের হুমকি দিয়েছেন, কাজে অসঙ্গতি হলে বিহারের মতো বিএলও-দের জেলে ভরা হবে। সেক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশে স্কুল করার পরে এসআইআর-এর কাজ করা তাঁদের জন্য একটি অমানুষিক কাজ হবে। সেক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি হলে দায় নেবে কে, প্রশ্ন বিএলও-দের।
সেই সঙ্গে স্কুলের শেষে সন্ধ্যায় কাজ করতে গেলে কীভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হবে বিএলও-দের। যে মহিলা কর্মীরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে ফর্ম ফিলাপের কাজ করবেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়েই বা কী ভাবা হয়েছে কমিশনের তরফে, প্রশ্ন তোলেন প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়া বিএলও-রা। কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর এদিন দিতে পারেনি কমিশনের আধিকারিকরা। জানানো হয়, অন ডিউটি লিখিত দেওয়া সম্পর্কে জাতীয় নির্বাচনের কাছে রাজ্যের সিইও-র তরফ থেকে অন ডিউটি কাগজ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সদুত্তর দেয়নি জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

