প্রতিবেদন: ক্রমশই ভয়বহ হয়ে উঠছে বর্ষার তাণ্ডব। রাজধানী দিল্লি থেকে শুরু করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরে বেপরোয়া প্রকৃতির রোষ। আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে দিল্লিতে যমুনার জলস্তর। ভাঙার মুখে আগের যাবতীয় রেকর্ড। মঙ্গলবার সকালেই বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছিল যমুনার জলস্তর। রাতের মধ্যে হু হু করে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৫.৩৩ মিটার। স্বাভাবিকভাবেই দিল্লি-এনসিআরে জারি করা হয়ে লাল সতর্কতা, বন্যাসতর্কতা। ইতিমধ্যেই দিল্লি ও লাগোয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে হরিয়ানার হাতিকুণ্ড বাঁধ থেকে ১ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার ফলে। দিশাহারা আতঙ্কগ্রস্ত বাসিন্দারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়। যমুনাবাজার, নিগমবোধ ঘাট, বাসুদেব ঘাট এলাকায় মঙ্গলবার থেকেই কোমর সমান জল। নৌকা নামিয়ে উদ্ধার করা হচ্ছে আটকে পড়া বাসিন্দাদের। ঘরের ভেতরেও বুক সমান জল। যমুনার উপরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লোহাপুল। বুধবারও ভারীবৃষ্টিতে নাকাল দিল্লি, নয়ডা, গাজিয়াবাদ ও গুরগাঁও। গুরগাঁওতে ইফকো চক, হন্ডাচক ও শঙ্কর চক ডুবে গেছে জলে। বন্ধ হয়ে গেছে দিল্লি-জয়পুর জাতীয় সড়ক। ভারীবৃষ্টির তাণ্ডবে রাস্তা ধসে গিয়েছে জনপুরীর। নয়ডার সেক্টর ১২৮ ও ডুবে গেছে জলে। বিপর্যস্ত ঘর-বাড়ি এবং প্রচুর কৃষিজমি। সোনিপথে ডুবে গিয়েছে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ। দিল্লিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুরনো রেলওয়ে ব্রিজ।
আরও পড়ুন-রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে গত তিন বছরে বিপুল কর্মীহ্রাস
গত ৪ দশকে এমন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েনি পাঞ্জাব। একনাগাড়ে এমন ভয়ঙ্কর বৃষ্টির দাপটও দেখা যায়নি স্মরণকালে। প্রবল বন্যার গ্রাসে চলে গিয়েছে পাঞ্জাবের ২৩টি জেলারই বড় অংশ। এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪০ জন। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সরকারি তথ্যেরই দাবি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩.৪৫ লক্ষ মানুষ। সম্পূর্ণ জলের নীচে চলে গিয়েছে অন্তত ১৪০০ গ্রাম। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ, পাঞ্জাবকে ‘বিপর্যস্ত রাজ্য’ ঘোষণা করেছে সে রাজ্যের আপ সরকার। উদ্ধারের কাজে নেমেছে সেনা। নৌসেনা এবং বায়ুসেনার জওয়ানদেরও দুর্গত এলাকায় পৌঁছতে কঠিন সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। নেমে পড়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২৩টি দলও। সরকারি হিসেব বলছে, এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে কুড়ি হাজারেরও বেশি দুর্গতকে। এরমধ্যে প্রায় ৬০০০ মানুষকে পাঠানো হয়েছে ত্রাণ শিবিরে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঠানকোট। মৃতের সংখ্যা অন্তত ৬। লুধিয়ানায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫ জনের। সবচেয়ে বেশি গ্রাম ডুবে গিয়েছে গুরুদাসপুর জেলায়। সংখ্যাটা প্রায় ৩২৪। অমৃতসর এবং হোসিয়ারপুরে ডুবেছে যথাক্রমে ১৩৫ এবং ১১৯ গ্রাম। অন্যান্য গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বার্নালা, ভাতিণ্ডা, ফিরোজপুর, পাতিয়ালা, সাঙ্গরুর, তরন তারান।
হিমাচলে অরেঞ্জ অ্যালার্ট
প্রবল বৃষ্টির দাপটে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশও। বৃষ্টির দোসর ভূমিধস। মঙ্গলবার থেকে বেড়েই চলেছে তাণ্ডব। সরকারি সূত্রে মৃতের সংখ্যা ৫ বলে দাবি করা হলেও স্থানীয় সূত্রে বলা হয়েছে, মৃত অন্তত ১০। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে একের পর এক বাড়ি। অবরুদ্ধ ৪টি জাতীয় সড়ক-সহ মোট ১৩৩৭টি রাস্তা। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আপেল চাষ এবং শিল্পের। থমকে পর্যটনও। বুধবার অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে কাংগ্রা, মাণ্ডি, সিরমৌর ও কিন্নরে। হলুদ সতর্কতা উনা এবং বিলাসপুরের জন্য। লক্ষণীয়, বর্ষার শুরু থেকে এই পাহাড়ি রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩০০ জন। উত্তরাখণ্ডেও প্রবল বৃষ্টির সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
জম্মুও কাশ্মীরে স্তব্ধ রেল
বিরামহীন বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত জম্মু-কাশ্মীরে। ৮ দিন ধরে স্তব্ধ জম্মুর রেল যোগাযোগ। জম্মু এবং কাটরা স্টেশন থেকে বাতিল করা হয়েছে ৬৮টি ট্রেন। বাতিলের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ফলে আটকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মুখে বৈষ্ণোদেবী যাত্রার পুণ্যার্থীরা।