প্রতিবেদন: শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন তিনি। তাঁর চরিত্রের এত বৈচিত্র্য রয়েছে যার জন্য তিনি হয়তো একজন সাধারণ রাজনীতিবিদ হয়েও অসাধারণ ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছেন। তাঁর চরিত্রের বিভিন্ন শেড ফুটিয়ে তুলেছে তাঁর অসাধারণ সাহিত্যচিন্তকের বৈশিষ্ট্যকে। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পেল ‘এই অবগাহন’ পত্রিকার চতুর্থ সংস্করণ। এই বিশেষ সংখ্যায় প্রায় একশোর বেশি লেখা হয়েছে মন্ত্রী তথা রাজনীতিবিদ তথা সাহিত্যিক তথা নাট্যকার তথা অধ্যাপক ব্রাত্য বসুকে নিয়ে। সহস্রাধিক পৃষ্ঠায় শতাধিক প্রবন্ধের সম্মিলিত নির্মাণে গড়ে উঠেছে এই অবগাহন সাহিত্য পত্রিকার ‘ব্রাত্য বসু বিশেষ সংখ্যা’। তিনি নিজে যেমন দক্ষ হাতে প্রশাসনিক দিক সামলাচ্ছেন, সামলাচ্ছেন রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে— ঠিক তেমনভাবেই সামলে চলেছেন জনসাধারণের মনোরঞ্জনের বিষয়টিও। তাই এই ধরনের বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিকে নিয়ে যতই লেখা যায় ততই যেন তা ছোট গল্পের মতো শেষ হয়েও শেষ হয় না। এদিন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিতে এই পত্রিকার আনুষ্ঠানিক প্রকাশে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং ব্রাত্য বসু, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার, লেখক প্রচেত গুপ্ত। এই পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি এদিন উদ্বোধন হয় ব্রাত্য বসুর নিজস্ব ওয়েবসাইটের। সেখানে যেমন একই ছাতার তলায় তাঁর ফেসবুক এক্স হ্যান্ডেল এবং ইনস্টাগ্রামের পেজ পাওয়া যাবে ঠিক তেমনই পাওয়া যাবে প্রথম থেকে আজ অবধি তাঁর লেখা সমস্ত নাটক। এছাড়াও তাঁর নির্দেশিত নাটকের তালিকাও থাকবে সাল ধরে।
আরও পড়ুন-মোসাদের গোপন অভিযান, তারপরই হামলা
প্রচলিত সময়ান্তরের ভাল, মন্দ, ব্যর্থতা, সফলতা, আনন্দ, দুঃখ, হতাশা এই যাবতীয় খতিয়ান কিংবা পাঠ-পরম্পরা যদি আমাদের একটুও মোচড় না দেয়, মনে হয় তবে বোধহয় ব্রাত্য বসু-পাঠ আসলে সম্পূর্ণ হল না। যে কোনও এককমুখী দৃষ্টিকোণই কিন্তু আসলে পাঠচর্চার একপেশে গড়নকেই সামনে আনে। তবে, এক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি, কারণ ব্রাত্য বসু তো শুধুমাত্র নট কিংবা নাটককার হিসেবেই নিজেকে সীমায়িত করে রাখেননি। গ্রাম থেকে মফসসল, মফসসল থেকে শহরের অলিগলি তাঁর সৃজনশীলতায় আলোড়িত ও আলোকিত। তাই তো, নাটককার ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কখনও জুড়ে যেতে দেখা যায় কবি ব্রাত্য বসুকে, আবার কবি ব্রাত্য বসুর ভিতর উঁকি দিতে থাকে তাঁর ঔপন্যাসিক মনন, আবার ঔপন্যাসিক সত্তার আড়ালে-আবডালে জুড়ে যেতে থাকে নির্মিত অভিনেতার অজানা-অচেনা বহুরূপ। ফলত, এই বিচিত্র অভিমুখের ব্রাত্য বসুকে ধরাই ছিল এই অবগাহনের আসল উদ্দেশ।
এদিনের অনুষ্ঠানে নাটকের মাহাত্ম্য তুলে ধরে কুণাল ঘোষ বলেন, সিনেমায় অনেক টেক নেওয়ার সুযোগ থাকে কিন্তু মঞ্চে যখন নাটক হয় তখন সেই সময়টাই তাঁর অগ্নিপরীক্ষা হবে। এটা একটা আলাদা রোমাঞ্চ। অনেক সুপারহিট সিনেমা আছে যেখানে সেই রোমাঞ্চ অনুভব হয় না। ব্রাত্য শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক। যে সমস্ত সংবেদনশীল লেখকের কথা মনে পড়ে তার মধ্যে ব্রাত্য বসু অন্যতম। ব্রাত্য এমনভাবে লেখে যাতে ইতিহাসকে নতুন দলিলের মতো করে তৈরি করা যায়। তিনি নিজেও যেমন অভিনেতা, সেরকম অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিয়ে নতুন জিনিস তৈরি করিয়ে নেন। তিনি যেভাবে চরিত্র, পরিস্থিতি তৈরি করেন তা ভাবা যায় না। যখন জমি আন্দোলন নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল রাজ্যে, তখন বিবেকের টানে মাটির কাছে নেমে এসেছিলেন ব্রাত্য বসু। তখন তিনি মন্ত্রী ছিলেন না। তাঁর মাইনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যে লোকটা প্রশাসনিক দিক সামলাচ্ছে সে-ই আবার গভীর রাতে চিত্রনাট্য লিখছে, অভিনয় করছে, সাহিত্যচর্চা করছে।
প্রচেত গুপ্তর কথায়, এমন একটা দলিল থাকুক যা গর্বের দলিল হয়ে থাকবে। যখন বহু বছর পরে এই নিয়ে আলোচনা হবে তখন এটিও থাকবে সেই আলোচনার মধ্যে। ব্রাত্য যা উপন্যাসচর্চা করেছে তার জন্য ওর এখনও অনেক সম্মান পাওয়া বাকি রয়ে গেল।
সবশেষে ব্রাত্য বসু এই সম্মান পেয়ে আপ্লুত বলে জানান। তিনি জানান, সাধারণত এই ধরনের অনুষ্ঠানে আসতে চান না তিনি। তবে আজকের এই অনুষ্ঠান তাঁকে অন্যভাবেই টেনেছে। তাঁর কথায়, ৫০ বছর পরে আমরা অনেকেই থাকব না। আমরা কেউ জানি না আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার দরজা মিরাকলভাবে খুলে যাবে কিনা। একশোর বেশি লেখা আছে এই পত্রিকায়। সেখানে সিনেমার পরিচালক, সাহিত্যিক, কবি অনেকেই লিখেছেন। এই ১০০টির উপরে লেখা অরীন্দ্রজিৎ জোগাড় করেছে। ফাইনালি সেই লেখা বেরোল। ভাল লাগছে।