বাঙালির রক্তে ফুটবল। দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার বাঁ-পায়ের জাদু মুগ্ধ করেছিল অগণিত ক্রীড়ামোদীকে। বর্তমানে আচ্ছন্ন করে রেখেছে মেসি-ম্যাজিক। মূলত এই দুই ফুটবল-কিংবদন্তির কারণেই বিশ্বকাপ এবং কোপায় আর্জেন্টিনার হয়ে গলা ফাটান বঙ্গবাসীরা, বঙ্গভাষীরা। লাতিন আমেরিকার দেশটি মিশে গেছে বাঙালির আবেগের সঙ্গে। ফুটবলপ্রেমীদের জন্য সুখবর, ২০২৬-এর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি হিসেবে অংশ নিচ্ছে আর্জেন্টিনা। মেলা প্রাঙ্গণে থাকবে এই দেশের বিশেষ প্যাভিলিয়ন। গত ৩ নভেম্বর, কলকাতার দ্য পার্ক হোটেলে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই খবর জানান গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে, গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন আন্দ্রেস সেবাস্তিয়ান রোজাস, আনন্দী কুইপো রিয়াভিটজ, রাজু বর্মন, শুভঙ্কর দে, সুদীপ্ত দে, এষা চট্টোপাধ্যায়, শিলাদিত্য সরকার প্রমুখ। উন্মোচিত হয় লোগো।
প্রসঙ্গত, ৪৯তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলার উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দেশ ও বিদেশের বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক ও অন্যান্য গুণিজন। স্থান, সল্টলেক বইমেলা প্রাঙ্গণ।
আরও পড়ুন-নয়া সাইট এসএসসি-র
বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা পৃথিবীর বৃহত্তম পাঠকধন্য বই উৎসব। গিল্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের বইমেলায় এসেছিলেন ২৭ লক্ষ বইপ্রেমী। বই বিক্রির পরিমাণ ২৩ কোটি টাকা। আগামী বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্য অনেক নতুন প্রকাশক আবেদন করেছেন। গতবার সামান্য কিছু নতুন স্টল দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আগামী বইমেলায় স্টলের সংখ্যা আর বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
প্রতিবছরের মতো ২০২৬-এর বইমেলায় অংশ নেবে গ্রেট ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, পেরু, কলম্বিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ। আলোচনা চলছে আরও কিছু দেশের সঙ্গে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০২৬-এ আরও বেশি সংখ্যক দেশ অংশ নিতে পারে। এছাড়া থাকছে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের প্রকাশনাও। যেমন দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, তামিলনাডু, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, বিহার, অসম, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, ওড়িশা, ত্রিপুরা ইত্যাদি। যথারীতি থাকবে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন, চিলড্রেনস প্যাভিলিয়ন ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ, কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল। অনুষ্ঠিত হবে ২৪ এবং ২৫ জানুয়ারি। অংশ নেবেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টরা।
আরও পড়ুন-কবিগুরুর অপমান মানব না : শশী
২০২৭ সালে পালিত হবে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার সুবর্ণজয়ন্তী। এই উপলক্ষে গিল্ডের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব আলোকচিত্রী প্রথম ২০ বছর অর্থাৎ ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬ অবধি ময়দানে আয়োজিত বইমেলার দুর্লভ সব ছবি তুলেছেন, তাঁদের আলোকচিত্রের একটি প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এইসব দুর্লভ ও স্মৃতিবিজড়িত ফটোর মধ্যে সেরা ১০টিকে যথাযোগ্য মূল্যে পুরস্কৃত করা হবে। ২০২৬ বইমেলার প্রেস কর্নারে তাঁদের পাঠানো সব ছবিই মনোনয়ন সাপেক্ষে প্রদর্শিত হবে। আগামী সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে এই ছবিগুলি বইমেলার স্মরণিকায় প্রকাশ করার ইচ্ছা রয়েছে গিল্ড কর্তৃপক্ষের।
নগরোন্নয়ন দফতর, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, কেএমডিএ, বিধাননগর পুলিশ, কলকাতা পুলিশ, বিধাননগর পুরসংস্থা-সহ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যান্য দফতর বইমেলা সফল করতে বাড়িয়ে দেয় সহযোগিতার হাত। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
বাজল মেলার ঘণ্টা। শারদ উৎসবের পর এই মেলাকেই রাজ্যের সবচেয়ে বড় উৎসব মনে করা হয়। তুমুল ব্যস্ততা চোখে পড়ছে কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায়। লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক, কর্মীদের দম ফেলার সময় নেই। দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তুত করতে হবে বই। পাঠকরা মুখিয়ে আছেন যে!
—ছবি : শুভেন্দু চৌধুরী

