নতুন বইয়ের সুবাস পেতে বইমেলা ফিরে ফিরে আসে

শীতের আমেজ, বইয়ের গন্ধ, গান, সাহিত্য, প্রেম, খাওয়াদাওয়া সবমিলিয়ে বছরের শুরুতেই জমে উঠেছিল এবছরও ৪৮তম আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণ। নস্টালজিয়ার রেশ মেখে কলম ধরলেন শ্রেয়া বসু

Must read

সময়ের থেকে একধাপ এগিয়ে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামানায় কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। শীতের আমেজ, বইয়ের গন্ধ, গান, সাহিত্য, প্রেম, খাওয়াদাওয়া— সবমিলিয়ে বছরের শুরুতেই জমে ওঠে বইমেলা প্রাঙ্গণ। আবেগের অন্য নাম কলকাতা বইমেলা।
বইমেলার জন্য মানুষের বরাদ্দ থাকে এক মুঠো আলাদা আবেগ। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই বেশ জোরালো এক নস্টালজিক অনুভূতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এই মিলনক্ষেত্র। যেন অবিচ্ছেদ্য এক আত্মনিষ্ঠ অনুভূতির উপস্থিতি। বাংলায় নতুন আঙ্গিকে বইমেলার মহিমা, সমাজ-সংস্কৃতি, স্বাধিকার, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য ও দর্শনের নতুন দিশা দেখালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন-দোহা ডায়মন্ড লিগ দিয়ে ফিরছেন নীরজ

কলকাতা বইমেলা বলতেই চোখ বুঝলে প্রথম যে দৃশ্যটি ভেসে ওঠে, সেটা হল সেই ছেলেবেলা। বইমেলা থেকে ফিরে বিছানার ওপর নামিয়ে রাখা প্লাস্টিকের প্যাকেট আর নতুন বইয়ের গন্ধ। উঁকি দিচ্ছে রংবেরঙের বই। চকচকে কাগজে ছাপা ছবির সঙ্গে জমজমাট রূপকথার গল্প। বই যে সেই থেকেই মানুষের সবচেয়ে ভাল বন্ধু, শেষ নিঃশ্বাসের সই। বড় হওয়ার সঙ্গে পাল্টেছে আগ্রহ। জীবনের নির্দিষ্ট দিক স্পষ্ট করার দৌড়ে পাল্টে গিয়েছিল বইমেলার আকর্ষণও। আবেগঘন সেই আকর্ষণ ফিরল নতুন রূপে। সমাজের মহামারী পেরিয়ে এই নতুন বইমেলা ক্ষত সারাবার মলম। মমতাময়ী স্পর্শ।
বইয়ের গন্ধকে এক কথায় বলে ‘বিবলিয়োস্মিয়া’ (Bibliosmia)। বইপ্রেমীরা জানেন আঙুলের ছাপের মতোই পৃথিবীর দুটো বইয়ের গন্ধ এক নয়। আমাদের নাক এক লক্ষ কোটি গন্ধ আলাদা ভাবে চেনার ক্ষমতা রাখে। প্রতিটা বইয়ের গন্ধ ঠিক এভাবেই অন্যরকম লাগে আমাদের নাকে। তফাত থাকে ইংরেজি বইয়ের গন্ধ ও বাংলা বইয়ের গন্ধে। বোর্ড বইয়ের গন্ধ এক রকম, পেপারব্যাকের গন্ধ অন্যরকম। পুরনো বইয়ের ভাঁজের গন্ধ যে ভাষায় কথা বলে, নতুন বই সে ভাষায় বলে না। চলতি বছরে গিল্ডের হিসেবে ২৫ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন বইমেলা প্রাঙ্গণে। গতবার বইমেলা ছিল ১৪ দিনের, এর মধ্যে দুদিন ছিল ন্যাশনাল হলিডে। এবছর বইমেলা ছিল ১২ দিনের। দিনের হিসেবে কম হলেও এই বছরে বইমেলায় ২৫ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে যা গত বারের তুলনায় প্রায় দু’কোটি বেশি। বইমেলা ঠিক বাঙালির কাছে দুর্গাপুজোর মতো, শেষ হতেই বইপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন, পরের বছর কবে বইমেলা হবে? আগামী বছর সম্ভবত জানুয়ারির শেষ থেকে ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জমবে বইমেলার আসর।

আরও পড়ুন-মুক্তি, খাঁচা থেকে নিজের ডেরায় জঙ্গলে ফিরল দক্ষিণরায়, স্বস্তি মৈপীঠে

নতুন বইয়ের মিষ্টি গন্ধ, বইমেলার আন্তরিকতা, উপভোগ্য শুধুমাত্র কলকাতার বইমেলা প্রাঙ্গণে। কলকাতা বইমেলার অপূর্ব অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা দুরূহ। তবে এককথায় প্রতিবছর নতুন করে কলকাতার বইমেলার প্রেমে পড়েন বহু মানুষ। খসখসে শুকনো পাতায় এক ফোঁটা শিশিরবিন্দু এই বইয়ের সম্ভার, মানুষের অন্যতম সই। আমার শহর, কালির সমুদ্রে এই বইমেলা উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে ভেসে বেড়ানো শব্দের এক অদম্য শক্তি, শেষ নিঃশ্বাসের খড়কুটো। এক জীবনে শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ।

Latest article