লন্ডন, ১ অগাস্ট : ওভাল নিয়ে এতদিনের মিথ ভাঙতে বসেছে। রানের মাঠে রুদ্ধশ্বাস লড়াই চলছে এখন। দ্বিতীয় দিনের শেষে ম্যাচ ৫০-৫০। নাকি দুই উইকেটে চলে যাওয়ায় সামান্য ঝুঁকে ইংল্যান্ডের দিকে? রাহুল থাকলে উল্টো বলতে হত। কেন যে তিনি ব্যাটের মুখ ওপেন করে থার্ডম্যানে খেলতে গেলেন!
২৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিল ভারত। দিনের শেষে ৭৫/২। যার অর্থ শুভমনরা এগিয়ে ৫২ রানে। বাকি আরও তিনদিন। অর্থাৎ বৃষ্টি বাধা না দিলে খেলার ফল হচ্ছেই। কিন্তু ভারতের জন্য চাপ বেশি। জিতলে সিরিজ সমান হবে। আর ড্র হলেও তেন্ডুলকর-অ্যান্ডারসন ট্রফি যাবে বেন স্টোকসের হাতে। যশস্বী ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রানে ব্যাট করছেন। রাহুল ৭ ও সুদর্শন ১১ করে আউট হয়েছেন। আপাতত লিড ৫২ রানের। শনিবার এই লিড যত এগোবে ততই ম্যাচে স্বস্তিতে বাড়বে শুভমনদের।
সকালে আধ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের চার উইকেট চলে গেল। তারপর ইংল্যান্ড যেভাবে শুরু করে তাতে মনে হয়নি এই উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু একটা আছে। ভারতের ইনিংস ২২৪ রানে শেষ হয়ে যায় করুণ সকালে তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেলেন বলে। তিনি ৫৭-তে ফিরে যাওয়ার পর আরেক নট আউট ব্যাটার ওয়াশিংটনকেও ২৬ রানে থামিয়ে দেন অ্যাটকিনসন। দুই সেট ব্যাটার পরপর আউট হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় ইনিংস আর বেশি এগোতে পারেনি। শেষদিকে সিরাজ ও প্রসিধ খাতা খুলতে পারেননি। আকাশ দীপ নট আউট ০ রানে।
আরও পড়ুন-রাজ্যসভায় ঢুকে পড়ল সিআইএসএফ তীব্র প্রতিবাদ তৃণমূল-সহ বিরোধীদের
বেন স্টোকস চোট নিয়ে টেস্টের বাইরে চলে যাওয়ার পর ইংল্যান্ড বোলিংয়ে বেশি ভরসা ছিল অভিজ্ঞ ক্রিস ওকসের উপর। তিনি যখন প্রথমদিন কাঁধে চোট নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, চাপ তৈরি হয়েছিল অস্থায়ী অধিনায়ক অলি পোপের উপর। কিন্তু ৩৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সেই চাপ কমিয়ে দেন গাস অ্যাটকিনসন। উইকেট থেকে মুভমেন্টের সঙ্গে বাউন্স আদায় করতে পেরেছেন দীর্ঘকায় ফাস্ট বোলার। তাতেই ভারতের শেষ চার উইকেট চলে গেল ৬ রানের মধ্যে। আর সেটার জন্য খরচ হয়েছে মোট ১৮ বল। তিন উইকেট নেন টাঙ্গ।
জ্যাক ক্রলিকে (৬৪) ইংল্যান্ড কেন এতদিন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে সেটা এখন বোঝা গেল। বেচারার ব্যাটে রান ছিল না। ফলে আথারটন, বয়কটরা রোজ তাঁকে একহাত নিয়েছেন। বক্তব্য ছিল এই যে প্রায় ষাটটা টেস্ট খেলা হয়ে গেল কিন্তু দেখে কে বুঝবে। ওকে এখনই বাদ দাও। কিন্তু ক্রলি ম্যাঞ্চেস্টার থেকে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। এদিন বেন ডাকেটের (৪৩) মতো ডাকাবুকো ওপেনার আকাশ দীপকে উইকেট দিয়ে যাওয়ার আগে শুধু ক্রলিকেই স্ট্রাইক দিয়ে গেলেন। দুর্ভাগ্য তাঁর, প্রসিধের শর্ট বল জাদেজার মাথা টপকাতে পারেননি। অনেকটা আগের দিনের যশস্বীর স্টাইলে ক্যাচ দিয়ে গেলেন জাদেজাকে। ইংল্যান্ড তখন ১২৯/২।
বুমরা না থাকলে সিরাজকে দায়িত্ব নিতেই হবে। এদিন যেমন লাঞ্চের পর তিনি পরপর ফিরিয়ে দেন পোপ (২২) ও রুটকে (২৯)। তারপর চায়ের আধ ঘণ্টা আগে জেকব বেথেলকেও (৬)। একসময় দুই উইকেটে ১৪২ রান ছিল ইংল্যান্ডের। বেথেল আউট হওয়ার পর স্কোর হল ১৯৫/৫। ইংল্যান্ড বড় লিডের জন্য তাকিয়ে ছিল রুটের দিকে। প্রসিধ তাঁকে শর্ট বলে চাপে রেখেছিলেন। আর ক্রিকেটের একটা গোড়ার তত্ত্ব হল একদিক থেকে চাপ দিলে আরেকদিকে উইকেট পড়ে। প্রসিধ তাও কিছু হাফভলি দিয়েছেন। সিরাজ ওই রাস্তায় হাঁটেননি। নাগাড়ে বল রেখেছেন থ্রি কোয়ার্টার লেংথে।
আরও পড়ুন-৯ সেপ্টেম্বর দেশের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন
এদিন সকালটা যদি ইংল্যান্ড ব্যাটারদের হয় তাহলে লাঞ্চ আর চায়ের মধ্যের দু’ঘণ্টা সিরাজ ও প্রসিধের। এই একটা সেশনে দু’জনে মিলে ৬টি উইকেট নিয়ে গেলেন। সিরাজ অফ দ্য পিচ দ্রুত বল ভিতরে এনে রুট-সহ ইংল্যান্ড ব্যাটারদের মুশকিলে ফেলেছেন। আর প্রসিধ উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে বল কোমরের উপরে তুলেছেন। তাতে বুদ্ধি করে আউট সুইং মিশিয়েছেন। সিরাজের বল ভিতরে এসেছে বলে এলবি বেশি হয়েছে। আর প্রসিধের বল ব্যাট ছুঁয়ে স্লিপে গিয়েছে বারবার। এই দু’জনের বলে ইংল্যান্ড এত চাপে পড়ে যায় যে চায়ে তাদের রান ছিল ২১৫/৭। তখনও পিছিয়ে। কিন্তু একসময় মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড বড় লিড নেবে।
ইংল্যান্ডে যে ক’টা টেস্ট ভেনু আছে তার মধ্যে বেশি রান হয় ওভালে। কিন্তু এবার সবুজ উইকেট আর মেঘলা আকাশ উল্টো কথা বলছে। বৃষ্টি আগের দিন কয়েক দফায় খেলা থামিয়েছে। এদিন বৃষ্টি এল চায়ের কিছু পরে। ইংল্যান্ড তখন ২৪২/৮। হ্যারি ব্রুক (৫৩) একটা দিক আগলে ছিলেন। আরেক দিক দিয়ে স্মিথ (৮), ওভার্টন (০) ও অ্যাটকিনসনরা (১১) ফিরে যান প্রসিধ ও সিরাজের বলে। দু’জনেই শেষপর্যন্ত ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন। ব্রুক আউট হয়ে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২৪৭ রানে। চোটের জন্য ব্যাট করেননি ওকস।