#বয়কট (Boycott) উত্তাল সিনে দুনিয়া। সেই জোয়ারে বলিউডের পাশাপাশি টলিউডও প্রভাবিত। এর জেরে কি মার খাচ্ছে নতুন ছবি? এই প্রশ্নে তোলপাড় সিনেমা পাড়া। কারও মতে, সিনেমাপ্রেমীরা নন, হুজুগেরাই এই ট্রেন্ডে গা ভাসাচ্ছেন। ফলে আমির খানের ছবিও মুখ থুবড়ে পড়ছে। বোনেদের নিয়ে অক্ষয় কুমারের ছবি রাখিতে রিলিজ করেও বাজার ধরতে ব্যর্থ। ধাক্কা লাগছে টলিউডেও। অথচ এই বয়কটের কারণ অনেক সময়ই ছবির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ধর্মীয় ভাবাবেগের জিগির তো আছে, সঙ্গে নায়ক-নায়িকার মন্তব্য এমনকী নায়িকার বাবার ভূমিকা নিয়েও বয়কটের ডাক দিতে দেখা গিয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়।
কী কারণ? বয়কট (Boycott) যাঁরা করছেন, তাঁরা কি সত্যিই জানেন ছবির বিষয়বস্তু কী? কেন বয়কট করছেন ফিল্মটি, সে-বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা আছে কি! আসলে স্যোশাল মিডিয়া এক-এক সময় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় চলে যাচ্ছে। চালনা করছে মতামতকে। কারও কোনও বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত সমস্যাও হ্যাশট্যাগের তকমায় হয়ে যাচ্ছে ‘জনমত’। যার ফল ভুগতে হচ্ছে প্রযোজক-পরিচালক থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের।
আমির খানের নতুন ছবি ‘লাল সিং চড্ডা’। বেশ কয়েক বছর আগের হলিউডের ছবির রিমেক ছবিটি নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই লুক চেঞ্জ করেছিলেন আমির। কিন্তু ছবি রিলিজের আগেই রটে গেল যে-ধর্মের মানুষের ভূমিকায় মিস্টার পারফেকশনিস্ট অভিনয় করেছেন, সেটা নাকি একেবারেই হয়নি। অর্থাৎ আমিরের আচরণ সেই সম্প্রদায়ের মতো হয়নি। ফলে বয়টক-এর ডাক। রিলিজের পরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে শেষে হল থেকে উঠে যায় লাল সিং চাড্ডা। ১৮০ কোটি টাকা খরচ করে বানানো ছবি ২০ দিনের আয় মাত্র ১২৭ কোটি টাকা।
রাখি বন্ধনের সেন্টিমেন্ট উসকে মুক্তি পেয়েছিল অক্ষয়কুমারের ‘রক্ষাবন্ধন’। কিন্তু তার আগেই পণপ্রথাকে সমর্থন করার গুজব নিয়ে ধোয়া হয়। ফলে বয়কট ট্রেন্ডিং। আক্কি বারবার বলেন, আগে ছবি দেখুন, তারপর বিচার করুন। কিন্তু হুজুগ বড় বালাই। যে ছবি ১০০ কোটির ক্লাবে ঢুকবে বলে আশা করা হয়েছিল, প্রথম ৫ দিনে আয় ৪০ কোটিও নয়।
আরও পড়ুন-দলিত নির্যাতনে এগিয়ে ভারত, এটাই কি অচ্ছে দিন!
সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যমৃত্যুর পর বাবা মহেশ ভাটের রোষে নেটিজেনরা তাঁর কন্যা আলিয়া ভাটকে বয়কট (Boycott) করেছিল। সেই সময় আলিয়ার ছবি ‘সড়ক ২’ মুক্তি পায়। এই ছবিকেও বয়কটের ডাক দেওয়া হয়! ছবির বিষয়, মান, গল্প, সংগীত, অভিনয়— সব বাদ দিয়ে একটি উড়ো খবরের উপর ভিত্তি করে বয়কট ট্রেন্ডে লাভের মুখে দেখতে পায়নি ‘সড়ক ২’।
একই জিনিস শুরু হয়েছিল ‘গঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’ মুক্তির আগেও। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ছবি বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। এমনকী, বিভিন্ন জায়গায় সিনেমা হলে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। কিন্তু তারপরেও দর্শক এই ছবিটিকে পছন্দ করেন। বক্স অফিস কালেকশনও ছিল যথেষ্ট ভাল।
তবে, অনেকের মতেই বয়কট বলিউড ট্রেন্ডের প্রভাব কখনও সিনেমার উপর পড়ে না। বয়কট ট্রেন্ডের জন্য ছবির ব্যবসায় প্রভাব পড়ছে না। ছবির মানের জন্যই বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে না।
সেই কথাই প্রমাণ হয় রণালিয়ার ছবি ব্রহ্মাস্ত্রর ক্ষেত্রে। বিয়ের পর এই ছবি মুক্তি পায়। সেই ছবি রিলিজের আগেও সেই #বয়কট ট্রেন্ড। প্রথমে আলিয়া ভাটের বেফাঁস মন্তব্যের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় #বয়কট ব্রহ্মাস্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন নেটিজেনরা। এরপর রণবীর। গোমাংস নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে পুরনো সাক্ষাৎকারের জেরে আরও একবার বয়কটের দাবি তোলা হয়। কিন্তু অয়ন মুখোপাধ্যায়ের এই ছবি বক্স অফিস সাফল্য খুবই ভাল। মুক্তির আগেই বহু কোটির ব্যবসা করে তারা। মুক্তির পরে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রায় ৩০০ কোটির ব্যবসা করে তারা। সারা বিশ্বের নিরিখে সেই অঙ্কটা ৪০০ কোটির। প্রথম দিনেই বিশ্বব্যাপী ৭৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে রণবীর কাপুর-আলিয়া ভাটের অভিনীত এই ছবি।
আরব সাগরের তীর থেকে বয়কট ট্রেন্ড আছড়ে পড়েছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতেও। রাজ চক্রবর্তীর ‘ধর্মযুদ্ধ’ আর ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর ‘বিসমিল্লা’-র সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। দুই ছবির ক্ষেত্রেই ধর্মাবেগে আঘাতের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ধর্মযুদ্ধ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়। সামান্য একটা ডায়লগ বা দৃশ্য— ছবি রিলিজের আগেই সেটা ভাইরাল। আর সেটা ঘিরেই সরগরম স্যোশাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়াতে বয়কট ধর্মযুদ্ধ-বার্তা শেয়ার করতে দেখা গিয়েছে নেটিজেনদের। ‘ধর্মযুদ্ধ’ নিয়ে মুখ খুলেছেন স্বয়ং বুম্বাদা। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, সত্যিই মনে রাখার মতো একটা ছবি তৈরি হয়েছে। রাজ চক্রবর্তীর শিল্পীদের অভিনয়ের প্রশংসা করে একটি ট্যুইট পর্যন্ত করেন তিনি। অথচ সম্পূর্ণ মানবিকতার গল্প বলে রাজ চক্রবর্তীর এই ছবি। শুধু প্রসেজিৎ নয়, সিনে সমালোচকরাও এই ছবির প্রশংসা করেন। কিন্তু তারপরেও বিতর্ক আর বয়টক ট্রেন্ডিং কমেনি। অনেক হলে নাকি রিলিজই করা যায়নি ‘ধর্মযুদ্ধ’।
অনেকেরই অভিযোগ এই বয়কট (Boycott) ট্রেন্ডকে কাজে লাগিয়ে কিছু মানুষ অর্থ উপার্জন করছেন। অর্থাৎ এই হুজুগ তোলা। তারপর সেই থেকে বিভিন্ন ভাবে টাকা তোলা। কখনও স্যোশাল মিডিয়ার ট্রেন্ডিংকে কাজে লাগিয়ে, আবার কখনও অন্য ঘুরপথে। ফলে বয়কট ট্রেন্ডিংই শুধুমাত্র ছবির মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ নয়, ছবির দুর্বলতাও অনেকাংশে দায়ী— বলছেন সিনে সমালোচকরা। তবে, যাঁরা এই বয়কট করছেন তাঁরা সিনেমা-বোদ্ধা তো ননই, সিনে-প্রেমীও নন এ-কথা স্পষ্ট। এটা একেবারেই ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।