প্রতিবেদন : রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে আনা যায় কি না এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর এই মন্তব্যের পরই শনিবার এনিয়ে উত্তরবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে কিছু অবান্তর ও হাস্যকর কথা বলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সেই সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মূল সমস্যাটি এড়িয়ে যান তিনি। এরপরই রবিবার সন্ধ্যায় দমদমে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্যপালকে পাল্টা দেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, মাননীয় রাজ্যপাল একাধিক অর্ধসত্য বলেছেন। যা মিথ্যার থেকেও ভয়ংকর। এরপর একে একে যুক্তি দিয়ে রাজ্যপালের করা অভিযোগগুলির জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী।
আরও পড়ুন-বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিলেন কৃষিমন্ত্রী, কৃষকদের মারছে কেন্দ্র, বাঁচাচ্ছে রাজ্য
প্রসঙ্গ : উপাচার্য নিয়োগ ধনকড় বলেন, আইন বলছে, রাজ্যপালই হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাঁকে না জানিয়ে কি উপাচার্য নিয়োগ করা যায়? দেশের কোথাও এমন কোনও আইন নেই বলেই দাবি ধনকড়ের।
জবাবে ব্রাত্য বসু বলেন, রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পুনর্নিয়োগ করার যে নোটিফিকেশন জারি করছে, সেখানে পরিষ্কার বলা আছে, তাঁদের এই নিয়োগ পুরোটাই অস্থায়ীভাবে করা হচ্ছে। কাউকে ৬ মাস, কাউকে ১ বছর বা কাউকে আরও বেশি সময়ের জন্য করা হচ্ছে। ফলে এই নিয়ে রাজ্যপাল যা বলছেন তা পুরোটাই অর্ধসত্য।
প্রসঙ্গ : রাজ্যপালকে না জানিয়ে নিয়োগ ধনকড় বলেছেন, তাঁকে না জানিয়ে এখনও পর্যন্ত যতগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের নিয়োগ করা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে, না হলে তাঁকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।
জবাবে ব্রাত্য বসু রাজ্যপালের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন স্থায়ীভাবে কোনও উপাচার্যকেই রাজ্য নিয়োগ করেনি। ফলে তাঁকে না জানিয়ে নিয়োগ করার অভিযোগও ধোপে টেকে না।
আরও পড়ুন-জিএসটি : ট্যুইটে সরব অমিত মিত্র
প্রসঙ্গ : স্থায়ী উপাচার্য এই বিষয়ে যথারীতি রাজ্য সরকারের কোর্টে বল ঠেলেছেন রাজ্যপাল।
জবাবে ব্রাত্য বসু সাফ জানিয়ে দেন কেন রাজ্য সরকার চাইলেও স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা যাচ্ছে না। এরজন্য তিনি সরাসরিই রাজ্যপালকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, নিয়মমাফিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হলে প্রয়োজন সার্চ কমিটি। এই সার্চ কমিটিই স্থায়ী উপাচার্যের নাম সুপারিশ করে। তিনজনকে নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়। রাজ্য সরকারের একজন প্রতিনিধি, রাজ্যপালের এক প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিনিধি থাকেন কমিটিতে।
কিন্তু এর আগে একাধিকবার দেখা গিয়েছে দুই প্রতিনিধি হাজির থাকলেও বৈঠকে রাজ্যপালের প্রতিনিধিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এভাবেই ধনকড় বারবার স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন৷
প্রসঙ্গ : মুখ্যমন্ত্রী শনিবার উত্তরবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে স্বভাবসিদ্ধভাবে ধনকড় এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকেও টেনে আনেন। রাজ্যের জনগণের ভোটে তিন তিনবার নির্বাচিত একজন মুখ্যমন্ত্রীকে টেনে বিতর্ক তৈরি করা নিয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষামন্ত্রী।
আরও পড়ুন-দলের ধমক খেয়ে ডিগবাজি
জবাবে ব্রাত্য বসু বলেন, মাননীয় রাজ্যপাল আপনি ঘন ঘন শিস দেওয়া ছেড়ে, ট্যুইট করা ছেড়ে আসুন রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। কারণ, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন নির্বাচিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী। মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ আমাদেরই চাইছেন৷ এটা মাননীয় রাজ্যপালকে বুঝতে হবে। কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে কে উপাচার্য হবেন, কে ডিন হবেন, কে নমিনি হবেন, রাজ্যের জনগণ চাইছেন এগুলি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী করুন অথবা তাঁর নেতৃত্বে রাজ্য শিক্ষা দফতর করুক, সেটা ওনাকে বুঝতে হবে। আমরা ওনার সঙ্গে আলোচনা করেই এই কাজগুলো করতে চাই। আমরা একবারও বলছি না ওনার সঙ্গে আলোচনা করব না। কিন্তু উনি তা না করে যদি ভাবেন তালিবানি ফতোয়া জারি করবেন, আর সবাইকে তা মানতে হবে, সেটা কিন্তু কোনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। এই বক্তব্যের পাশাপাশি এদিন আরও একবার শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যপালকে তাঁর সাংবিধানিক শিক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং বলেন তিনি যেন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিয়মকানুনগুলি আরও ভাল করে পড়ে নেন।