প্রতিবেদন: ১৭৬৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ভারত থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপনিবেশিক সম্পদ শোষণের পরিমাণ ছিল ৬৪.৮২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সম্পদের ৩৩.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্রিটেনের ধনীতম ১০ শতাংশ মানুষের হাতে চলে যায়। এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে ‘অক্সফাম’-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে। এই তথ্যেই প্রকাশ, ব্রিটেনের একাংশের ধনীরা কীভাবে এদেশের অসংখ্য দুর্মূল্য সম্পদ কুক্ষিগত করেছে!
আরও পড়ুন-এক দেশ এক ভোট ঘুরপথে গোপনে প্রচার বিজেপির
অক্সফাম হল একটি ব্রিটিশ কনফেডারেশন, যা ২১টি স্বাধীন বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত। এই সংস্থাটি মূলত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দারিদ্র দূরীকরণে কাজ করে। ১৯৪২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। “টেকারস, নট মেকার্স,” শীর্ষক প্রতিবেদনে অক্সফাম উল্লেখ করেছে যে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার সময় ধনী দাস-মালিকদের জন্য সরকারের ক্ষতিপূরণ প্রদানের নাম করে এসেছে বেশ কিছু সম্পদ এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে উল্লিখিত সম্পদের ৫২ শতাংশ ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের হাতে গিয়েছে এবং এরপরে ক্রমান্বয়ে ৩২ শতাংশ সম্পদ ব্রিটেনের উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্জন করেছে। অক্সফাম আরও উল্লেখ করেছে, উপনিবেশবাদ ভারতীয় শিল্প উৎপাদন ধ্বংস করার জন্য দায়ী ছিল। কারণ কঠোর সুরক্ষামূলক নীতিমালা এশিয়ান টেক্সটাইলকে বাজারে প্রতিযোগিতা করতে বাধা দেয়। ১৭৫০ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকেই আন্তর্জাতিক শিল্প উৎপাদনের ২৫ শতাংশ আসত, যা ১৯০০ সালের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশে নেমে আসে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অক্সফাম ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থাকে ‘মাদক সরবরাহকারী’ হিসাবে সমালোচনা করেছে, কারণ এটি উপনিবেশগুলির উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য আফিম বাণিজ্য ব্যবহার করেছিল। অক্সফামে অভিযোগ করা হয়েছে, ব্রিটিশরা ভারতের পূর্বাঞ্চলের দারিদ্র অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্যাপক পরিসরে আফিম চাষ করিয়েছিল এবং এটি চিনে রফতানি করেছিল, যা শেষপর্যন্ত আফিম যুদ্ধের কারণ হয় এবং বৈষম্য আরও গভীর করে তোলে।
আরও পড়ুন-প্র্যাকটিক্যালের নম্বর জমা দেওয়ার সময় দিল সংসদ
অক্সফামের প্রতিবেদনটি বিভিন্ন গবেষণাপত্র এবং একাধিক সূত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছে, আধুনিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলি এই ঔপনিবেশিকতার ফল। এছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ঔপনিবেশিক অপরাধ, শোষণমূলক কার্যক্রম তখন থেকেই ইতিহাসের গতিপথ বেয়ে আজকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলির মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে। অক্সফাম উল্লেখ করেছে, এই ঔপনিবেশিক কাঠামোই বৈষম্য এবং বর্ণবাদের সৃষ্টি করেছিল। এছাড়া এই সংস্থাগুলি এখনও গ্লোবাল সাউথ থেকে সম্পদ শোষণ করে চলেছে, যা প্রধানত গ্লোবাল নর্থ-এর ধনীতম ব্যক্তিদের সমৃদ্ধ করছে এবং এই উপমহাদেশে সামাজিক বৈষম্য বাড়াচ্ছে।