প্রতিবেদন : ভয়ঙ্কর, মারাত্মক, জঘন্য, ন্যক্কারজনক! এইরকম কোনও বিশেষণই এই ঘটনাকে বিশেষিত করার জন্য উপযুক্ত নয়। জ্যোতি মালহোত্রার ঘটনা তো কোন ছার, মোদিরাজ্যের সরকারি কর্মী দেশদ্রোহিতাকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেল, তা সমস্ত বিশেষণেরই ঊর্ধ্বে। আর এই ঘটনা যদি বাংলায় ঘটত, তখন কী বলতেন কেন্দ্রের সরকারে থাকা দেশরক্ষার কান্ডারিরা! সেই প্রশ্নই এখন উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিজের রাজ্য গুজরাতের একজন সরকারি কর্মী পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। আমাদের দেশের বীর বায়ুসেনা ও বিএসএফের সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে জাতীয় নিরাপত্তা বিপর্যয় বলে ব্যাখ্যা করেছে। তৃণমূলের সাফ কথা, এই কাণ্ড জাতীয় নিরাপত্তা বিপর্যয় নয় তো কী? দেখবেন, এনআইএ এই ঘটনায় কোনওপ্রকার সক্রিয়তা দেখাবে না। কারণ গুজরাত হল বিজেপিশাসিত ডবল ইঞ্জিন রাজ্য, যেখানে বিশ্বাসঘাতকরাও নিশ্চিন্তে দিন কাটায়। তৃণমূলের প্রশ্ন, যদি এই ঘটনা বাংলায় ঘটত, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি রাতারাতি হানা দিত। কিন্তু যখন ঘটনা ঘটে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘরে? তখন শুধু নীরবতা বজায় থাকে।
আরও পড়ুন-দক্ষিণ কোরিয়াতেও শান্তি-নিরাপত্তার বার্তা
সম্প্রতি পাকিস্তানের স্পাই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে মোদিরাজ্যের নাম। বিএসএফ ও বায়ুসেনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচার করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে গুজরাতের সরকারি কর্মী পাক গুপ্তচর সহদেব সিং গোহিল! সম্প্রতি পাক-যোগে বিজেপিশাসিত হরিয়ানার ইউটিউবার, উত্তরপ্রদেশের স্মাগলার পুলিশের জলে ধরা পড়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের স্পাই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার অভিযোগে গুজরাতের সরকারি কর্মী সহদেব সিং গোহিল গ্রেফতার হল। কচ্ছের লাখপত ব্লকের বাসিন্দা সহদেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি করা এবং ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগুলির তথ্য, ভিডিও পাচার করার। সন্দেহ হানিট্র্যাপে পড়ে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হ্যান্ডলারকে নিয়ম করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বায়ুসেনার বিভিন্ন তথ্য, ছবি ও ভিডিও পাঠাচ্ছিল সহদেব।
গুজরাতের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী সহদেব কচ্ছ সীমান্ত এলাকায় নিযুক্ত ছিল। ফলে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ কিংবা সামরিক বিভাগের সক্রিয়তা ও নতুন পরিকাঠামো নির্মাণের ঘটনা তার নখদর্পণে ছিল। পাকিস্তানের স্পাই এজেন্সি আইএসআই এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন ২০২৩ সালের জুন মাসে লাখপত ব্লকের মাড় গ্রামে অভিযুক্তের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে অদিতি নামের পাক চর। সেই হানি ট্র্যাপে পড়েই সহদেব তথ্য পাচার করেছে। অদিতি পাক চর জেনেও সহদেব ভারতীয় প্রতিরক্ষার গোপন তথ্য পাচার করেছে। বিনিময়ে টাকাও নিয়েছে সে। কী কী গোপন তথ্য সে পাচার করেছে, তা জানতে জেরা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন-অধ্যক্ষদের নয়া সংগঠন ওয়েবকুপায় এবার নতুন আঙ্গিকে কাজ : শিক্ষামন্ত্রী
পুলিশ জানতে পেরেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সহদেব নতুন মোবাইলে সিম কার্ড নেওয়ার সময় আধারের ওটিপি শেয়ার করে অদিতিকে। তারপর থেকে ওই মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ লিঙ্ক আইএসআই হ্যান্ডলারের মোবাইলেও সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে আইএসআই ভারতে থাকা তাদের স্পাইদের হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি নিজেদের মোবাইল থেকে অপারেট করতে সক্ষম হয়। সবথেকে বিপজ্জনক এই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। অপারেশন সিঁদুরের পরও ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য ও পরিকাঠামো নির্মাণের ছবি ভিডিও পাঠানোর কাজ চলছিল। তা করতে গিয়েই ধরা পড়ে সহদেব। এখন সবথেকে উদ্বেগের বিষয়, ৩০০০ কিলোমিটারও বেশি ভারতের পাক সীমান্ত জুড়ে আর কত পাক চর সক্রিয় রয়েছে তা জানা।