প্রতিবেদন : ঘুমন্ত অবস্থায় দাহ্য পদার্থ ছুঁড়ে আগুন লাগিয়ে এক পরিবারের ৩ সদস্যকে হত্যা করার ঘটনায় দুই সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পরকীয়ার জেরেই এই পরিকল্পিত খুন। এই ঘটনার পর থেকেই মৃতর পরিবারের সাথে প্রথম থেকেই যোগাযোগ রেখে চলেছেন বীরভূম জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। তাঁর শ্বশুরবাড়িও রজতপুরেই। তিনি জানান, পরকীয়ার জেরেই এই তিন খুন। ঘটনাস্থলে মা ও শিশু অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। গৃহকর্তা আবদুল আলিম বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে চাঁদাইপুরে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত শনিবার ভোররাতে মারা যান। তাঁকে নিয়ে একই পরিবারের মোট তিনজন খুন হয়।
আরও পড়ুন-এক বছরে ২০ জনের মৃত্যু, কেন্দ্রের অপরিকল্পিত প্রকল্পের জের, ফের অগ্নিবীরের আত্মহত্যা
জানা গিয়েছে, আবদুল আলিম ওরফে তোতাভাই এবং তাঁর স্ত্রী রূপা বিবি জানতেন, তাঁদের পরিবারের ভাইয়ের স্ত্রী স্মৃতিবিবির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল গ্রামের হাতুড়ে চন্দন ওরফে সফিকুল ইসলামের। এই দুজনের ঘনিষ্ঠ মহূর্তের দৃশ্য দেখে ফেলেছিল ভাশুর।
তারপর এই ঘটনা ঘটিয়েছে এই অভিযুক্ত দুজনে বলে প্রতিবেশীদের দাবি। শনিবার সকালে শেখ আবদুল আলিম মৃত্যুর খবর গ্রামে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের দাবি, মৃত আবদুল আলিমের ভাই রতন শেখের স্ত্রী স্মৃতিবিবির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিল পাশের গ্রামের এক হাতুড়ে ডাক্তার চন্দন ওরফে শেখ সফিকুল ইসলাম। আর এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারে চলত বিবাদ। হাতুড়ে ডাক্তারের বাড়ি সুপুর বানপাড়া এলাকায়। ইতিমধ্যেই বোলপুর থানার পুলিশ হাতুড়ে সফিকুল ইসলাম ও মৃত আবদুল আলিমের ভাই রতন শেখের স্ত্রী স্মৃতিবিবিকে আটক করে। গ্রামবাসীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই হাতুড়ে সফিকুল ও স্মৃতিবিবি সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। তাদের পরিবার জেনে ফেলায় পুরো পরিবারকে আগুন লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। দুজনের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীরা। ইতিমধ্যেই গ্রামের শোকের ছায়া। মৃত আবদুল আলিমের দেহ ময়নাতদন্তের পর গ্রামে নিয়ে আসা হবে বলেই জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন-রাজ্যকে নিটের দায়িত্ব দিতে ফের সওয়াল করলেন ব্রাত্য
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে পিকনিকের পর খাওয়াদাওয়া করে একতলা ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন শেখ আবদুল আলিম (৪৫), স্ত্রী রূপা বিবি (৩৭) ও শিশুপুত্র ছোট ছেলে আয়ান শেখ (৪)। খোলা ছিল ঘরের জানালা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অভিযুক্তরা এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। জেলাপুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যােয় জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে।
ঘটনাস্থলে মোতায়েন আছে পুলিশ। বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং জেলা পুলিশ সুপার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। শনিবার জেলা পুলিশ সুপার এবং বোলপুর মহকুমা শাসক রজতপুর যান এবং পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন। পাশাপাশি, এদিন বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা এবং সাংসদ অসিত মাল পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিতে যান।