অলোক সরকার: দু’বলে দুই উইকেট। জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল হ্যাটট্রিক বল! এইমাত্র বরুণের দুই বলে ফিরেছেন অশ্বিন (৮) আর হেটমেয়ার (০)। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় কাঁপছে ইডেন। ভাজ্জির পর নাকি হ্যাটট্রিক দেখেনি ইডেন। হবে? হয়নি। কিন্তু প্রায় মধ্যরাতে ইডেন দেখল জস বাটলারকে। ভগ্নস্তূপের মধ্যে এক রুদ্ধশ্বাস লড়াই। উল্টোদিকে টেল এন্ডার আবেশ। তাঁকে আগলে ম্যাচ বের করে নিয়ে গেলেন একাই। রাজস্থান জিতল ২ উইকেটে। শেষ বলে।
আরও পড়ুন-তেতো বড়ি গিলতে হচ্ছে : শ্রেয়স
এক-দুইয়ের লড়াই ছিল এটা। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছিল না। প্রথম বল থেকে দাদাগিরি নারিনের। উন্মত্ত কালবৈশাখীর মেজাজে ছিলেন তিনি। একের পর এক বল উড়িয়ে দিলেন গ্যালারিতে। পরে বল হাতে বরুণ, হর্ষিতের কামাল। নারিনও। কিন্তু শেষবেলায় পাল্টা দাদাগিরি বাটলারের। শেষমেশ ২২৪/৮ রাজস্থান। তারা শুধু দুই উইকেটে জেতেনি, সাত ম্যাচের ছ’টিতে জিতে নিজেদের শীর্ষস্থান আরও দৃঢ় করে ফেলল। তাদের ১২ পয়েন্ট।
পাওয়ার প্লে-র শেষে এগিয়ে ছিল রাজস্থানই। ৬ ওভারে ৭৬/২। কেকেআর ছিল ৫৬/১। এই একটা সময় গণপিটুনি খেলেন কেকেআর বোলাররা। সবার আগে বলতে হয় সুপার সাব বৈভব অরোরার নাম। তিনি ততক্ষণে ৩ ওভারে ৪৫ দিয়ে ফেলেছেন। একটা উইকেট। আর মিচেল স্টার্কের প্রথম স্পেল দাঁড়িয়েছিল ২-০-২৪-০।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
নাইটরা এরমধ্যেই দুটো কাজ সেরে ফেলেন। যশস্বী জয়সওয়াল (১৯) আর সঞ্জু স্যামসনকে (১২) তুলে নেন বৈভব ও হর্ষিত রানা। যশস্বীর ব্যাটে এই আইপিএলে তেমন রান নেই। কিন্তু সঞ্জুর উইকেট আরও দামি। ভারতের জার্সিতে রান না পান, পিঙ্ক কালারে তিনি চিরকালীন সফল। বড় রান তাড়া করতে গেলে সঞ্জুকে রান করতে হত। সেটা হয়নি। হর্ষিত এরপর আর একটা কাজ করে ফেললেন। রিয়ানকে (৩৪) ফেরালেন।
বাটলার আর রিয়ান ৫০ রান তুলে ফেলেছিলেন। খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন তাঁরা। বিশেষ করে রিয়ান। এবারের আইপিএলে পরিপূর্ণ ব্যাটার হিসাবে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কিন্তু নিজের রানকে বেশিদূর টেনে নিয়ে যেতে পারলেন না। তারপর আরও এক ধাক্কা জুরেল (২) ফেরত যাওয়ায়। তিনি নারিনের শিকার। ১০০ রানে চার উইকেট হারিয়ে রাজস্থান তখন বেশ বেকায়দায়। পরে পাওয়েল ১৩ বলে ২৬ করে গেলেন। বাকিটা এক বাটলার কাহিনি।
আরও পড়ুন-পেনাল্টি নিয়ে চেলসি ফুটবলারদের ঝামেলা
নারিনের সেঞ্চুরির সময় উল্টোদিকে ছিলেন আন্দ্রে রাসেল। দুই ক্যারিবীয় তারকা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলেন। ৪৯ বলে সেঞ্চুরি। আইপিএলে এটাই প্রথম। চাহালকে ছয় এবং চারে একশোতে পৌঁছেই একটা লাফ নারিনের। এমনিতে খুব বেশি উচ্ছ্বাস কখনও দেখান না মিস্ট্রি স্পিনার। এদিন দেখালেন। তবে ৫৬ বলে ১০৯ রান করে যখন ফিরে এলেন, তখন আর তাপ উত্তাপ নেই। গ্যালারি হাততালি দিচ্ছে। শাহরুখও তাই। তিনি টুক করে ড্রেসিংরুমে ঢুকে গেলেন।
দ্বিতীয় বলে ফিল সল্টের ক্যাচ ফেলেছিলেন রিয়ান পরাগ। খুব দামি ক্যাচ হতে পারত। ইংলিশ ব্যাটার বিধ্বংসী মুডে আছেন। কিন্তু আবেশ তাঁকে ফলো থ্রু-তে ফেরত পাঠালেন। রাজস্থান রয়্যালসের এই বোলার এক অ্যাকশনে স্লোয়ার দিতে পারেন। এটা সেরকম কিছু ছিল। সল্ট শটে কমিটেড হয়ে গিয়েছিলেন। আবেশ বাঁদিকে ঝাপিয়ে ক্যাচ তুলে নেন। সল্ট তখন ১০।
আগের দিনের মতো ঠিক চার নম্বর ওভারে মাঠে ঢুকলেন বাদশা। এটা তুক কি না কে জানে! তবে ক্রিকেটে এসব চলে। পয়লা বৈশাখের ম্যাচে এসেছিলেন। আর ফেরেননি মুম্বইয়ে। এদিন যখন মাঠে এলেন, নারিন পিঞ্চ হিট শুরু করে দিয়েছেন। নাইটদের সাদা টি শার্টে শাহরুখ কেকেআর ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াতেই আরও এক ছক্কা।
আরও পড়ুন-১৯–এ উনিশের বদলা
পাওয়ার প্লে-র শেষে কেকেআর ছিল ৫৬/১। ১০ ওভারের পর সেটা দাঁড়াল ১০০/১। নারিন ততক্ষণে পঞ্চাশ পার করে ফেলেছেন। কিন্তু যেটা বলার, অঙ্গকৃষ রাজবংশীও (৩০) মঙ্গলবার রান পেয়ে গেলেন। অভিষেক ম্যাচে রান পেয়েছিলেন। মাঝে সামান্য অফ ফর্ম। এখানে ১৮ বলের ইনিংসে ছোট্ট ক্যামিও করে গিয়েছেন। অঙ্গকৃষকে ফেরালেন কুলদীপ সেন। কেকেআর তখন ১০৬।
ইডেনের উইকেটে যেটুকু জুস আছে সেটা প্রথমে যারা বল করে তারাই পায়। পরে উইকেট আরও স্লো হয়ে যায়। ফলে প্রত্যাশিতভাবেই সঞ্জু স্যামসন টসে জিতে নাইটদের ব্যাট করতে দিলেন। কিন্তু নারিন ঝড়ে বোল্ট, কুলদীপরা দুমদাম উড়ে গেলেন। নারিনের একটা ব্যাপার হল সোজা ব্যাটে খেলেন। যে উইকেটে বল কিছু করে না, সেখানে তাঁর রান পাওয়ার সুযোগ আছে। মঙ্গলবার ঠিক তাই হল। বেশি ফুট ওয়ার্ক ব্যবহার না করেও বড় শট খেলে গেলেন।
নাইটরা বড় রান করলেও চাপ থেকে গেল। মিডল ওভারে শ্রেয়স (১১), রাসেল (১৩) রান পাননি। পরে ভেঙ্কটেশও (৮) তাই। রিঙ্কু শেষপর্যন্ত নট আউট থেকে গেলেন ২০ রানে। বিশ্বকাপ দল নির্বাচনের আগে তাঁর ব্যাটে রান দরকার ছিল। কিন্তু রিঙ্কু বল পাচ্ছেন না। তবে তাঁর জন্যই শেষদিকে কিছু রান হল। কেকেআর ২২৩ পর্যন্ত গেল।