প্রতিবেদন : সিবিআই আসলে খাঁচাবন্দি তোতাপাখি। এই ধারণাই তৈরি হয়েছে আমজনতার মনে। এই ধারণা বদলে নিজেদের মুক্ত হিসেবে প্রমাণ করতে হবে সিবিআইকে। শুক্রবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিনের আবেদন শুনানির সময়ে এই মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত। এদিন প্রকৃত অর্থেই সিবিআইকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট। ১১ বছর পরে আদালতে আবার সেই তোতাপাখি-কটাক্ষ শুনতে হল তাদের। দীর্ঘ ছয় মাস পর আবগারি নীতি মামলায় এদিন জামিন পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির শীর্ষনেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। ৫ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে তাঁরা রায় স্থগিত রেখেছিলেন। আবগারি নীতি-মামলায় ঘুষ নেওয়া ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ২১ মার্চ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছিল। একই অভিযোগে ২৬ জুন তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ১২ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ইডির করা মামলায় কেজরিওয়ালকে জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মুক্তি পাননি ওই একই অভিযোগে জুন মাসে সিবিআই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করায়। শুক্রবার দুই বিচারপতি আলাদা আলাদাভাবে তাঁদের রায় দিলেও জামিনে মুক্তির বিষয়ে দুজনেই একমত হন।
আরও পড়ুন-অরাজনৈতিক মুখোশের আড়ালে রাজনীতির কারবারিদের কারসাজি
জামিন দেওয়া হলেও বিচারপতিরা বলেছেন, কেজরিওয়াল দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাকসেনার অনুমতি ছাড়া সচিবালয় বা মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে যেতে পারবেন না। সরকারি ফাইলে সই করতে পারবেন না।
মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না। কোনও সাক্ষীর সঙ্গে কথাও বলতে পারবেন না। রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি ভুঁইয়া সিবিআইয়ের কড়া সমালোচনা করে বলেন, দেশের এক অগ্রগণ্য তদন্তকারী সংস্থা এটা। দেশের স্বার্থেই তাদের সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকা দরকার। মানুষ যেন মনে করে সিবিআইয়ের তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। সেই ধারণা সৃষ্টির দায়িত্ব তাদেরই। বিচারপতি বলেন, জীবনে ধারণাটাই সব। একই অভিযোগে সিবিআইয়ের গ্রেফতারি মোটিই সমর্থনযোগ্য নয়। জামিন পাওয়া স্বাভাবিক, জেলে থাকা অস্বাভাবিক। বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া বলেন, ইডি মামলায় মুক্তি পাওয়ার ঠিক আগে সিবিআইয়ের গ্রেফতারির প্রয়োজন কী ছিল তা তাঁর বোধগম্য নয়। কারণ, দীর্ঘ ২২ মাস সিবিআই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন মনে করেনি। করল নিম্ন আদালত জামিন দিতে চলেছে বোঝার পর! ইডির পর সিবিআইয়ের গ্রেপ্তারিকে কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি ‘ইনসিওরেন্স অ্যারেস্ট’ বলে অভিহিত করেছিলেন। সিবিআইয়ের সেই আচরণের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্টে সিংভি বলেছিলেন, ওটা করা হয়েছে যাতে বিধানসভার ভোটের আগে কেজরিওয়াল জেলে থাকতে পারেন ও তাঁর দল অসুবিধের মধ্যে পড়ে। আবগারি নীতি মামলায় এ যাবৎ যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁদের প্রত্যেকেই জামিন পেয়েছেন। উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া, আপের রাজ্যসভা সদস্য সঞ্জয় সিং এবং তেলেঙ্গানার বিআরএস নেত্রী কে কবিতা। ইডি ও সিবিআই তাঁদের গ্রেফতার করেছিল ওই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া ব্যক্তিদের বয়ানের ভিত্তিতে। রাজসাক্ষীরা ওই মামলাতেই আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ইডি ও সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০২১ সালে দিল্লি সরকারের নতুন আবগারি নীতি রূপায়ণের মধ্য দিয়ে কেজরিওয়ালের দল ১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিল। কিন্তু ঘুষের কোনও টাকা তদন্তকারী সংস্থা উদ্ধার করতে পারেনি। অকাট্য প্রমাণও হাজির করতে পারেনি। অভিযুক্ত ও ধৃত কারও বাড়ি থেকেও টাকা পায়নি। ইডি ও সিবিআইয়ের দাবি, সেই টাকা দলের নেতারা গোয়া বিধানসভা ভোটে খরচ করেছিলেন। লোকসভা ভোটে প্রচারের জন্য কেজরিওয়ালকে শর্তাধীনে সাময়িক জামিন দেওয়া হয়েছিল। ভোটের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এবার পুরোপুরি জামিন পেলেন হরিয়ানা বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে।