নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি: বন্যাতেও (Flood) এবার সন্ত্রাসের ধারা! ‘ম্যানমেড ফ্লাড’-এর প্রমাণ মিললে সন্ত্রাসবাদী কাজ হিসাবেই তা বিবেচিত হবে। মোদি সরকারের নতুন দন্ডবিধিতে এবার এই সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রশ্ন হল, ম্যানমেড ফ্লাড হয়েছে তা প্রমাণ হবে কীভাবে? কোনও সরকার যে রাজনৈতিক বিরোধীদের ক্ষেত্রে এই ধারার অপব্যবহার করবে না, তার নিশ্চয়তাই বা কোথায়?
কী আছে প্রস্তাবিত বিলে? ভারতীয় দণ্ডবিধি বিলে বলা হয়েছে, এবার থেকে বন্যার (Flood) কারণও সন্ত্রাসমূলক অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ বন্যার পিছনে হাত থাকলে বা কোনওভাবে বন্যার কারণ বলে প্রমাণ করা গেলে তা সন্ত্রাসবাদী অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে বিল নিয়ে তিনদিনের আলোচনা চালায় স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সাধারণ আইনের মধ্যেই সন্ত্রাসবাদী আইনকে ভিন্ন অপরাধ হিসেবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে ইউএপিএ ধারাকে নতুন মোড়কে বিশেষ আইন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ হওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৮৬০, ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) ১৯৭৩ এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ কে প্রত্যাহার করে তিনটি নতুন বিল এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাদল অধিবেশনে পেশ করা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিলের ১১১ (৬) (এ) ধারায় বলা হয়েছে, একজন ‘সন্ত্রাসী’ বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি ‘অস্ত্র, বিস্ফোরক, দাহ্য,পরমাণু, তেজস্ক্রিয় জাতীয় বস্তু বহন করেন, সরবরাহ করেন বা পারমাণবিক, রেডিওলজিক্যাল বা অন্যান্য বিপজ্জনক পদার্থ নির্গত করেন, অথবা আগুন, বন্যা বা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেন।’
আরও পড়ুন- সমস্তিপুর: কোর্ট-চত্বরে বিচারাধীন ২ বন্দিকে গুলি
সন্ত্রাসের মামলার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী এমএস খান সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত বিলে সন্ত্রাসবাদ এবং সংগঠিত অপরাধের ধারায় ইউএপিএ এবং মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট (এমসিওসিএ ) এর অধীনে উপলব্ধ মিথ্যা প্রভাবের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত সুরক্ষার অভাব রয়েছে। যদিও এই আইনের অপব্যবহার রুখতে (যেমন ইউএপিএ বা মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইমের আওতায় বিধি রয়েছে) তেমন কোনও বিধি নতুন বিলে রাখা হয়নি। অর্থাৎ এই বিধির অপব্যবহার বা অপপ্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইউএপিএ আইনের সমালোচনা হয়েছে দেশজুড়ে। সুপ্রিম কোর্টও দেশদ্রোহ আইনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ৪,৬৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে শাস্তি দেওয়ার হার মাত্র ৩ শতাংশ। এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও সুপ্রিম কোর্টে মামলা রুজু হয়। সন্ত্রাসবাদী আইনের বিধি যুক্ত না করা নিয়ে আইনজীবী এবং ওয়াকিবহাল মহলের তরফে বলা হয়েছে, নতুন বিলে সমস্তরকমের রক্ষাকবচ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নতুন মোড়কে দেশদ্রোহ আইনকেই রেখে দেওয়া হয়েছে। ফলে, যে কোনও ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ। অর্থাৎ নতুন বিলে অপব্যবহারের আশঙ্কা আরও বাড়ল। বন্যাতেও তাই সন্ত্রাসবাদের ধারা।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অসমের শিলচরে ব্যাপক বন্যায় ১২০ জনের মৃত্যু হয়। সেই বন্যাকে মানুষের দ্বারা তৈরি করা বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। বন্যার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ তুলে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুরো ঘটনাকে ‘ফ্লাড জিহাদ’ বলেও চিহ্নিত করা হয়।