সুদেষ্ণা ঘোষাল, নয়াদিল্লি: প্রতিবেদন : শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাঁকে জেলে বন্দি রাখা হয়েছে, গরুপাচার কাণ্ডের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই— অনুব্রত মণ্ডলের হয়ে দিল্লির বিভিন্ন আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে বারবার এই দাবিই করেছিলেন তাঁর আইনজীবীরা৷ সেই সময়ে কোনও আদালতেই গ্রাহ্য হয়নি এই দলিল৷ শারীরিক ভাবে ভয়ানক অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও ২ বছরের বেশি সময় তাঁকে জেলে বন্দি থাকতে হয়েছে৷ অবশেষে তিনি জামিন পেয়েছেন দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতে৷
আরও পড়ুন-নাবালিকাকে অপহরণ চলন্ত বাসেই গণধর্ষণ
তাঁকে কেন জামিন দেওয়া হচ্ছে, তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতের বিচারক জ্যোতি ক্লেয়ার তাঁর ২৪ পাতার রায়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ইডির দায়ের করা মামলা পুরোপুরি ভিত্তিহীন৷ দেশের সম্মাননীয় একজন নাগরিক অনুব্রত মণ্ডল৷ তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই সম্ভবত তাঁকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে নিজের রায়ে জানিয়েছেন বিচারক ক্লেয়ার৷ এই প্রসঙ্গেই তাঁর রায়, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে যে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল সেই অভিযোগের সপক্ষে চার্জশিটে যে সব তথ্য-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, তা অভিযোগ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়৷ দু’বছর ধরে জেলে বন্দি থাকার কারণে ৬৫ বছর বয়সী অনুব্রত মারাত্মক রকম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তিনি সহায়তা ছাড়া এখন হাঁটতে পারেন না, রায়ে বলেছেন বিচারক৷ অনুব্রতর এমআরআই করার নির্দেশ ছিল ডাক্তারের৷ কিন্তু যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে এমআরআই হয় না, রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ বিচারকের৷
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
উল্লেখ্য, কেন তিনি অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন দিচ্ছেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিচারক জ্যোতি ক্লেয়ার বলেছেন, গরুপাচার-কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলের যোগাযোগ প্রমাণের জন্য যেসব কল ডিটেইল রেকর্ড পেশ করা হয়েছে বা বিভিন্ন ব্যাঙ্কে জমা পড়া যেসব টাকার হিসেব দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের কোনও প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ গরুপাচারের ঘটনার সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের যোগাযোগ প্রমাণ করতে গিয়ে এমন সব ব্যাঙ্কের বিবরণী পেশ করা হয়েছে, যার কয়েকটি মূল ষড়যন্ত্রের আগের সময়ের৷ কবে অনুব্রত মণ্ডলের মামলার ট্রায়াল শুরু হবে কেউ জানে না৷ এখানেই অনুব্রত মণ্ডলের মামলার সঙ্গে আপ নেতা মণীশ সিসোদিয়া মামলার অনেক মিল আছে বলে দাবি করেছেন বিচারক ক্লেয়ার৷ মণীশ সিসোদিয়ার ক্ষেত্রেও দিনের পর দিন ধরে অভিযুক্তকে জেলে বন্দি রাখা হয়েছিল৷ তাঁর বিরুদ্ধেও কোনও অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি৷ কবে মণীশ সিসোদিয়ার ট্রায়াল শুরু হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই, জানিয়েছেন বিচারক নিজেই৷ অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য-প্রমাণ দাখিল করা হয়েছে, তা হল সহ অভিযুক্তদের বয়ান৷ পিএমএলএ-র ৫০ ধারার অধীনে দেওয়া সহ অভিযুক্তদের এই বয়ান অনুব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে একেবারেই গ্রাহ্য নয়, জামিনের রায়ে বলেছেন বিচারক৷ একই মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অন্য যাঁরা অভিযুক্ত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন৷ তারপরেও লাগাতার অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছে৷ এই সব কারণ বিবেচনা করেই তিনি অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন দিচ্ছেন, সাফ জানিয়েছেন রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতের বিচারক জ্যোতি ক্লেয়ার৷ অনুব্রতর বিরুদ্ধে আর কোনওপ্রকার তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই, সেকথাও উল্লেখ করেছেন তিনি৷