প্রতিবেদন : আরজি কর-কাণ্ডে (R G Kar- CBI) ১০ দিন ধরে তদন্তের পর এখনও দিশেহারা সিবিআই। তদন্তে নেই কোনও অগ্রগতি। এতদিন পরও কার্যত অথৈ জলে সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে মুখবন্ধ খামে তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। কিন্তু তাতেও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনও দিশা দেখাতে পারেনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। গত ১৩ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরই আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই। কিন্তু তারপর থেকে নতুন কোনও গ্রেফতার তো দূর-অস্ত্, এখনও পর্যন্ত অকাট্য প্রমাণও জোগাড় করতে পারেননি সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। এদিকে ঘটনায় একমাত্র ধৃত সঞ্জয় রায়কে শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতে পেশ করালে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সেইসঙ্গে সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ টেস্টের জন্য সিবিআইয়ের তরফে যে আবেদন করা হয়েছিল, সেই আবেদনও মঞ্জুর করা হয়েছে বলে আদালত সূত্রে খবর। শুধু সঞ্জয় নয়, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ চার জুনিয়র চিকিৎসকেরও পলিগ্রাফ টেস্টের অনুমোদন মিলেছে আদালতের তরফে। সিবিআইয়ের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তৃণমূলও। শুক্রবার এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, মাঝপথে ঘটনার তদন্ত কলকাতা পুলিশের হাত থেকে সিবিআইয়ের (R G Kar- CBI) হাতে গিয়েছে। কিন্তু তারপর থেকে সিবিআই কী করছে? মাত্র একজন ধৃতকেও কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তাহলে সিবিআই রেজাল্টটা কোথায় দিচ্ছে? সুপ্রিম কোর্টেও সিবিআই এমন কিছুই বলতে পারেনি, যাতে মনে হয় তদন্তটা কিনারার দিকে এগোচ্ছে। শুক্রবার মূল অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করার সময় আমরা এক্সপেক্ট করেছিলাম, সিবিআই স্পষ্টভাবে বলবে যে এই খুনি। চার্জশিট পেশ করে ফারদার ইনভেস্টিগেশনের দাবি জানাবে। কিন্তু আজও অভিযুক্তকে কোর্টে পেশ করার সময় সিবিআই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সেই-ই একমাত্র খুনি নাকি আরও কেউ আছে! সিবিআইয়ের এই বিলম্বের কারণে বিচার পিছিয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভুয়ো খবর ছড়ানো ও রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
৯ অগাস্ট আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরই সিট গঠন করে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। ১২ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার হয় ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। আদালতে পেশ করিয়ে সঞ্জয়কে পুলিশ হেফাজতেও নেওয়া হয়। কিন্তু ১৩ অগাস্ট হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিবিআই। লালবাজারের তরফে ধৃত সঞ্জয়-সহ সমস্ত তথ্যপ্রমাণ তুলে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। একইসঙ্গে ঘটনায় ভূরি ভূরি অভিযোগ ওঠে আরজি করের সদ্য-প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও। তদন্তভার নেওয়ার পর টানা ৮ দিন ধরে সেইসব অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তদন্তে কোনওরকম অগ্রগতির খবর শোনাতে পারেননি সিবিআই আধিকারিকরা। এদিকে সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতে আদালতের তরফে সন্দীপ-সহ আরও ৪ জুনিয়র চিকিৎসক, যাদের সঙ্গে ঘটনার রাতে খাবার খেয়েছিলেন নির্যাতিতা, তাঁদেরও পলিগ্রাফ টেস্টের অনুমতি মিলেছে। পাশাপাশি শুক্রবার ধৃত সঞ্জয় রায়ের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হলে তাকে শিয়ালদহ আদালতে পেশ করে সিবিআই। বিচারক সঞ্জয়কে জেল হেফাজতের নির্দেশের সঙ্গে তার পলিগ্রাফ টেস্টেরও আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
আরও পড়ুন- ওবিসি সার্টিফিকেট ইস্যুতে সুপ্রিম-রায়ে নৈতিক জয় রাজ্যের