প্রতিবেদন : বিজেপির নোংরা এজেন্সি পলিটিক্স-এর পোল খুলে দিলেন প্রাক্তন সিবিআই অফিসার (CBI_BJP_TMC)। কীভাবে বিজেপি ইডি-সিবিআই লাগিয়ে বিরোধী দলকে হেনস্থা করে সেই চক্রান্তের হাটে হাঁড়ি ভেঙে গেল। নারদা কেসে তৃণমূলের চার মন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে বিজেপি কীভাবে সিবিআইকে ব্যবহার করেছে সেই তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন এই কেসের প্রথম আইও, সিবিআই অফিসার রঞ্জিত কুমার। তাঁর একটি অডিও টেপ ফাঁস হয়েছে (যদিও জাগোবাংলা ডিজিটাল এর সত্যতা যাচাই করেনি), যেখানে শোনা যাচ্ছে, রঞ্জিত কুমারের একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি ফাঁস করে দিচ্ছেন, কীভাবে সিবিআইয়ের ডিরেক্টর-জয়েন্ট ডিরেক্টরকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল নেতাদের চূড়ান্ত হেনস্থা করা হয়েছে। এমনকী গদ্দার অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সিবিআই কেন ওর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি, শোনা গেছে সেই কাহিনিও! ম্যাথিউ স্যামুয়েল যে কত বড় জালি এই প্রাক্তন আইও শুনিয়েছেন সেই রোমহর্ষক কাহিনিও। যা শুনতে গিয়ে মনে পড়ে যাবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির এজেন্সি পলিটিক্সের বিরুদ্ধে যে তীব্র প্রতিবাদ করেন প্রতি মুহূর্তে তা কতটা সত্যি। শুধু বাংলা নয়, দেশ জুড়েই বিরোধীদের দমন করতে এই ফর্মুলা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি।
আরও পড়ুন-বাংলায় কথা বলায় প্রয়াগরাজে আটক মালদহের পরিযায়ী শ্রমিক
রঞ্জিত কুমার বলছেন, সিবিআই (CBI_BJP_TMC) দুটি কেসে আমাকে দিয়ে জোর করে অন্যায় কাজ করিয়েছে। যেখানে কোনও কেসই দাঁড়াচ্ছিল না। অন্তত দুটি ঘটনায় তো কেসই দাঁড়াচ্ছিল না। নারদা কেসে অন্যায়-অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাকে বলা হয়েছিল। আমার ওপর সাংঘাতিক প্রেসার ছিল। আমি ওদের কথামতো কাজ করলাম না বলেই তো আমাকে এখান থেকে ট্রান্সফার করে দিল। আমাকে বলা হয়েছিল তৃণমূলকে হেনস্থা করার জন্য। প্রেসার দেওয়া হচ্ছিল এই নেতাকে ডাকো, ওই নেতাকে ডাকো। শুধু ডাকাই নয়, গ্রেফতার করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল! আরে প্রমাণ থাকলে তবে তো অভিযুক্তদের ডাকাডাকি করা যায়! বারবার বলেছিলাম, প্রমাণ ছাড়া আমি কিচ্ছু করতে পারব না। ম্যাথিউ স্যামুয়েলের দেওয়া সমস্ত তথ্য মিথ্যা ছিল। ওসব জাল প্রমাণ কোথাও টেকানো যায় না। পেনড্রাইভের এভিডেন্স কতদূর বিশ্বাসযোগ্য? যে কোনও আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করে নিন। আদালত পেনড্রাইভের এভিডেন্স মানতে চায় না। এসব দিয়ে তদন্ত শুরু করা যায়, কিন্তু এর বেশি কিছু করা যায় না। অথচ সিবিআইয়ের তরফে চাপ দেওয়া হচ্ছিল চূড়ান্ত পদক্ষেপ করার। সব থেকে বড় কথা হল, ম্যাথিউ স্যামুয়েল নিজেই এভিডেন্স নষ্ট করেছে। ল্যাপটপ হারিয়ে গেছে ওর। আসল মোবাইল জমা দেয়নি। আরে আমিই তো ওকে ধরে ফেলেছিলাম যে ও আসল মোবাইল জমা দেয়নি। সবটা আমার কেস ডায়েরিতে লেখা আছে। আমার নিজের হাতে লেখা ডিপার্টমেন্টের রেকর্ডে আছে। কিন্তু আমাকে ডিপার্টমেন্ট থেকেই বলা হল, এসব সরাও। এগুলো লিখো না। সাইড করে দাও। যে মোবাইল অ্যাপল কোম্পানির সার্ভিস সেন্টারে জমা রয়েছে, সেই ফোন দিয়ে ওই একই সময়ে স্যামুয়েল কীভাবে স্টিং অপারেশন করল? প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন আইও। সার্ভিস সেন্টারও আমাদের জানিয়েছে, ফোন ওই সময় ওদের কাছেই ছিল। আমি এতটাই বিরক্ত হয়েছিলাম যে, সিবিআইকে স্পষ্ট জানিয়েছিলাম, যা বলছেন সেগুলি লিখিত দিন। জয়েন্ট ডিরেক্টর-ডিরেক্টর মারফত আমার কাছে নির্দেশ আসত। আমি এইচওবি কলকাতাকে বলতাম আমাকে লিখিত নির্দেশ দেওয়ার জন্য। এসব দেখে ওরা বেগতিক বুঝে আমাকে ট্রান্সফার করে দিল। আমাকে দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে গেল। ওখানে গিয়েও দেখি একই অবস্থা। কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। অথচ ওরা আমাকে চার্জশিট দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। তৃণমূলের যে চার মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সেটা স্রেফ হেনস্থা করার জন্য। ওদের বিরুদ্ধে এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ ছিল না যার ভিত্তিতে চার মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা যায়। স্রেফ চাপ দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
বিজেপি সরাসরি তো আমাকে বলত না। ওরা বলত সিবিআই ডিরেক্টর-জয়েন্ট ডিরেক্টরকে। তারপর এইচওবি হয়ে আমার কাছে নির্দেশ আসত। চাপ দিত। এই কেস সব নির্দেশই বিজেপি দিত। দলবদলু গদ্দার অধিকারীর বিরুদ্ধেও রঞ্জিত কুমার বলছেন, শুভেন্দুর বিরুদ্ধেও তো লোকসভায় বিভাগীয় তদন্ত চলছে। এখনও কেন তার নিষ্পত্তি হল না? মজার ঘটনা হল শুভেন্দু যেই বিজেপিতে গেল সিবিআই বলল, ওকে ছেড়ে দাও। এইসব নাটক চলছিল। আমি এ-জিনিস মানতে পারছিলাম না। আমারও কলকাতা থেকে মন উঠে গেছিল। এইসব অন্যায় দেখে আমিও আর থাকতে চাইছিলাম না।

