দুর্গাপুজো শেষ, শ্যামাপুজো, আলোর উৎসব, ভাইফোঁটা শেষ হতে না হতেই বাঙালির আরেক পার্বণ শুরু হয়, সেটি হল জগদ্ধাত্রী পুজো।
হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট উৎসব হলেও দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর মতো এর প্রচলন হয় বেশ কিছু পরে।
তবে দেবী জগদ্ধাত্রীর উল্লেখ পাওয়া যায় শূলাপাণি লিখিত খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে কাল বিবেক গ্রন্থে। তিনি কার্তিক মাসে জগদ্ধাত্রী পুজোর উল্লেখ করেন। আবার খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে এই দেবীর একটি প্রস্তর মূর্তি পাওয়া যায় পূর্ববঙ্গের বরিশালে।
আরও পড়ুন-গহনার সাতকাহন
কেন তিনি জগদ্ধাত্রী
জগদ্ধাত্রী অর্থাৎ ‘জয় সর্বগত দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমস্তুতে।’ জগদ্ধাত্রীও নয় দুর্গাও নয়, দুইয়ে মিলে দেবীর স্বরূপে প্রকাশ। দুর্গার বিকল্প সংযোগ।
তাহলে কি বলা যায় দেবী দুর্গারই অন্য রূপ জগদ্ধাত্রী? দুর্গার সঙ্গে জগদ্ধাত্রী বিকল্পের সংযোগ বুঝতে গেলে আমাদের একবার ভাল করে তাকাতে হবে দেবীর দিকে।
দেবী ধ্যানমন্ত্র অনুসরণ করলে আমরা দেখব—
‘সিংহ স্কন্ধসমারূঢ়া নানালঙ্কারভূষিতাম
চতুর্ভুজাং মহাদেবীং নাগযজ্ঞপবীনীতিম্ শঙ্খশার্ঙ্গসমাযুক্ত বামপাণিদ্বয়ান্বিতাম্
চক্রঞ্চ পঞ্চবাণাংশ্চ দধতীং দক্ষিণে করে
রক্তবস্ত্রাপরিধানং বালার্কসদৃশীতনুম্
নারদার্দ্যৈমুনিঃগণৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীম্।।’
অর্থাৎ—
এই মহাদেবী জগদ্ধাত্রী সিংহের স্কন্ধে আরূঢ়, নানা অলংকারে ভূষিতা ও নাগরূপ যজ্ঞোপবীতধারিণী।
দেবীর বাম হস্তদ্বয়ে শঙ্খ সার্ঙ্গধনু, দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে চক্র ও পঞ্চবাণ।
রক্তবস্ত্র পরিহিতা এই ভবসুন্দরী প্রভাত সূর্যের ন্যায় রক্তবর্ণা। নারদাদি মুনিগণ তাঁর নিত্যসেবা করে থাকেন।
তবে দুর্গার সাথে সংযোগ দেখতে হলে আমাদের তাকাতে হবে সেই শ্লোকের দিকে যেখানে বলা হয়েছে— জয় দে জগদানন্দে
জগদেক প্রপূজিতে
জয় সর্বগতে দুর্গে
জগদ্ধাত্রী নমস্তুতে।
পুরাণে উল্লেখ
আবার পুরাণে একথাও বলা হয়েছে যে, দেবতাদের একটা সূক্ষ্ম অহং ছিল যে, মহিষাসুর বধ হয়েছে দেবতাদের যুগ্মশক্তিতে। ব্রহ্মার বরের সম্মান রক্ষা করতে কেবল নারীটির উদ্ভব। দেবতাদের এই ধারণা দেখে পরমেশ্বরী দেবী একটি তৃণখণ্ড অলক্ষ্য থেকে নিক্ষেপ করলেন দেবতাদের দিকে। পরীক্ষা করতে চাইলেন তাঁদের শক্তি।
ইন্দ্র বজ্র দ্বারা সেই তৃণটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হলেন।
অগ্নি সেই তৃণ দহন করতে পারলেন না। বায়ু অসমর্থ হলেন তা উড়িয়ে দিতে। বরুণের শক্তি সেই তৃণের একটি অংশকেও প্লাবিত করতে পারল না। দেবতাদের এই দুরবস্থা দেখে তাঁদের সামনে আবির্ভূতা হলেন এক পরমাসুন্দরী সালঙ্কারা চতুর্ভুজামূর্তি।
তিনিই জগদ্ধাত্রী।
জগদ্ধাত্রী এভাবে আবির্ভূতা হয়ে দেবতাদের জ্ঞানচক্ষুকে উন্নীত করলেন। বুঝিয়ে দিলেন তিনি এই জগতের ধারিণা শক্তি।
জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘জগৎ+ধাত্রী
জগ তথা ত্রিভুবনের ধারণ করতে পালিকা। ব্যাপ্ত অর্থে দুর্গা কালী-সহ অন্যান্য শক্তি দেবীগণও জগদ্ধাত্রী।’
শাস্ত্রে জগদ্ধাত্রীকে উল্লেখ করা হয়েছে এইভাবে ‘ধৃতিরূপিণী মহাশক্তি জগদ্ধাত্রী।’
স্বগুণ ব্রহ্মে সৃষ্টি স্থিতি ও বিনাশ রূপ, এই তিনগুণের যুগপৎ প্রকাশ।
যেমন কালী রূপের বৈশিষ্ট্য, তাঁর ধারণী ও পোষণী গুণের যুগপৎ প্রকাশ ও জগদ্ধাত্রী রূপের বৈশিষ্ট্য। ধা ধাতুর অর্থ ধারণ বা পোষণ। ভগবতী নিখিল বিশ্বকে বক্ষে ধারণ করে প্রতিপালন করেন বলে মুনিগণ কর্তৃক তিনি ‘ত্রৈলোক্য জননী’ নামে অভিহিত।
নিয়ত পরিবর্তনশীল এই জগতের পেছনে রয়েছে তাঁর রক্ষণ ও পোষণের জন্য অচিন্তনীয়া মহাশক্তির এক অদ্ভুত খেলা। সতত পরিবর্তনশীল জগৎ সেই মহাশক্তি দ্বারা বিধৃত যিনি নিত্যা, শাশ্বতী ও অপরিবর্তনীয়া।
দেবী জগদ্ধাত্রী সেই ধৃতিরূপিণী মহাশক্তি।
উপনিষদ ও কাত্যায়নী তন্ত্রের ব্যাখ্যা
উপনিষদে দেবীর প্রথম উল্লেখ রয়েছে এক যক্ষের বেশে। আর স্বরূপে আবির্ভূত হওয়ার পর তাঁর নাম জানা গিয়েছিল উমা হৈমবতী।
মহিষাসুর বধের কোনও প্রসঙ্গ সেখানে নেই।
আবার কাত্যায়নী তন্ত্রে উমা জগদ্ধাত্রী এরকম কোনও নামের যদিও উল্লেখ নেই। সেখানে তিনি কেবল হৈমবতী অর্থাৎ স্বর্ণালঙ্কার ভূষিতা।
উমা নামটির সূত্র ধরেই উপনিষদের গল্পটি গৃহীত হল। অনেক পরে লেখা নানা পুরাণে এবং জগদ্ধাত্রী স্তোত্রে দুর্গা নামটির সূত্রে এল মহিষাসুর বধের প্রসঙ্গ।
কিন্তু কোথাও একটা স্পষ্ট করে বলা হল না জগদ্ধাত্রী দুর্গারই বিকল্প রূপ। কেননা যে দেবী দেবতাদের গর্ব খর্ব করার জন্য রূপ ধারণ করলেন উপনিষদ তাঁকে আদি শক্তি রূপে ব্যাখ্যা করেছে।
পুরাণেও দুর্গার আবির্ভাবের আগে বেশ কয়েকবার এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া গেছে। যেন বিষ্ণু মায়া বা বৈষ্ণব শক্তি হিসেবে সুপরিচিতা। বিষ্ণুর মতোই এ বিশ্বকে ধারণ করেন তিনি।
জগদ্ধাত্রীর হাতেও রয়েছে শঙ্খ এবং চক্র।
দুর্গার বিকল্প রূপ যা চণ্ডীতে উল্লেখ
জগদ্ধাত্রী যে দুর্গারই বিকল্প রূপ তার প্রথম সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া গেল শ্রীশ্রী চণ্ডীতে এসে।
সেখানে বলা হল যুদ্ধের সময় মত্ত মহিষাসুর নানা মায়ারূপ ধরে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন দেবীকে।
একবার সেই প্রচেষ্টায় মহিষাসুর ধারণ করেন হস্তিরূপ। সেই হস্তি দেবীকে বধের চেষ্টা করলে দুর্গা ধারণ করেন এক চতুর্ভুজা মূর্তি। চক্রদ্বারা তিনি ছেদন করেন হাতির শুঁড়টি।
সেই রূপটিই জগদ্ধাত্রী। সেই জন্যই ধ্যান মন্ত্রে কোথাও না উল্লেখ থাকলেও মূর্তি তত্ত্বে আমরা দেখেছি জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ এক হস্তির মৃত শরীরের উপরে দাঁড়িয়ে। কখনও-বা সেই সিংহ খেলা করে হস্তির কাটা মাথা নিয়ে।
সংস্কৃতে হস্তি বা হাতির আরেক নাম করী।
সেই অনুসারে অসুরটির নাম করীন্দ্রাসুর।
তাঁকে বধ করেন বলে জগদ্ধাত্রীর আরেক নাম করীন্দ্রাসুরনিসূর্দিনী দেবী।
তিনি সত্ত্বগুণের প্রতীক। তাই প্রথম সূর্যের মতো তাঁর গায়ের রং অর্থাৎ দেবীর গাত্রবর্ণটি কমলা। কিন্তু দুর্গার সঙ্গে তাঁর সংযোগ স্থাপন করে আমরা মূর্তিটি নির্মাণ করি। তপ্ত কাঞ্চনবর্ণ বা কাঁচা সোনার রঙে।
আরও পড়ুন-বিয়ে কোনও সাজা নয়
কালীপ্রসন্ন সিংহের বর্ণনায়
আবার কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নকশায় লিখেছেন, সেই সময়ে বাবু কলকাতা দুর্গার মতো জগদ্ধাত্রীর মূর্তিতেও স্থান দিয়েছেন লক্ষ্মী সরস্বতীকে।
‘বারইয়ারই প্রতিমাখানি প্রায় বিশাল উঁচু ঘোড়ায় চড়া হাইল্যান্ডের গোরা, বিবি পরী ও নানাবিধ চিড়িয়া, শোলার ফল ও পদ্ম দিয়ে সাজানো, মধ্যে মা ভগবতী জগদ্ধাত্রী-মূর্তি-সিঙ্গির গায়ে রূপুলি গিলটি ও হাতী সবুজ মখমল দিয়ে মোড়া। ঠাকরুণের বিবিয়ানা মুখ, রং ও গড়ন আদল ইহুদি ও আরমানী কেতা, ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহেশ্বর ও ইন্দ্র দাঁড়িয়ে জোড়হাত ক’রে স্তব কচ্চেন।’
ব্রাহ্মণ্যতত্ত্ব
কিছু সময় পিছিয়ে জগদ্ধাত্রী আরাধনার দিকে নজর করলে দেখা যাবে ইতিহাস বলছে জগদ্ধাত্রী পুজো প্রথমে কট্টরভাবেই প্রচলিত ছিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে। যা ব্রাহ্মণদের একটি বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য করা হয়। দেবীর গলায় থাকে নাগযজ্ঞোপবীত যা নির্দিষ্টভাবেই ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের পরিচয়ক।
আবার মন্ত্রে দেবীকে সাক্ষাৎ ব্রাহ্মণ বলে অভিহিত করা হয়েছে এখান থেকেই তৈরি হয়েছে বিকল্প শ্রেণিবিভাগ। সত্ত্বগুণধারিণী জগদ্ধাত্রীর পুজো করবেন ব্রাহ্মণরা, রজগুণধারী দুর্গার পুজো করবেন ক্ষত্রিয়রা এবং ত্বমগুণধারী কালীর পুজো করবেন অন্যরা।
পরে ব্রাহ্মণদের এই জগদ্ধাত্রী আরাধনা সূত্রটি গ্রহণ করলেন বণিক শ্রেণি।
বঙ্গদেশের জগদ্ধাত্রী
এইভাবেই দুর্গার বিকল্প রূপে জগদ্ধাত্রী আরাধনা কালে কালে তা জনপ্রিয় হল বঙ্গদেশে।
যার হোতা নিঃসন্দেহে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। কেননা দুর্গাপুজো করতে অসমর্থ হয়ে বিকল্পে জগদ্ধাত্রী আরাধনা বঙ্গে প্রথম প্রচলন করেছেন তিনি। আবার এক দেবীর পুজোয় অসমর্থ হয়ে জগদ্ধাত্রী আরাধনার প্রচলন দেখা যায় সারদামণির বংশে। শোনা যায় সারদামণির মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর পুজোর জন্য প্রতিবছর প্রতিবেশী নব মুখুজ্জের বাড়িতে কালীপুজোর চাল পাঠাতেন। একবার মনোমালিন্যের জন্য মুখুজ্যেরা সেই চাল নিতে অস্বীকার করে। শ্যামাসুন্দরীকে সেই রাতেই স্বপ্নে দর্শন দেন জগদ্ধাত্রী। ওই চালে তাঁর পুজোর নির্দেশ দেন। সেই থেকেই জয়রামবাটিতে সারদামণির বংশে বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজো।
জীবদ্দশায় প্রতিবছরই জগদ্ধাত্রী পুজোয় উপস্থিত থাকতেন সারদা দেবী। পুজো পরিচালনার জন্য তিনি সাড়ে দশ বিঘার কিছু বেশি জমি দেবোত্তর সম্পত্তিরূপে দিয়ে যান।
তবে আজকের দিনে জগদ্ধাত্রী পুজো বলতে সারা পৃথিবীর মানুষ চন্দনগরের পুজো বোঝেন। কিন্তু এই পুজোর সূত্রটা চন্দননগরে হয়নি। হয়েছিল এক অন্য শহরে।
কোথায় শুরু হয়েছিল এই পুজো? ইতিহাস বলছে শান্তিপুরে। লোক কথা বলছে, শান্তিপুরের চন্দ্রচূড় তর্কমুনির কামরাঙা গাছতলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে প্রথম দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। তবে এটি নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে।
যেমন অনেকে বলেন সতেরোশো বাষট্টি সালে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয়। তবে সেটি নাকি ছিল শুধুমাত্র ঘটপুজো, প্রতিমা ছিল না। সেখানে আর সেই কারণেই উঠে আসে শান্তিপুরের নাম।
স্থানীয় ইতিহাস বলছে শান্তিপুরের হরিপুর নিবাসী তন্ত্রসাধক চন্দ্রচূড়ের সাধনায় পাওয়া যায় দেবী জগদ্ধাত্রী বর্ণনা।
রাজা গিরিশচন্দ্র রায় যখন আঠারোশো দুই সালে নদিয়ায় রাজত্ব করছেন শান্তিপুরের হরিপুরে তখন সেখানে একশো আট ঘর ব্রাহ্মণের বাস। তাঁদের মধ্যে থেকে চন্দ্রচূড়কে রাজা নিজেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন রাজসভায় থাকার জন্য।
সেই সময় উষাকালে প্রথমবার জগদ্ধাত্রী মূর্তি তৈরি করে পঞ্চমুণ্ডির আসনে কামরাঙা গাছের নিচে পুজো করা হয়েছিল দেবীকে।
কথিত আছে, তারপর থেকে কৃষ্ণনগর চন্দননগর এলাকায় জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু হয়।
নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে নবাব আলিবর্দি খাঁ তাঁর কাছ থেকে বারো লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন দুর্গাপুজোর আগে। সেই টাকা না দিতে পারায় মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দি করা হয় মুর্শিদাবাদে।
তখন আশ্বিন মাস। বিজয়া দশমীর বিকেলে বিসর্জনের বাজনার মাঝে কৃষ্ণচন্দ্র পৌঁছলেন নদিয়ার রুকুনপুর ঘাটে। তখন বিষাদ ঘিরে ধরে তাঁকে। শ্রান্ত আশাহত রাজা ঢলে পড়লেন ঘুমে। দুর্গাপুজোয় যে তাঁর থাকা হয়নি। কৃষ্ণচন্দ্র দেবী জগদ্ধাত্রীর কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পান পুজো করার জন্য।
স্বপ্নের সেই দেবীমূর্তি দুর্গা নন। ত্রিনয়নী, চার হাত, রক্তাম্বরধারিণী, সাদা সিংহে যোদ্ধার মতো আরূঢ়া তিনি, শঙ্খ-চক্র আর দুই হাতে ধনুর্বাণ।
স্বপ্নে দেবীর প্রত্যাদেশ হল সামনে শুক্লা নবমীতে একই দিনে সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী পুজো করলেই অণুকল্প হবে।
স্বপ্নাদেশ মেনে সেখানেই চন্দ্রচুর তর্কচুড়ামণির পঞ্চমুণ্ডির আসনে পুজো করেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র।
তা থেকেই ধীরে ধীরে বাংলার বুকে শুরু হয় দেবী জগদ্ধাত্রী আরাধনা।
এরপর কৃষ্ণচন্দ্রের পুজোর অনুপ্রেরণায় ফরাসিদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তৎকালীন ফরাসডাঙা বা এখনকার চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন।
মা পার্বতীর অপর রূপ হল জগদ্ধাত্রী।
জগদ্ধাত্রী কথার অর্থ হল জগতের ধাত্রী অর্থাৎ জগৎ ধারণ করেন যিনি।
পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জায়গায় মহাসমারোহে পালিত হয় এই পুজো।
এর মধ্যে বিখ্যাত হল চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো।
কৃষ্ণনগরের প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজোগুলোর মধ্যে চাষাপাড়াতে বুড়িমার পুজো অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এই পুজো শুরু হয় সতেরোশো নব্বই সালে।
জগদ্ধাত্রী পুজোর দিন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দরজা খুলে রাখার রীতি আজও চোখে পড়ে।
তৎকালীন কৃষ্ণনগরের রানিমা রাজবাড়িতে বসেই প্রতিমা দর্শন করতেন।
নিরঞ্জনের আগে প্রতিমা রাজবাড়ির সামনে থেকে একবার ঘুরিয়ে আনা হয়। এই রীতি এখনও মানা হয়।
সাতশো পঞ্চাশ ভরি অলঙ্কার দিয়ে জগদ্ধাত্রীকে সাজানো হয় এখানে। এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত বলে এলাকার মানুষ মনে করেন এবং দেবী তাঁর ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ করেন বলে বিশ্বাস।
জগদ্ধাত্রী পুজোর নিয়মটা একটু স্বতন্ত্র। দুটি প্রথায় এই পুজো হয়ে থাকে।
কেউ কেউ সপ্তমী থেকে নবমী অবধি দুর্গাপুজোর ধাঁচে জগদ্ধাত্রী পুজো করে থাকেন।
আবার কেউ কেউ নবমীর দিনে তিনবার পুজোর আয়োজন করে সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী পুজো সম্পন্ন করেন।