বছর শেষে সাহিত্য-যাপন

একদিকে বইমেলা, অন্যদিকে কবির নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। সাহিত্য-ছোঁয়া দুই আয়োজন উষ্ণতা ছড়িয়েছে বছর শেষের শীতের আবহে। ঘুরে এসে লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

নিউটাউন বইমেলা
নিউটাউন সিটি স্কোয়ার গ্রাউন্ডে চলছে ১১তম নিউটাউন বইমেলা। আয়োজনে নিউটাউন বইমেলা সমিতি। ২৫ ডিসেম্বর, ‘কমল চক্রবর্তী’ নামাঙ্কিত মূল মঞ্চে উদ্বোধন করেছেন কবি জয় গোস্বামী। ছিলেন এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী, হিডকোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর শশাঙ্ক শেঠি, রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়, লেখক-প্রকাশক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক সুধাংশুশেখর দে, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির আচার্য সত্যম রায়চৌধুরী, পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের অধিকর্তা আশিস গিরি প্রমুখ। কথা হল সমিতির সহসভাপতি বিমান সাহার সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘‘১০০-র বেশি বইয়ের স্টল রয়েছে। আনন্দ পাবলিশার্স, আজকাল, দে’জ পাবলিশিং হাউস, পত্রভারতী, পারুল প্রভৃতি প্রকাশন সংস্থা অংশ নিয়েছে। এছাড়াও আছে ২০টি লিটল ম্যাগাজিন টেবিল। প্রতিদিন আয়োজিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।’’

আরও পড়ুন-বিদায় পুরনো অভ্যাস, স্বাগত নতুন জীবন, অবহেলা নয় নিজেকে

মূল মঞ্চের সামনে রয়েছে ‘মমতা বিতান’ স্টল। পাওয়া যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশকিছু বই। এই স্টল ঘিরে চোখে পড়ছে পাঠকের উন্মাদনা। সমিতির সম্পাদক সঞ্জয়কুমার জানা জানালেন, ‘‘কলকাতার পাশাপাশি বাইরের বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রকাশন সংস্থা অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী বইপ্রেমীরা। কিনছেন পছন্দের বই। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি বইও পাওয়া যাচ্ছে অক্সফোর্ড-সহ কয়েকটি স্টলে।’’
২৭-২৯ ডিসেম্বর, মেলার ‘রক্তকরবী’ মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘জাতীয় কবিতা উৎসব’। সমিতির সদস্যা রিনা গিরি বললেন, ‘‘জাতীয় কবিতা উৎসবের এবার ৯ বছর। উদ্বোধন করেছেন কবি মৃদুল দাশগুপ্ত। আলোচনা ও কবিতাপাঠে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন প্রজন্মের বিশিষ্ট কবিরা। এরপর আয়োজিত হবে নিউটাউন সাহিত্য উৎসব।’’
মেলা কমিটি প্রকাশ করেছে গল্প সংকলন ‘মন ভালো করার গল্প’। সংগ্রহ করছেন অনেকেই। নিউটাউন বইমেলা চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ২টো থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে।

আরও পড়ুন-নতুন বছরের নতুন প্রতিশ্রুতি

নীরেন্দ্রনাথ পুরস্কার শীর্ষেন্দুকে
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। দু’জনের সম্পর্ক ছিল দাদা-ভাইয়ের মতো। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। একসঙ্গে গিয়েছেন বহু অনুষ্ঠানে। নীরেন্দ্রনাথের উৎসাহেই ছোটদের লেখায় হাত দিয়েছিলেন শীর্ষেন্দু। লিখেছেন বহু কিশোর গল্প, উপন্যাস। সম্প্রতি তাঁরা বাঁধা পড়লেন এক অদৃশ্য সুতোয়।
১৯২৪-এর ১৯ অক্টোবর জন্ম নীরেন্দ্রনাথের। চলছে তাঁর জন্মশতবর্ষ। ‘কলকাতার যিশু’ আন্তর্জাতিক কবিতা পত্রিকা সারা বছর ধরেই আন্তরিকতার সঙ্গে কবির জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে। কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়, এমনকী বাংলাদেশেও আয়োজিত হয়েছে অনুষ্ঠান।
২৬ ডিসেম্বর, কলকাতার রোটারি সদনে এই পত্রিকার উদ্যোগে আয়োজিত হল কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জন্মশতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। শুরু থেকে শেষ, প্রেক্ষাগৃহ ছিল প্রায় পূর্ণ। কয়েকটি পর্বে পরিবেশিত হল কবিতাপাঠ, আবৃত্তি। বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষার ভাষার কবিরাও অংশ নিলেন।

আরও পড়ুন-সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ চলছেই: ঢোকাচ্ছে বিএসএফ, ধরছে পুলিশ

শেষ পর্বে প্রদান করা হল নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্মৃতি পুরস্কার। ২০১৮-র ২৫ ডিসেম্বর প্রয়াত হন কবি। তারপর থেকেই তাঁর নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রদান করে আসছে ‘কলকাতার যিশু’ পত্রিকা। ২০২৪-২৫ সালের জন্য নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্মৃতি পুরস্কার পেলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ও সম্মাননা পেলেও তাঁর ‘নীরেনদা’র নামাঙ্কিত পুরস্কার পেয়ে স্বভাবতই খুশি শীর্ষেন্দু। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গল্পের মতো গুছিয়ে কবির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা তুলে ধরলেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার, কবি সুবোধ সরকার, কবি সুজিত সরকার, অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার, অধ্যাপক শিউলি সরকার প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সম্পাদক সাতকর্ণী ঘোষ। তাঁর জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।

Latest article