পাওলি দাম
পুজোর (Celebrities Durga puja) প্ল্যানিং আগে থাকতে করিনি কিছুই। ব্যস্ত ছিলাম। পৃথার শ্যুটিংটা শেষ করার ছিল পুজোর আগে। তবে পুজোর দিনগুলোতে কোনও কাজ রাখি না। পুজোর বিচারক ছিলাম, পুজো উদ্বোধনেও গেছি এবারে। এত নির্ঝঞ্ঝাটে ঠাকুর দেখে নিয়েছি যে আর পুজোর মধ্যে দেখব না। অঞ্জলি দেবার ইচ্ছে আছে। আমার খুব ক্লোজ কিছু বন্ধুবান্ধব আছে যারা বাইরে থাকে তারা এসেছে এবং আমার কাজিনরাও বাইরে থাকে তারাও এসেছে। ওদের সঙ্গে মিট করব। কখনও ওদের বাড়ি তো কখন ও আমার বাড়িতে। সেখানেই দারুণ আড্ডা আর নানান পরিকল্পনা চলবে। কত কী যে ভেবে ফেলি আমরা শেষে কোনওটাই আর কিছু হয় না আবার পুজোর পরে যে-যার মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। পুজো কেন কোনও সময়ই আমি চুল নিয়ে কখনও এক্সপেরিমেন্ট করিনি খুব লম্বা চুল ছিল আমার। মা কাটতে দিত না। আর এখন আমার অভিনয়ের কারণে চুল নিয়ে কিছু করা হয় না। আমি বেশিরভাগ পিরিয়ডিক ছবি করেছি ফলে ওই চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে রাখতে হয়। তাই পুজো স্পেশাল হেয়ার কাট করা হয় না। সারাবছর ধরেই কেনাকাটা করি পুজো বলেই কিনব এমন নয়। তবে পুজো উপলক্ষে সবাইকে কিনে দিতে খুব ভাল লাগে আমার। আমি খেতে ভীষণ ভালবাসি আর পুজো যখন এই সময় কোনও ডায়েট করব না। এ মুহূর্তে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি না। বা পুজোর পরেও না। আমার বাড়ির লোকজন সবাই যাচ্ছে কিন্তু আমি কলকাতাতেই থাকব। পুজোর প্রেম হয়নি কখনও। সুযোগ ছিল না কারণ একান্নবর্তী পরিবার আমাদের। শৈশব বা কৈশোরে যখনই পুজোয় বেরতাম গোটা ফ্যামিলি সঙ্গে থাকত। ওই ঘেরাটোপের বাইরে কিছু করার কাউকে দেখার প্রেমে পড়ার অবকাশ ছিল না। একবার প্যান্ডেলে কেউ আমাকে চিরকুট দিয়েছিল সেটা আমার হাতে না পড়ে মেসোর হাতে এসে পড়ছিল! ফলে ওই বাউন্ডারি ওয়ালটা ব্রেক করতে পারেনি কেউ।
কৌশানী মুখোপাধ্যায়
আমাদের প্রোডাকশন হাউজে একটা বড় ছবি প্ল্যানিং চলছে এই মুহূর্তে। ডিসেম্বরে ফ্লোরে যাব হয়তো। এই সময়টা আমাদের পিক টাইম। ব্র্যান্ড ক্যাম্পেইন শ্যুট চলেছে টানা। আমার আর বনির তিনটে ছবি রিলিজ হবে। আবার প্রলয়ের পরে গ্যাপ দিয়েছিলাম অনেকটা। খুব বেছে ছবি নিচ্ছি আমি। চতুর্থীতে আমার বাড়িতে পুজো হয় তাই ওইদিন থেকেই কাজ রাখিনি। তবে পুজোর ওপেনিংস ছিল, শো ছিল। বনি আর আমার, একসঙ্গেও এখনও টুকটাক কিছু শো রয়েছে। এরপর বাকি দিনগুলো শুধু পরিবার, আড্ডা, ঠাকুর দেখা, খাওয়া-দাওয়া। পুজো মানেই আমি সারাক্ষণ বেরতেই থাকি। স্টলে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া, সকালে বেরিয়ে কচুরি খেয়ে বাড়ি ফেরা— এগুলো আমায় করতেই হবে পুজোতে (Celebrities Durga puja)। পুজোয় আমার রোজ চিট ডে। সারাবছর কেনাকাটা করলেও পুজোর সময় প্রতিবছর আমার মনে হয় আমার কিছুই হয়নি। সবাইকে বলতে থাকি। বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি আমার পাড়ার পুজো ওখানে অষ্টমীর অঞ্জলি, বরণ, ঢাকের সঙ্গে নাচ— সবকিছুতে আমি পার্টিসিপেট করি আমার খুব ভাল লাগে। পুজোর পরে বেড়াতে যাবার ইচ্ছে আছে তবে খুব বড় ট্রিপ করব না ছোটখাটো একটা ট্যুর করব। পুজোর সময় আমি কখনও প্রেমে পড়িনি, কিন্তু অনেকেই আমার প্রেমে পড়েছে!
বনি সেনগুপ্ত
পুজোর (Celebrities Durga puja) আগে খুব ব্যস্ত ছিলাম, এখনও আছি। একটা ছবি রিলিজ হবে পুজোর পরেই। এছাড়া আমার আর কৌশানীর ছবি রিলিজ হবে। এর মধ্যেও সবার জন্য কেনাকাটা সেরে ফেলেছিলাম। আমার জন্য সব শেষে কিনেছি। কৌশানীর বাড়িতে চতুর্থীর দিন দুর্গাপুজো হয়। তাই চতুর্থী থেকেই পুজো শুরু হয়ে গেছে আমার। পুজো উদ্বোধন ছিল। এবার অনেকগুলো শো ছিল। বাকি সময়টা পুজো এনজয় করব। খাওয়াদাওয়া আড্ডা ঠাকুর দেখা সবটাই করব। কৌশানী ভীষণ ঠাকুর দেখতে ভালবাসে। রাতজেগেও আমরা ঠাকুর দেখি। বেড়াতে যাব ইচ্ছে আছে পুজোর পরে, তবে খুব দূরে এ-বছর যাব না। একটু কাছাকাছি কোথাও যাব। পুজোর প্রেমের একটা আলাদাই মজা রয়েছে। স্কুলে, কলেজে যখন ছিলাম যাকেই দেখতাম প্রেমে পড়ে যেতাম!
সন্দীপ্তা সেন
কোভিড ছাড়া নিশ্চিন্তের পুজো (Celebrities Durga puja) এবছর। কলকাতাতেই কাটাব। আমার বেশ কিছু বন্ধু বাইরে থেকে এসছে। সেটা আমার কাছে খুব এক্সাইটিং একটা বিষয়। সারা বছর যাঁদের সঙ্গে দেখাই হয় না পুজোর সময় হবে। প্ল্যানিং রয়েছে। পুজোর দিন এই দিনগুলোতে কিছু খাই না, খাই লুচি আর সাদা আলুর তরকারি এবং অষ্টমীর ভোগ খাবই। এ-বছর আমি একটা নতুন ফ্ল্যাটে শিফট করেছি। এই হাউজিংয়ে এ-বছর প্রথম পুজো হচ্ছে কাজেই ওটা নিয়েও খুব আনন্দ রয়েছে মনে। পুজোর একটা আবহের মধ্যেই থাকব। পুজো উপলক্ষে কিনেছি শাড়ি। শাড়িটাই এই সময় পরতে ভাল লাগে। যাঁদের যা দেবার সবাইকে দেওয়া হয়ে গেছে। তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমীতে পুজো ওপেন করেছি বেশ কয়েকটা, ওই সময় এত সুন্দর করে ঠাকুর দেখে নিয়েছি যে আর পুজোর মধ্যে ঠাকুর না দেখলেও চলবে। কিন্তু হাউজিংয়ে তো থাকবই। আমি ছোট থেকেই অবাঙালি পাড়াতে বড় হয়েছি তাই পুজোতে প্রেম হয়নি কোনওদিন। অনেকের কাছ থেকেই বছরের অন্যান্য সময় চিরকুট পেতাম তবে সেটা ওই পর্যন্তই।
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত
পুজোর (Celebrities Durga puja) আগে বিরাট কিছু ব্যস্ততা ছিল না। আমি একটু ধীরেসুস্থে কাজ করা পছন্দ করি। পুজোর পরে শ্যুট শুরু হবে তবে এই মুহূর্তে পরিচালকের নাম বলছি না। ক্রমশ প্রকাশ্য। সেই সঙ্গে আমার টি-২০ সিরিজ রয়েছে পুজোর পর। আমি যেহেতু স্পোর্ট ব্রডকাস্টিং-এর কাজ করি। নভেম্বরের শেষে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার যে টি-২০ ম্যাচে বাংলাতে প্রি-ম্যাচ, পোস্ট-ম্যাচ, মিড-ম্যাচ যে অ্যানালিসিসগুলো হয় সেই শোগুলোর সঞ্চলনা করি। সেটার প্রস্তুতি চলছে। দুর্গাপুজো আমার কাছে বাঙালির উৎসব। এখানে রিলিজিয়াস জায়গাটা একটু বাদ দিয়েই বলছি। তাই মধ্যবিত্ত বাঙালি হিসেবে পুজোর দিনগুলো আলাদা প্ল্যানিং তো থাকেই। পুজোর মধ্যে ছুটি আছে কাজেই বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করব, আড্ডা মারবই। যেটা সারা বছর হয় না। খেতে অসম্ভব ভালবাসি। সবকিছু খাব। ভিড়ে ঠাকুর দেখতে যাই না তবে ভিড় দেখতে খুব ভাল লাগবে। সারাবছর কেনাকাটা করি তাও পুজো উপলক্ষে কিনতে ভাল লাগে। পুজোয় কোনও একটা দিন পাঞ্জাবি পরবই। পুজোর প্রেমের স্মৃতি সেই অর্থে নেই কিন্তু কৈশোর বয়সে প্রত্যেক পুজোতেই কাউকে না কাউকে ভাল লাগতো আর ওটা ওই পুজোতেই শেষ হয়ে যেত।
মনামি ঘোষ
এবারে পুজোর (Celebrities Durga puja) আগের ব্যস্ততা খুব বেশি ছিল। পেন্ডিং শ্যুট শেষ করতে হয়েছে, ব্র্যান্ড শ্যুট ছিল, আমার এবং সৈকত বাড়ুরির প্রডাকশনের মিউজিক ভিডিও রিলিজ হল ‘আইলো উমা বাড়িতে’— সেটার প্রমোশন নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। এই লেখা বেরনোর সময় সেই ভিডিও রিলিজ হয়ে যাবে। পুজোয় এবার কলকাতাতেই আছি। উদ্বোধন, জাজিং সবই শুরু হয়ে গেছে আগেই। তবে এত কাজ যে এ-বছর ছুটি বিশেষ উপভোগ করতে পারব বলে মনে হয় না। পুজোর আলাদা কোনও প্ল্যানিং কোনও বছর থাকে না, কাজটাই আমার প্ল্যান। তবে পুজোর মধ্যেই প্রতিবছর আমাদের একটা ফ্যামিলি গেট টুগেদার হয়। কোনদিন আমার ফাঁকা থাকে তার ওপর নির্ভর করে সেই ডেট ঠিক হয়। সেটা হবে। পুরোটাই নির্ভর করছে আমার কাজের শিডিউলের ওপর। বেড়াতে যাবার প্ল্যান এই মুহূর্তে নেই। আমি বরাবর একটু স্বতন্ত্র, নাকউঁচু। পুজোতে প্রেম করার কোনও সুযোগই হয়নি। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম পুজোয়। কী সাজব, কী পরব, কোথায় ঠাকুর দেখতে যাব। ফলে প্রেম নিয়ে ভাবিনি কখনও।
আরও পড়ুন- আত্মপ্রচারে মগ্ন মোদি : এবার ‘নমো’ নামের ট্রেন উদ্বোধন, নিন্দায় তৃণমূল-সহ বিরোধীরা
মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়
পুজোর (Celebrities Durga puja) চারদিন শ্যুটিং নেই। তাই এই চারটে দিন আলাদা করে প্ল্যানিং করে রেখেছি। যার মধ্যে দু’দিন অন্তত বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করবই। রোজ বেরব না কিন্তু বাড়িতে আড্ডা দেব। পেটপুজো ছাড়া পুজো অচল তাই ওটা মাস্ট। আমি পুজোর মধ্যেই বেড়াতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার স্ত্রী বলল পুজোর সময় কলকাতায় থাকতে তাই পুজোর পরে যাচ্ছি সিকিম। অষ্টমীর দিন উত্তর কলকাতায় আমার এক দাদার বাড়িতে পুজো হয়, সেখানে যাই প্রতিবার। ভোগ খেতে দারুণ ভাল লাগে। পুজোয় আলাদা করে প্রেমের কোনও স্মৃতি নেই, কিন্তু যেটা মজার বিষয়, এই দাদার বাড়িতে দুর্গাপুজোতে এসে একবার আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ও তখন মুম্বইয়ে থাকত। কলকাতায় থাকত না। ওখানেই ভাল লাগা, পরিচয়, বন্ধুত্ব। কাজেই পুজোতেই আমার প্রেম এবং জীবনসঙ্গিনীকে খুঁজে পাওয়া।
মৌমা দাস
এবারে পুজো (Celebrities Durga puja) নিয়ে ভীষণ মন খারাপ। পুরো পুজো থাকতে পারছি না। তাই কেনাকাটা বেশ কিছুদিন আগেই সেরে রেখেছিলাম। রোজ ভোরবেলা ট্রেনিং ছিল সেটা সেরেই মেয়েকে স্কুলে ঢুকিয়ে কেনাকাটা করতে যেতাম। ষষ্ঠীর দিন বেরিয়ে এসছি দশমীতে ফিরছি। টুর্নামেন্ট রয়েছে। কেরলে যাচ্ছি ওখানে পুজোর ফ্লেভারটা পাব না। খুব বাজে লাগছে। এত বছরে এই প্রথম পুজোর মেন দিনগুলো বাইরে। তবে যেহেতু কয়েকবছর ধরেই তৃতীয়া-চতুর্থীতে অনেক পুজো উদ্বোধন হয়ে যাচ্ছে। তাই প্ল্যান করে রেখেছিলাম মেয়েকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরনোর। আমি সল্টলেকে থাকি। সেখানে আমাদের হাউজিংয়েও পুজো হয়। এ ছাড়া সল্টলেকে অনেক পুজো হয় ভিড়ভাট্টা একদম থাকে না। খুব সুন্দর পরিবেশ। প্রতিবছর ওই ঠাকুরগুলো দেখি। এবারেও গেছিলাম। বেশ কয়েকটা ঠাকুর দেখে ফেলেছি। আমার হাজব্যান্ড মেয়েকে নিয়ে বেরতে শুরু করেছে আগে থাকতেই। খুব বেশি বন্ধু নেই আমার। দু-একজন। তাদের সঙ্গে একদিন দেখা করব ফিরে। পুজোয় আমি কোনওদিনই বাইরে একেবারেই খাই না। হাইজিনিক মনে হয় না। এবার অষ্টমীর অঞ্জলিটা মিস করব ঠিকই কিন্তু দশমীর বরণ কিছুতেই মিস করব না। বরণ করতে আমার খুব ভাল লাগে। দশমীতে মা দুর্গাকে বরণ করবই। আমার শ্বশুরবাড়িতেও অনেক ঠাকুর রয়েছে। খুব জাগ্রত আমাদের মা কালী তো, পুজোর একটা পরিবেশ সারাবছর থাকে। ফিরে এসে পরিবারের সঙ্গেই আনন্দ করব। দশমীর দিনও এখন বহু ঠাকুর থাকে পরে বিসর্জন হয়। ওই সময়টা বাদ পড়ে যাওয়া আনন্দগুলো উশুল করে নেব।
লোপামুদ্রা মিত্র
এবার পুজোর (Celebrities Durga puja) আগে আমার স্কুলে ছানাপোনাদের অ্যালবাম রিলিজ হয়েছে। এর সঙ্গে আমার নিজের গানের অ্যালবাম রিলিজ হল। এই ইন্টারভিউটা যখন বেরবে আমি আমেরিকাতে থাকব। ২৬ অক্টোবর ফিরছি। পুজোর শো রয়েছে এখানে। ছটা শহরে এবছর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছি। আটলান্টা, নিউ জার্সি, ট্যাম্পা, অস্টিন, বোস্টন। নাকে-চোখে-মুখে দেখব কারণ যা পরিশ্রম হয় তা বলার নয় কিন্তু এটাই আমাদের মতো শিল্পীদের আনন্দ। ফাঁকতালে মা দুর্গাকে দেখব কিন্তু অঞ্জলি দেব না। আমার মনেই অঞ্জলি। দুর্গাপুজো আমার কাছে এমন এক উৎসব যা বহু মানুষের রুজিরুটি তো বটেই, সেই সঙ্গে মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ এটা খুব ভাল লাগার। এখানে সপ্তাহান্তে পুরো পুজো হয়। সপ্তাহের প্রথমদিকে হালকা থাকব। ২০২১ এবং ২০২২ কলকাতায় কাটিয়েছি। আমার জীবনের ২৮-২৯ বছর পুজোর সময় বাইরেই থেকেছি, কলকাতার পুজো দেখার সুযোগ হয়নি। এখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর, জাঁকজমক নেই কিন্তু আন্তরিকতায় ভরা। পুজোর জন্য কোনও কম্প্রমাইজ করি না। নিজের বুটিক থেকে প্রথমেই নিজের পছন্দের ছটা শাড়ি নিয়ে নিয়েছি পরব বলে। আমি কারও জন্য, আলাদা করে কেনাকাটা করি না। জয় নিজের পছন্দেই কেনে। পুজো আমার কাছে একটা এমন উৎসব যেটার উপর আমাদের মতো আরও বহু মানুষের রুজি রোজগার নির্ভর করে এটা একটা বড় বিষয়। আর আমি বাঙালি, কাজেই পুজো ভাল তো লাগবেই। এ-বছরটা আমার কাছে বিশেষ, কারণ জয় আর আমি একসঙ্গে যাচ্ছি পুরো পুজো একসঙ্গে কাটাব।
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
মাঝে ৬ বছর পুজোয় (Celebrities Durga puja) কলকাতায় ছিলাম না। তবে এবার পুজোয় কলকাতাতেই আছি। সময় কাটাচ্ছি পরিবারের সঙ্গে। হইহই করে। এই মুহূর্তে হাতে খুব বেশি কাজ নেই। তাই চাপ কম। বকুলবাগান আমার বাপের বাড়ির পাড়া। ওখানে বিরাট পুজো হয়। যদিও আমি এখন বকুলবাগানে থাকি না। ওখানকার সদস্যাও নই। তবে ওই পুজো ঘিরে আমার আলাদা একটা দুর্বলতা আছে। অদ্ভুত একটা টান অনুভব করি। বাপের বাড়ি গেলে অবশ্যই পুজোমণ্ডপে যাই। দেখে আসি। এখন আমি বাগুইআটিতে থাকি। এখানেও খুব ভাল ভাল পুজো হয়। তবে কোনও পুজোয় আর অ্যাক্টিভ নই। সেই সময়ও পাই না।
এটা ঠিক, পুজো মানেই খাওয়াদাওয়া। তবে পুজোতেও আমি একটু মেপেই খাই। মায়ের প্রসাদ মুখে দেব। ফুচকা? না, খুব বেশি পছন্দ করি না। পুজোয় ভিড়ে দাঁড়িয়ে এখন আর ফুচকা খাওয়া হয়ে ওঠে না। ভিড়ে থাকাটা আসলে অভ্যাসের বাইরে চলে গেছে। একটু ফাঁক পেলে পরিবারের সঙ্গে বের হই। যেসব প্যান্ডেলে খুব বেশি ভিড় হয় না, সেখানে যাই। মেয়েকে মা দুর্গার সঙ্গে পরিচয় করাই। মেয়ের জন্য বেশ কয়েকটা নতুন জামা কিনেছি। নিজে পছন্দ করে। সেগুলো দিয়ে সাজাচ্ছি। আমি কী সাজব? শাড়ি পরতে ভালবাসি। তাই শাড়ি পরব। অঞ্জলি দেব। অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিপুজো দেখতে খুব ভাল লাগে। এবারেও দেখব।
কিছুটা বয়স হয়েছে। সেটা বেশ বুঝতে পারি। এখন আর আগের মতো পুজো নিয়ে পাগলামি নেই। পুজোর সময় পুরনো দিনের কথা খুব মনে পড়ে। দুর্গাপুজো দিয়েই শুরু হত ছুটি। বন্ধুরা মিলে হইহই করতাম। খাওয়াদাওয়া করতাম। দুষ্টুমি করতাম। কী সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো। তখন অদ্ভুত একটা স্বাধীনতা ছিল আমাদের। খুব ভাল লাগত। কোনও দায়দায়িত্ব ছিল না। চাপ ছিল না। বিন্দাস দিন কাটাতাম। এখন কাজের চাপ। সংসারের চাপ। মেয়েকে দেখা। মাঝেমধ্যে তো দম ফেলার সময় পাই না।
আমি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি করলেও, পুজোর প্রেম কী জিনিস, কোনওদিন অনুভব করিনি। কড়া শাসনের মধ্যে থাকতাম। তবে আমার বন্ধুবান্ধবরা প্রেম করত। কম বয়সে দু-একটা প্রেমের প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। তবে একেবারেই প্রশ্রয় দিইনি। মা-বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতাম। আইসক্রিম খেতাম। চিপস খেতাম। গ্যাস বেলুন ওড়াতাম। তখন আমাদের বিলাসিতা বলতে এইটুকুই। খুব ভাল লাগত। কয়েকজন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ আছে। ফেসবুকের দৌলতে। জানি কে কোথায় থাকে। তবে দেখা-সাক্ষাৎ খুব কম হয়। আসলে সংসারে জড়িয়ে পড়লে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা মেয়েদের পক্ষে একটু কঠিন হয়ে পড়ে। পুজোয় তো কোনওভাবেই যোগাযোগ হয় না। আপাতত মেয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুজোর ছুটি কাটাচ্ছি। এনজয় করছি।
দেবলীনা কুমার
পুজোর আগে ছিল দারুণ ব্যস্ততা। ‘রক্তবীজ’ রিলিজ করেছে। ছবির প্রচারে অনেকটা সময় দিতে হয়েছে। যেতে হয়েছে বিভিন্ন চ্যানেলে। বসতে হয়েছে পুজোর আড্ডায়, শ্যুটিংয়ে। কিছু ব্র্যান্ডের কাজও ছিল। পাশাপাশি ছিল কিছু শো। মোটামুটি পঞ্চমী পর্যন্ত কেটেছে এইভাবেই। পুজোর দিনগুলো নরম্যালি আমি কাটাই পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। আমাদের পুজো ত্রিধারা। বাড়ির দোরগোড়ায়। সেখানেও হয় জমজমাট আড্ডা। আসলে ওই পুজোটা ক্লাবের পুজো বলে মনে হয় না। মনে হয় আমার বাড়ির পুজো। মাঝেমধ্যে একটু বেরোনোর ইচ্ছে আছে। তবে ঠাকুর দেখার জন্য নয়। একটু বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা, সময় কাটানো।
খেতে আমি খুব ভালবাসি। পুজোর সময় ভাত, মাংস তো হবেই। বিশেষত মাটান। পুজোর খিচুড়ি প্রসাদ খেতে পছন্দের।
সার বছর টুকটাক কেনাকাটা হলেও, পুজোর সময় আলাদাভাবে কেনাকাটা করতেই হয়। এখনও আমাদের বাড়িতে গুরুজনরা টাকা দেন। মা, বাবা, শাশুড়ি, দিদা আগে শুধুমাত্র আমাকে টাকা দিতেন। এখন আমাকে এবং আমার বরকেও টাকা দেন। আমরাও তাঁদের দিই। পুজোর সময় কেনাকাটা করতে খুব ভাল লাগে। এনজয় করি। পুজোর দু’বেলা আমি শাড়ি পরতেই পছন্দ করি। ছোটবেলা থেকেই। এবারও তাই করব।
সারা বছর বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। বেড়াতে বা কাজের সূত্রে। তবে পুজোর সময় আমি কলকাতায় থাকতেই বেশি পছন্দ করি। বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। পুজোর পরেও বেড়াতে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা আমাদের নেই। কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কার্নিভালে অংশগ্রহণ করি। আমার শ্বশুরবাড়িতে খুব বড় করে লক্ষ্মীপুজো হয়। সেখানে থাকি। তাই পুজোর আগে বা পুজোর দিনগুলোর মতো, পুজোর পরেও আমার দুই বাড়িতেই খুব চাপ থাকে। লক্ষ্মীপুজোর পর শুরু হয়ে যায় কাজ। তাই বেড়ানোর কথা ভাবতে পারি না।
অনুপম রায়
এবার পুজোয় আমি কলকাতায় নেই। বাইরে এসেছি। বিদেশে। আমেরিকায় কয়েকটি অনুষ্ঠান আছে। পুজো উপলক্ষে অনুষ্ঠান। সেগুলো সেরে যাব ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস। এই অনুষ্ঠানগুলো চলবে নভেম্বর পর্যন্ত।
পুজোয় মুক্তি পেয়েছে ‘দশম অবতার’। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি। আছে আমার গান। পুজোর আগে জোরকদমে চালিয়েছি প্রচার। ছবি ও গানের ফিডব্যাক ভালই।
প্রবাসের পুজো ভালই এনজয় করছি। এখানেও ছড়িয়ে রয়েছে পুজো-পুজো গন্ধ। প্রবাসী বাঙালিরা খুব আন্তরিক। চেষ্টা করেন ত্রুটিহীন আয়োজনের। আমি বহু বছর ধরেই পুজোর সময় বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান করতে গেছি বা যাই। একটা অন্যরকম স্বাদ পাই। অন্যরকম পরিবেশ। বাংলার থেকে অনেকটাই আলাদা। তবু ভাল লাগে। মন ছুঁয়ে যায়। এখানে যাঁরা পুজো এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তাঁরাও তো বাঙালি। যেখানে বাঙালি, সেখানেই দুর্গাপুজো। প্রবাসী বাঙালিরা পুজোর সময় আমাদের কলকাতার অভাব অনুভব করতে দেন না।
ইন্ডাস্ট্রিতে আমার বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে আমার গান বাজে। প্রথম যখন পুজো মণ্ডপে আমার গান শুনেছিলাম, একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। মনের মধ্যে ভাললাগার জন্ম হয়েছিল। আনন্দ লেগেছিল খুব। একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, বেশ কয়েক বছর ধরে আবার বাংলা পুজোর গান নিয়ে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। বেসিক এবং সিনেমার গান বিভিন্ন মণ্ডপে শোনা যাচ্ছে। যেমন সাত-আট-নয়ের দশকের শোনা যেত। এটা খুবই ভাল দিক গান-বাজনার পক্ষে। আমাদের পক্ষেও।
পুজোর সময় পেটপুজোর একটা ব্যাপার আছে। আমি পছন্দ করি ফুচকা, চাউমিন, বিরিয়ানি, নাড়ু, গজা। ক্যাজুয়েল পোশাক পরতেই ভালবাসি। আমার বেড়ে ওঠা ঠাকুরপুকুরে। কম বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতাম। পুজোর চারটে দিন। তাদের কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ আছে। বাইরে অনুষ্ঠান করতে গেলে দেখা হয়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে সবাই আজ প্রতিষ্ঠিত।
তৃণা সাহা
এবারের পুজো আমাদের কাছে ভেরি ভেরি স্পেশাল। এবার আমি এবং নীল দুর্গা পুজো করছি। পুজোটা অগ্রদূত ক্লাবের পুজো। এই বছর থেকে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। বেশিরভাগ সময় ওখানেই কেটে যাচ্ছে। সারা বছর ডায়েট করে চলতে হয়। কিন্তু পুজোর ক’টা দিন ডায়েটের কথা মাথায় থাকে না। সবকিছু খাওয়াদাওয়া চলে। ফুচকা আমার খুব প্রিয়। পাশাপাশি ভালবাসি বিভিন্ন ধরনের স্ট্রিট ফুড। যেমন চাউমিন, এগরোল, বিরিয়ানি। আসলে এগুলো আমাদের কাছে নস্টালজিয়া।
এবার আমার পুজোর সাজগোজে থাকছে ইন্ডিয়ান এবং ইন্দো ওয়েস্টার্ন। পুজোর সময় ওয়েস্টার্ন আমি একেবারেই পরি না। নর্মাল বেরোলেও জিন্সের সঙ্গে শার্ট নয়, কুর্তি পরি। অষ্টমীর অঞ্জলিতে শাড়ি মাস্ট। আসলে পুজোর প্ল্যানিং সেভাবে আলাদা করে কিছু থাকে না। যখন যেটা মনে আসে, করি। কখনও পাড়ায় আড্ডা মারি। কখনও ঠাকুর দেখতে যাই। এইভাবেই দিন কেটে যায়। এবার রয়েছে কয়েকটা পুজো পরিক্রমার দায়িত্ব। সেগুলো এনজয় করছি।
পুজোর সময় পুরনো দিনের কথা খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে পুজোর মেলার কথা। এখন খুব বেশি পুজোর মেলা বসে না। সেই মেলাগুলো খুব মিস করি। আগে পুজোর সময় ম্যাডাক্স স্কোয়্যারে চুটিয়ে আড্ডা মারতাম। এখন আর সেটা হয়ে ওঠে না। পুজোর সময় ম্যাডক্স স্কোয়্যারের অনুষ্ঠান শোনা খুব মিস করি। বিশেষত রূপম ইসলামের গান ‘নীল রং ছিল ভীষণ প্রিয়’। আহা, কী সব দিন ছিল তখন। এখন ক্লাব লাউঞ্জ এবং বাড়িতেই লোকজন বেশি সময় কাটান। আমাদের নিজেদের পুজোয় আড্ডার ব্যাপারটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
পুজোর সঙ্গে পুজোর প্রেমের নিবিড় সম্পর্ক। কম বয়সে দাদার কোনও এক বন্ধু বা পারিবারিক কোনও বন্ধুর সঙ্গে চোখাচোখি হয়েছে। কখনও হাতে হাত ছুঁয়ে গেছে। তখন এগুলো ছিল বিরাট ব্যাপার। এখনকার ছেলে-মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে ইনোসেন্স ভাব। ইচ্ছেমতো তারা প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করে। হাত ধরে ঘোরে। এটা এখন খুব নরমাল ব্যাপার হয়ে গেছে। তখন ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না।
পুজোর সময় আমাকে কলকাতার বাইরেও কাটাতে হয়েছে। দিল্লিতে। পড়াশোনার সময়। খুব কষ্টে কেটেছিল সেই বছর। ভীষণভাবে মিস করেছি কলকাতার পুজো। তারপর থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুজোয় কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাব না। এখানেই থাকব। পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মারব, খাওয়াদাওয়া করব। ঘোরাঘুরি করব। যেমনটা করছি এইবার।
নাইজেল আকারা
এবার পুজোয় আমি কলকাতার বাইরে থাকছি। বেঙ্গালুরু। কাজের সূত্রে। তাই কলকাতার পুজো মিস করছি। আমি খেতে ভালবাসি। কোনও বিশেষ ছবির ক্ষেত্রে পরিচালকের কথামতো ডায়েট করতে হয়। না হলে আমি খুব একটা মেইনটেইন করি না। যা ভাল লাগে তাই খাই। পুজোর সময় বাড়িতে থাকে এলাহি আয়োজন। আমার মতো আমার স্ত্রীও প্রচণ্ড খাদ্যরসিক। পুজোর সময় খাবার প্ল্যানিং সে-ই করে। কোনওদিন মাটন, কোনওদিন লুচি, কোনওদিন পোলাও। আমি আনন্দ করে খাই। এবার সেগুলো মিস করছি।
কলকাতায় থাকলে পুজোয় ঠাকুর দেখি। কখনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে হয়, কখনও প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যেতে হয় পুজো পরিক্রমার জুরি হিসেবে। ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতে দারুণ লাগে। তবে বেশি ভাল লাগে ফ্যামিলির সঙ্গে বেরোতে। আমরা নরমালি একটু রাতের দিকে বের হই। ঘুরে বেড়াই বিভিন্ন প্যান্ডেলে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাই। ফুচকা খাই, আইসক্রিম খাই। এটাই আমার বেশি ভাল লাগে।
বেঙ্গালুরুতে দুর্গাপুজো হয়। স্থানীয় বাঙালিরা আয়োজন করেন। এর আগে আমি পারফর্ম করেছি। এবার অবশ্য আসা অন্য কাজে। তবে ওই পুজোটা দেখার ইচ্ছা আছে। চেষ্টা করব ওখানে অঞ্জলি দেওয়ার।
আমি ক্যাজুয়াল পোশাক পরতে বেশি ভালবাসি। পুজোতেও তাই। পছন্দ করি জিন্স টি-শার্ট। পুজোর সময় অবশ্যই ধুতি-পাঞ্জাবি পরি। দু-তিন দিন তো বটেই।
পুজোয় রাজ্যের বাইরে গেলেও বিদেশে কখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বিদেশের পুজো কীরকম, আমার জানা নেই। পুজোর সময় কলকাতা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই শুনতে পাই ঢাকের আওয়াজ। একটা অন্যরকম আবহাওয়া তৈরি হয়। বাইরে যাঁরা থাকেন তাঁরা পুজোয় কলকাতায় আসেন। আনন্দ, হইচই হয়। বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আড্ডা হয়। এসব ছেড়ে কার ইচ্ছে করে বাইরে যেতে? কিন্তু কাজ থাকলে যেতেই হয়। বাধ্য হয়ে। আমাদের পাড়া গড়িয়া। বিরাট পুজো হয়। কলকাতায় থাকলে প্রতিটি ইভেন্টে আমি অংশগ্রহণ করি। ঢাক বাজিয়েছি পাড়ার প্যান্ডেলে।
পুজোর সময় মাঝেমধ্যেই নস্টালজিক হয়ে পড়ি। পুরনো দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। আমার স্ত্রী-ই আমার প্রেমিকা। বিয়ের আগে পুজোয় ওর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো ছিল দারুণ। আলাদাভাবে দেখা করা, সময় কাটানো, মুহূর্তগুলো ছিল অন্যরকম। পুজোর সময় ছেলে এবং মেয়েরা সেজেগুজে বেরোয়। কম বয়সে আমাদের মনে হত, যেভাবে হোক একটা গার্লফ্রেন্ড করতেই হবে। অন্তত পুজোর দিনগুলোর জন্য। সেই দিনগুলো আমি পেরিয়ে এসেছি। এখনকার পুজোর প্রেম অন্যরকম।
পুরনো বন্ধু বা বান্ধবীরা এখন প্রত্যেকেই জীবনের প্রতিষ্ঠিত। কখনও কখনও কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। কথাবার্তা হয়। দেখা হয় কাজের সূত্রেও। কারণ আমার অফিস আমার পুরোনো পাড়ায়।
আগে আমাদের পুজো শুরু হত মহালয়ার দিন রেডিওয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার মাধ্যমে। এখনও শুনি। মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্রপাঠ দূর থেকে ভেসে আসে। বুঝতে পারি কোনও না কোনও বাড়িতে রেডিও চলছে। এইসব নিয়েই আমার পুজো।
লগ্নজিতা চক্রবর্তী
সংগীত শিল্পীরা সাধারণত পুজোর সময় নিজের ইচ্ছেমতো সময় কাটাতে পারেন না। প্রতিদিন কোনও না কোনও মণ্ডপে অনুষ্ঠান থাকে। আমারও তাই। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত রোজ অনুষ্ঠান। কলকাতায় নয়, আমার এবারের পুজোটা কাটছে কলকাতার বাইরে। চেন্নাই, হায়দরাবাদে। যেখানে যেখানে অনুষ্ঠান থাকবে, সেখানে সেখানে মা দুর্গার মুখ দেখব। কয়েকটা দেখেওছি। অনুষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়েই আমি পুজো উদযাপন করি। পুজোয় অনুষ্ঠান না থাকলে পুজো উদযাপন মাটি হয়ে যায়। সংগীতশিল্পীরা এই ভাবেই পুজো উপভোগ করেন।
পুজোয় অঞ্জলি দিতে ভালবাসি। তবে কোনও কোনও সময় সকালের দিকে একটা শহর থেকে আরেকটা শহরে উড়ে যেতে হয়। তাই সুযোগ পাই না। সুযোগ পেলে অবশ্যই অঞ্জলি দেব। বরণ করতেও আমার খুব ভাল লাগে। কিন্তু সেই সুযোগটাও হয়ে ওঠে না। কারণ, আমি কলকাতায় ফিরি সাধারণত একাদশীর পরে। তবে যদি কখনও সুযোগ পাই, দেবীবরণ অবশ্যই করব।
পুজো উপলক্ষে আলাদা করে কেনাকাটা আর হয় না। কারণ সারা বছরই টুকটাক কেনাকাটা চলে। অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা পোশাক পরতে হয়। পুজোর সময় স্পেশাল খাওয়াদাওয়া তেমন কিছু হয় না। যা পাই তাই খাই। কারণ প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান। উড়ে বেড়াতে হয়, ঘুরে বেড়াতে হয়। আসলে আমাদের কাছে পুজো মানে কাজ। এটা উপার্জনের বড় সময়। এইভাবেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।