প্রতিবেদন: চূড়ান্ত ব্যর্থতা মেনে নিয়েই কাশ্মীরে এবার মুখরক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠল নরেন্দ্র মোদির সরকার। জঙ্গিদের খোঁজে একদিকে লাগাতার তল্লাশি অপারেশন, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকসেনার গুলির জবাব দিয়ে পহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসবাদীদের তাণ্ডবের ঘটনায় নিজেদের অপদার্থতাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা। শুক্রবার সকালে পহেলগাঁওয়ে হামলাকারী ৪ জঙ্গির খোঁজে জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়ায় তল্লাশি অভিযানে নামে পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ। স্থানীয় এক মহিলা দাবি করেছিলেন, ওই ৪ জঙ্গিকে এলাকায় দেখা গিয়েছে। পুলওয়ামা এবং বারামুলাতেও চলে জোরদার তল্লাশি অভিযান। জম্মুও কাশ্মীর ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে এক নিষিদ্ধ সংগঠন এলাকায় দেশবিরোধী কাজকর্ম চালাচ্ছে বলে খবর পেয়ে বেশ কয়েকটি এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। একই সঙ্গে দুর্গম পাহাড়-জঙ্গলে যৌথ তল্লাশি অভিযানে নামে বায়ুসেনা এবং পদাতিক বাহিনী। ড্রোন এবং কপ্টারের সাহায্যে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে বের করার অপারেশন চালায় সেনা। লক্ষণীয়, বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে কেন্দ্রের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু স্বীকার করেছিলেন পহেলগাঁওতে নিরাপত্তার গাফিলতি এবং ব্যর্থতার কথা। সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী শুক্রবারই শ্রীনগরে পৌঁছে জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন-পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে যুক্ত
গুলিতেই জবাব পাকসেনাকে
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে জম্মু-কাশ্মীরের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে গুলি চালায় পাকসেনা। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে জবাব দেয় ভারতীয় সেনা। কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য পিছু হটে পাকসেনা। কোনও হতাহতের খবর নেই। প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি স্পেকুলেটিভ ফায়ারিং? নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দিতেই কি এটা পাকিস্তানের কৌশল?
ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বিশ্লেষণ
ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করে পহেলগাঁওয়ের হামলার পিছনে থাকা জঙ্গিদের খোঁজার কাজ চলছে জোরকদমে, এমনই দাবি জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী সূত্রে৷ এই প্রসঙ্গেই সামনে আসছে বৈসরণ এলাকার রিসর্টের পাশের দুই চা বিক্রেতা এবং এক ভেলপুরীওয়ালার অস্তিত্ব৷ ঘটনার দিন থেকেই এই তিনজনই নিখোঁজ৷ একসঙ্গে তিনজন বিক্রেতার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে একেবারেই সাদা চোখে দেখছেন না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ তাঁরা বুঝতে পারছেন কোথাও একটা ‘মিসিং লিঙ্ক’ আছে৷ এখানেই গোয়েন্দাদের সন্দেহ হচ্ছে জঙ্গি হামলার আগে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের সামনে প্রয়োজনীয় ইনপুট সরবরাহের কাজ করেছিল এই তিন বিক্রেতাই৷ এরাই হতে পারে গোটা হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকা জঙ্গিদের প্রধান হ্যান্ডলার৷ তাদের খোঁজেও শুরু হয়েছে জোরদার তল্লাশি।
পাকিস্তানের মদতে পহেলগাঁওয়ের রিসর্টে হামলা চালানো জঙ্গিদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক মোবাইল ফোন৷ আর এই ফোনেই ছিল ‘অ্যালপাইন কোয়েস্ট’ নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন৷ ইন্টারনেট ছাড়া অফলাইনে কাজ করতে পারা এই নেভিগেশন অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করেই বৈসরণ উপত্যকার রিসর্টে ঢুকে নিরীহ পর্যটকদের উপরে নির্বিচারে গুলি চালাতে পেরেছিল জঙ্গিরা, এমনটাই মনে করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী।