প্রতিবেদন: বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের বিদেশনীতি মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে। কতদিনে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। এই ছন্নছাড়া পরিবেশেও কেন্দ্রীয় সরকারের একমাত্র লক্ষ্য আদানি গোষ্ঠীর যেন কোনও ক্ষতি না হয়। গত ১২ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক একটি সার্কুলার (অফিস মেমো নং ৯-৫-২০১৭-ট্রান্স-পার্ট ১) জারি করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পর্কিত নিয়মাবলিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন করে।এই সংশোধনীতে বলা হয়েছে, যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি প্রতিবেশী দেশগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা বিদেশি বাজারে অসুবিধার সম্মুখীন হলে ভারতে তাদের উৎপাদন বিক্রি করতে পারবে৷
আরও পড়ুন-আইআইটিকে ১২০ কোটি টাকার জিএসটি নোটিশ, রামদেবের পতঞ্জলিকে পাঁচ বছরের আয়কর ছাড়!
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানের কারণে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে আসেন। কেন্দ্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপটি বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে এবং আদানি পাওয়ারকে বিপুলভাবে উপকৃত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে ভারতের পূর্ব প্রতিবেশী দেশে আদানি গোষ্ঠীই একমাত্র একচেটিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহকারী। বাংলাদেশে এই পট পরিবর্তনের ফলে সেদেশে ব্যবসা বাণিজ্য করা ভারতীয় সংস্থাগুলির মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আদানি গোষ্ঠীর। কারণ, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানি পাওয়ারের ৮০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি-এর অধীনে একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা অস্ট্রেলিয়ায় আদানি গ্রুপের খনি থেকে কয়লা উৎপন্ন করে, গত বছর বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু করে। এই চুক্তি নিয়েও বাংলাদেশে বিতর্ক আছে। অনেকেই এই চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে সেখানে। এই প্রেক্ষাপটে আদানিদের চিন্তা ছিল বাংলাদেশ যদি চুক্তি বাতিল বা স্থগিত ঘোষণা করে তাহলে কী হবে? ভারত সরকারের নিয়ম ছিল বিদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনুমোদিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করা যাবে না।
আরও পড়ুন-১,৫৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে রাজ্য, বরাদ্দ খরচে দেশে দু’নম্বরে বাংলা
গোড্ডায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আদানিদের বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেবার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন যদি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হয় তবে সংকটের মধ্যে পড়বে আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু কেন্দ্রে মোদি-শাহ কুর্সিতে থাকতে আদানি গোষ্ঠীর চিন্তা কীসের? ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটার সাতদিনের মধ্যেই তাই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক বিভাগীয় সার্কুলার দিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছে বিদেশে সরবরাহ করতে না পারলে দেশের অভ্যন্তরে সেই বিদ্যুৎ সরবরাহে বাধা থাকছে না। সার্কুলারটিতে বলা হয়েছে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রের সঙ্কটমোচনের উদ্দেশ্যেই এই পরিবর্তন। তবে সার্কুলারে এটা বলা হয়নি যে, আদানিদের গোড্ডা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রই দেশের একমাত্র কোম্পানি যারা বিদ্যুৎ বিদেশে সরবরাহ করে। অর্থাৎ শুধু আদানিদের সুবিধা করে দিতেই বিশেষ নিয়ম লাগু করল মোদি সরকার।