প্রতিবেদন : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় আগেও বলেছেন, মঙ্গলবারও বললেন, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র তুলনা করা ঠিক নয়। কেন্দ্রের উপার্জনের নানা পথ রয়েছে। রাজ্যের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। ফলে সংকট। মনে রাখতে হবে বাম আমলে ৩৩% ডিএ দেওয়া হত, এখন ১০৬%। তার সঙ্গে রয়েছে নানা সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা। মুখ্যমন্ত্রী যখন একথা বলছেন, তখন মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানালেন, ১৮ মাসের বকেয়া ডিএ দেবে না কেন্দ্র। কোন ১৮ মাস? কোভিডের সময়ের ১৮ মাস। ওই সময় কেন্দ্র কর্মীদের ডিএ ফ্রিজ করে রেখেছিল।
আরও পড়ুন-চাকরি কেড়ে বিপদে ফেলবেন না ওদেরকে
কোষাগারে ঢুকেছিল ৩৪,৪০২ কোটি টাকা। সেই টাকা কর্মীদের। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থ রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধূরী স্পষ্ট একথা জানিয়েছেন। ফলে যারা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবি জানাচ্ছিলেন কেন্দ্রের এই বঞ্চনার পর কী বলবেন? মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছেন, রাজ্য ডিএ দিতে চায়। কেন্দ্রের বঞ্চনায় দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু রাজ্য সরকারের চাকরি করে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ চাওয়াটা কী সঠিক? কেন্দ্রের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আছে, টাকা ছাপার অধিকার আছে, জিএসটি আছে। রাজ্যের কিছুই নেই। তার উপর ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বকেয়া। ক্ষমতায় আসার সময় শিক্ষকরা সময়ে বেতন পেতেন না। পেনশন পেতেন না। এখন ১ তারিখে হয়। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ডিএ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য তার শেষটুকু দিয়ে কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্র পরিস্কার বলছে, বকেয়া ডিএ-ই দেব না। ১০০ দিনের কাজের ৭ হাজার কোটি টাকা বাকি। গ্রামীন রাস্তা, আবাসনে টাকা দিচ্ছে না। তার মাঝেও সরকার একাধিক মানবিক প্রকল্প চালু রেখেছে। পেনশন চলছে, ফ্রিতে রেশন চলছে, জয় জোহার চলছে। চলছে আরও অনেক প্রকল্প। সবটাই মানবিক দিক থেকে ভাবলে সমস্যা এতটা হয় না। কেন্দ্রের সবকিছু থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ১৮ মাসের বকেয়া দেবে না বলছে!
আরও পড়ুন-সংখ্যালঘু ভোটাররা আস্থা রাখেন জোড়া ফুলেই
তাঁরা যে হারে ডিএ পাচ্ছেন তার বেশি হারে দেওয়া আপাতত এই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। কারণ রাজ্য আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। আলিপুর জজ কোর্টে আজ ঋষি অরবিন্দের জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের বেতন কাঠামোর বরাবরই ফারাক রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্কুলের মাইনে একরকম, রাজ্যের স্কুলের মাইনে আর একরকম। তাঁর কথায়, এর পরেও আমরা কিন্তু ডিএ দিয়েছি। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সমস্ত সুপারিশ মেনে নিয়েছি।
আরও পড়ুন-কর্মীদের ভোটার তালিকায় জোর দিতে নির্দেশ
এ ব্যাপারে বলতে গিয়ে বাম জমানার সঙ্গে তুলনাও টেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা যথাসময়ে বেতন বা পেনশন পেতেন না। পনেরো দিন-এক মাস সময় লেগে যেত। এখন সে পরিস্থিতি নেই। মাসের ১ তারিখে মাইনে হয়। যে সরকার নিজে থেকেই এত মানবিক তাকে আর কী বলা যেতে পারে! মুখ্যমন্ত্রী এদিনও বোঝাতে চান যে কেন্দ্র আর্থিক অবরোধ করায় রাজ্য সংকটে রয়েছে। তিনি বলেন, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। রাস্তার টাকা, আবাস যোজনার টাকাও কেন্দ্র দিচ্ছে না। ফলে রাজ্যকেই পেনশন, স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প, খাদ্যসাথী প্রকল্পের মতো সামাজিক সুরক্ষা খাতে খরচ বহন করতে হচ্ছে। একা একটা সরকারের পক্ষে এর চেয়ে বেশি আর সম্ভব নয়।