প্রতিবেদন : কেন্দ্রের রেশন জালিয়াতি নিয়ে রাজ্য জুড়ে জোরদার প্রচারে নামতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি সরকার যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা বাংলার রেশন মডেল স্রেফ টুকলি করে অন্য নাম দিয়ে শুরু করতে চলেছে সেকথাই রাজ্যবাসীকে জানাবে দল। তৃণমূল কংগ্রেসের স্পষ্ট বক্তব্য, এটা কেন্দ্রের রেশন জালিয়াতি ছাড়া অন্য কিছু নয়। এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন বিনামূল্যে দিচ্ছেন একাই৷ হাততালি কুড়ানোর চেষ্টা৷ এভাবে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা মুর্শিদাবাদে, হতাহতের খবর নেই
দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ভরতুকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যে করে দেখিয়েছেন। সেই মডেল টুকলি করা হয়েছে৷ বিজেপি মানুষকে ভাঁওতা দিচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের লাগাতার প্রচার শুরু হবে৷ বিনামূল্যে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য— এসবই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থিম। আমরা নিশ্চিত ভাবে মানুষের কাছে যাব। বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুসরণ করছে৷ আগের প্রকল্প থেকে সরে আসছে। এই জালিয়াতি ব্যাপক ভাবে প্রচারে আমরা তুলে ধরব। কেন্দ্রের এই রেশন জালিয়াতি তোলপাড় ফেলে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক সাংসদ-মন্ত্রী-বিধায়ক এবিষয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রকে তুলোধোনা করেছেন।
আরও পড়ুন-বিশ্বাসই হচ্ছে না আমি এক নম্বর ব্যাটসম্যান: সূর্য
এমনিতেই কেন্দ্রের একের পর এক জনবিরোধী সিদ্ধান্তে জেরবার দেশবাসী৷ মূল্যবৃদ্ধির চাপে দমবন্ধ অবস্থা গরিব ও মধ্যবিত্তের। এই অবস্থায় রেশনের বাড়তি খাদ্যসামগ্রীর ওপর নির্ভর করে থাকা কোটি কোটি মানুষের কাছে বিজেপি সরকারের এই তুঘলকি সিদ্ধান্ত তাদের জীবন দুঃসহ করে তুলবে। ফলে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তুলতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বুলুচিক বরাইক, মন্ত্রী : লক্ষ্য ২০২৪। বিজেপির ভোট রাজনীতি শুরু। পঞ্চায়েত ভোট আসছে, তাই এবার রেশন নিয়ে খেলতে নেমেছে বিজেপি। করোনার সময় আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বহু প্রকল্প নকল করে কেন্দ্র অন্যান্য রাজ্যে লাগু করেছে। এবার মানুষকে বঞ্চিত করে কেন্দ্রের ভাঁড়ার বাড়াচ্ছে।
সত্যজিৎ বর্মন, মন্ত্রী : শুধুমাত্র রেশন জালিয়াতি নয়, কেন্দ্র সাধারণ মানুষদের সবক্ষেত্রেই ঠকাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া করে দিয়ে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ডিজেল-পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। এই সরকারের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত।
সন্ধ্যারানি টুডু, মন্ত্রী : উজ্জ্বলা যোজনার নামে উন্নয়নের ‘গ্যাস’ খাওয়ানো হয়েছিল। আদিবাসী এলাকাগুলিতে একশো দিনের কাজ অন্যতম রোজগার, সেই প্রকল্পের টাকাও বন্ধ। এবার রেশন কারসাজি। জঙ্গলমহলের মানুষ জানেন ওদের খেলা গরিবদের বঞ্চিত করার জন্য। দিদি ছাড়া কেউ গরিবদের পাশে দাঁড়ায় না, জঙ্গলমহল জানে।
বীরবাহা হাঁসদা, মন্ত্রী : গরিব যোজনা এই নাম কেন? গরিব মানুষ পাবে বলে? দয়া করছে নাকি? এই নাম নিয়ে আমার আপত্তি আছে। এই নাম দেওয়ার মানে এক শ্রেণির মানুষকে আলাদা ক্যাটাগরিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফের প্রকল্পের নাম পাল্টে সাধারণ মানুষের সঙ্গে জালিয়াতি করা হচ্ছে।
অরূপ রায়, মন্ত্রী : আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা, তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত বিভিন্ন প্রকল্প বাংলার আর্থ-সামাজিক চিত্রটাকেই আমূল বদলে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা রেশন মডেলে তারই স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। জননেত্রীর ভাবনাকে নকল করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু মানুষ ধরে ফেলেছেন বিজেপির ভাঁওতাবাজি।
পুলক রায়, মন্ত্রী : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে এখন মানুষ ঠকানোর পথ ধরেছে গেরুয়া দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেশন মডেল বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে অনেক সহজ করে তুলেছে। এখন সেটাই নকল করে রাজনৈতিক চমক দিতে চাইছে বিজেপি। তাদের এই ভূমিকা আসলে অর্থনৈতিক অনগ্রসর মানুষকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত।
ডাঃ শান্তনু সেন, সাংসদ : বিজেপি জমানায় সব জিনিসের দাম বাড়ছে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগে রান্নার গ্যাসের দাম কমেছে। নির্বাচন শেষেই আবার দাম বেড়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছেন। বিজেপি মানুষের সঙ্গে জালিয়াতি করছে। সাম্প্রতিক রেশন নিয়ে এই সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ।
জহর সরকার, সাংসদ : রেশন রাজনীতি। হিমাচলের ভোটের ফল প্রভাব ফেলবে একাধিক রাজ্যের ভোট ও ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে। ভয় পেয়েছে বিজেপি। তাই অন্নদাতা সাজছে। খাদ্য সুরক্ষা আইন আগের সরকার আট বছর আগে পাশ করেছে। তার মান্যতা দেয়নি এই সরকার। মানুষ বিরুদ্ধে যাচ্ছে বুঝে এখন কারচুপির প্রকল্প চালু করছে।
সৌগত রায়, সাংসদ : গরিব মানুষদের প্রতি আবার বঞ্চনা কেন্দ্রের। কেন্দ্রীয় প্রকল্প, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নামে। এটাই বিজেপির রাজনীতি। এই নতুন প্রকল্পে কেন্দ্র একদিকে যেমন বঞ্চনা করবে, অপরদিকে আর্থিক সুবিধা নেবে। আমরা এর বিরোধী। চিঠি দিয়ে দু’মাস এই প্রকল্প আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র সেই প্রকল্প ফের চালু করছে।