অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : ২০২২ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট (Central Budget 2022 – 23) পেশ করেছেন দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই বাজেট আমজনতাকে সুরাহা দিতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলির। একনজরে দেখে নেওয়া যাক বাজেটের কয়েকটি ঘোষণা।
আয়কর ছাড় নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলে আয়কর কাঠামোয় কোনও বদল করলেন না অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ব্যক্তিগত কর কাঠামোও একই থাকবে বলে তিনি জানান। তবে বাজেটে (Central Budget 2022 – 23) রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাগুলিকে সাহায্য করার জন্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সমান সুবিধা দিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য কর ছাড়ের সীমা ১০% থেকে বাড়িয়ে ১৪% করার ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য করছাড়ের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। আয়করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে পেনশনভোগীদের। জাতীয় পেনশন প্রকল্পে করছাড় বেড়ে হয়েছে ১৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন – রাজ্যের উদ্যোগে নবরূপে রবীন্দ্রভবন বালুরঘাটে
অর্থমন্ত্রীর দাবি, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৯.২৭ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সোমবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষায় অন্য কথা বলা হয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারত ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে পৌঁছতে পারে। মাত্র একদিনের মধ্যে সরকারের অবস্থানের এই পার্থক্য দেখে বিরোধীরা বলছেন, অর্থমন্ত্রী নিজেই বিভ্রান্ত ! সরকারের অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যয় বরাদ্দের পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কা ছিল গত বছরের বাজেটে প্রস্তাবিত রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ খুবই সামান্য বলে উল্লেখ করেছেন।
সমবায়গুলির ক্ষেত্রে সারচার্জ ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট ট্যাক্স ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছেন। আয়কর রিটার্নে ত্রুটি সংশোধনের জন্য সময়কাল বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে আয়কর রিটার্নে ত্রুটি সংশোধন করতে ২ বছর সময় পাওয়া যাবে।
কৃষকদের কাছে উন্নতমানের গবেষণা পৌঁছে দিতে নতুন প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। ১০ লক্ষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ঋণের সুবিধা পাবেন বলে জানানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অধীনে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করা হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ব্লকচেন পদ্ধতিতে এই মুদ্রা লেনদেনের তথ্য রাখা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ডিজিটাল মুদ্রার প্রবর্তন ডিজিটাল অর্থনীতিতে একটি বড় উৎসাহ দেবে। ডিজিটাল মুদ্রা আরও সস্তা এবং দক্ষ মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা হবে।
ব্লকচেন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২২-২৩ সাল থেকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জারি করবে ডিজিটাল মুদ্রা।
সমস্ত সরকারি ক্রয়ের জন্য অনলাইন ই-বিল-এর সুবিধার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। ৮টি ভাষায় জমি রেকর্ডের নথি রাখার ঘোষণা করেন তিনি। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের অধীনে ফসল কেনার জন্য ২ লক্ষ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)-এর জন্য নতুন আইন আনা হবে। ২০২২-২৩ এর মধ্যে ৫জি মোবাইল পরিষেবা চালু হবে। ২০২৫-এর মধ্যে সব গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবারের পরিকল্পনা রয়েছে। ‘গ্রিন ক্লিয়ারেন্স’ পোর্টালের পরিধি বাড়ানো হবে।
নগর পরিকল্পনার জন্য উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি তৈরি করা হবে। ২০২২ সালে প্রতিটি পোস্ট অফিস কোর ব্যাঙ্কিং করতে পারবে। দেড় লক্ষ পোস্ট অফিসকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার অধীনে আনা হচ্ছে। এই পোস্ট অফিসগুলিতে নেট ব্যাঙ্কিং, অনলাইন ব্যাঙ্কিং, এটিএমের সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাজেটে ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাবেন ৮০ লক্ষ পরিবার। রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে যৌথভাবে এই যোজনা রূপায়িত করবে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে ২০২২-২৪ এর জন্য ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার চিহ্নিত যোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য বাড়ি তৈরি করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেট প্রস্তাবে এই প্রকল্পের জন্য ৪৮,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নের জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে ঘোষণা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর।
তিনি বলেন, দেশের ৭৫টি জেলায় ৭৫টি ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ইউনিট করা হবে। দেশে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং, ডিজিটাল পেমেন্ট দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংয়ের সুবিধাগুলি যাতে গ্রাহক-বান্ধব পদ্ধতিতে প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যায় তা নিশ্চিত করতে সরকার উৎসাহ দেবে।
৫টি নদী সংযোগ প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে ঘোষণা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর। তবে এদিন তিনি শুধুমাত্র একটি প্রকল্পের জন্যই অর্থ বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন। সেটি হল উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশের কেন-বেতওয়া নদী সংযোগ প্রকল্প। বরাদ্দ হয়েছে ৪৪,৬০৫ কোটি টাকা। অন্য নদী সংযোগ প্রকল্পগুলির বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। ৩ কোটি ৮০ লক্ষ পরিবারকে কলের জল পৌঁছে দিতে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তাঁর ঘোষণা, পার্বত্য অঞ্চলে জাতীয় রোপওয়ে তৈরি হবে। ৬০ কিমি দীর্ঘ ৮টি রোপওয়ে চালু হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহ দিতে ২ লক্ষ ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ আর্থিক বছরে ২৫ হাজার কিলোমিটার জাতীয় সড়ক প্রসারিত হবে।
পরিকাঠামো নির্মাণে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। শেয়ারবাজারে আসছে জীবনবিমা নিগমের আইপিও। রেলে পিপিপি মডেলকে আরও উৎসাহ দেওয়া হবে। তিন বছরে ৪০০টি নতুন ‘বন্দে-ভারত’ ট্রেন চালু করা হবে। স্থানীয় ব্যবসায় উৎসাহ দিতে ওয়ান প্রোডাক্ট প্রকল্প চালু করা হবে। দেশের আর্থিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে ‘পিএম গতিশক্তি’ মাস্টার প্ল্যান আনা হচ্ছে।