২০২২ সালের শুরু থেকে লাদাখের দুটি কেন্দ্র (লেহ ও কারগিল) সহ সারা দেশে এনআরএ সিইটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিইটি পরিচালনার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সুগম করা হবে। ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি (এনআরএ) হবে প্রতি বছর সিইটি পরিচালনার নোডাল এজেন্সি। সিইটি নন-গেজেটেড পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত প্রিলিম স্তরের পরীক্ষা প্রতিস্থাপন করবে। সুতরাং এই সমস্ত পরীক্ষার পরীক্ষার্থীদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। আগামী বছরের শুরুতেই পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন-যৌনতায় অভ্যস্তকেও ধর্ষণ গুরুতর অপরাধ: কেরল হাইকোর্টের দৃষ্টান্তমূলক মন্তব্য
ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কিছু প্রফেশনাল নন-গেজেটেড গ্রুপ বি পদ, কিছু গেজেটেড গ্রুপ বি পদ এবং গ্রুপ সি পদগুলির জন্য এবার একটি মাত্র পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমানে কর্মী নিয়োগের জন্য ইউপিএসসি, এসএসসি-র মতো নিয়োগকারী সংস্থা কর্মী নিয়োগ করে থাকে। এর মধ্যে একদিকে যেমন আইএএস, আইএফএস, আইপিএস-এর মতো পদ রয়েছে, তার পাশাপাশি বিভিন্ন দফতরে গ্রুপ বি ও গ্রুপ সি পদস্থ আসন রয়েছে। এই সমস্ত পদগুলির জন্য আলাদা আলাদা নিয়োগ সংস্থা একই যোগ্যতার আলাদা পদে আলাদা পরীক্ষা নিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন দিল নন-টেকনিক্যাল এই সমস্ত পদগুলির জন্য এবার একটি নির্দিষ্ট প্রবেশিকা ‘কমন এলিজিবিলিটি টেস্ট (CET)’ ব্যবস্থা করার জন্য।
ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি
ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি হল জাতীয় স্তরে সাধারণ প্রবেশিকা পরীক্ষা গ্রহণের জন্য একটি প্রস্তাবিত এজেন্সি। সরকার সকল নন-গেজেটেড সরকারি পদের জন্য একক কম্পিউটার ভিত্তিক প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটি সাধারণ যোগ্যতার পরীক্ষার সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। বর্তমানে, প্রার্থীদের সকল পরীক্ষার জন্য একটি জটিল প্রক্রিয়ার জন্য উপস্থিত হতে হয়। এটি খুবই সময়সাপেক্ষ এবং একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সরকার আড়াই কোটিরও বেশি প্রার্থীর জন্য পরীক্ষা প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য এই পদ্ধতি শুরু করতে চলেছে। সরকার গ্রুপ বি এবং সি পদের জন্য একটি মাত্র পরীক্ষা নিচ্ছে। এটি সময় কমাবে এবং প্রার্থীদের প্রতিটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য বারবার প্রস্তুতি নিতে হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-যৌনতায় অভ্যস্তকেও ধর্ষণ গুরুতর অপরাধ: কেরল হাইকোর্টের দৃষ্টান্তমূলক মন্তব্য
কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিনিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ মন্ত্রক থেকে একটি প্রস্তাবনার মাধ্যমে জানানো হয়েছে, সরকার, নিয়োগ সংস্থা এবং পরীক্ষার্থী—সবার সুবিধার কথা ভেবেই এবার থেকে একটিমাত্র নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেওয়া হবে। একটি স্পেশালাইজড এজেন্সিকে এই পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এর জন্য বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দিক জানানো হয়েছে প্রস্তাবনায়।
যেমন :
১) মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি যোগ্যতার জন্য একটি নির্দিষ্ট অভিন্ন প্রবেশিকা নেওয়া হবে।
২) পরীক্ষার্থীদের অনলাইনে একবারই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। পরীক্ষা ফি আগে আলাদা-আলাদা বিভাগের আলাদা পরীক্ষার জন্য আলাদা করে দিতে হত, এখন একটি কমন প্রবেশিকার জন্য একবারই আবেদন ফি দিতে হবে।
৩) পরীক্ষার্থীদের এই পরীক্ষার পর যে স্কোর করবেন, তা যে-কোনও সরকারি দফতরের কাছে গ্রাহ্য হবে। এমনকী চাইলে কোনও রাজ্য সরকার সমান পদের ক্ষেত্রে এই স্কোরের ভিত্তিতে নিয়োগ করতে পারেন। বেসরকারি সংস্থাও এই স্কোর গ্রাহ্য করতে পারে।
৪) এই স্কোরের বৈধতা থাকবে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত।
৫) পরীক্ষার্থীরা চাইলে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে স্কোর বাড়িয়ে নিতে পারবেন (টেট স্কোরের মতো)।
৬) পরীক্ষার্থীরা স্কোর বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য দু’বার বাড়তি সুযোগ পাবেন।
প্রতি বছর সারা দেশ থেকে প্রায় ২.৫ কোটি পরীক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। অভিন্ন পরীক্ষা চালু হলে তার স্কোরের ভিত্তিতে প্রার্থীরা নির্দিষ্ট সরকারি বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষত্রে সেই নির্দিষ্ট দফতর বা নিয়োগ সংস্থা সেট প্রাথী বাছাই করে তাদের নিজস্ব পরীক্ষা, ট্রেড টেস্ট বা স্কিল টেস্ট, পার্সোন্যালিটি টেস্ট নিয়ে নিয়োগ করতে পারবেন।
একই ছাতার তলায় অর্থাৎ একই প্রবেশিকা পরীক্ষার ভিত্তিতে পদগুলির জন্য বা যে পরীক্ষাগুলির প্রবেশিকা একত্রে নেওয়া হবে সেগুলি হল—১) এসএসসি এমটিএস পেপার -১, এসএসসি জিডি কনস্টেবল পেপার-১, এসএসসি সিএইচএসএল টিয়ার ১, এসএসসি স্টেনোগ্রাফার গ্রেড সি, এসএসসি সিজিএল টিয়ার ১, এসএসসি সিপিও টিয়ার ১, আরআরবি এনটিপিসি টিয়ার -১, আরআরবি গ্রেড-ডি টিয়ার ১, আইবিপিএস পিও প্রিলিমিনারি, আইবিপিএস ক্লার্ক প্রিলিমিনারি, আইবিপিএস আরআরবি পিও ও ক্লার্ক প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। প্রস্তাবনায় জানানো হয়েছে, এই পরীক্ষা বছরে দু’বার নেওয়া হবে। কোনও পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় সফল হলে তাঁর সার্টিফিকেটের বৈধতা তিন বছর থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
পরীক্ষা সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট
এনআরএ সিইটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধারণা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বর্তমান প্রতিযোগিতার স্তরেও ফিট হওয়ার কথা।
এই পরীক্ষাটি প্রার্থী এবং নিয়োগ সংস্থা উভয়ের জন্য অর্থ এবং সময় সাশ্রয় করবে।
দশম, দ্বাদশ এবং স্নাতক স্তরের জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এখনও পর্যন্ত এসএসসি, রেল ও ব্যাঙ্কের পরীক্ষাগুলিকে এই প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে।
পরবর্তীকালে অন্যান্য জাতীয় স্তরের নিয়োগকারী সংস্থাগুলির পরীক্ষাও এর অধীনে নিয়ে আসা হতে পারে।
পরীক্ষাটি ১২টি ভিন্ন ভাষায় অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে পরীক্ষাকেন্দ্র থাকার পরিকল্পনা রয়েছে।
ন্যাশানাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি’র জন্য নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। সময় অনুযায়ী বিভিন্ন আপডেট ও বিস্তারিত তথ্য দেখে নেওয়ার জন্য https://cettest.org/ ওয়েবসাইটটি লক্ষ রাখা যেতে পারে।