বিধ্বংসী চাহাল, অবাক হার নাইটদের

নববর্ষে চিংড়ি আর ভেটকির প্রিপারেশনের ভিডিও পোস্ট করেছিল কেকেআর। দুই রাঁধুনি ডি'কক আর নরখিয়া। সহকারী মণীশ পাণ্ডে।

Must read

মুল্লানপুর, ১৫ এপ্রিল : নববর্ষে চিংড়ি আর ভেটকির প্রিপারেশনের ভিডিও পোস্ট করেছিল কেকেআর। দুই রাঁধুনি ডি’কক আর নরখিয়া। সহকারী মণীশ পাণ্ডে। তখন নাইট শিবিরে বসন্তের বাতাস। কে জানত রাতের মুল্লানপুরে ছবিটা বদলে যাবে। লেখা হবে অবাক হারের শোকগাথা! তাতে রাসেলের ছবিটাও থাকতে পারে।জেনসেনের বলে বোল্ড হয়ে পিচের মধ্যেই বসে পড়েছেন!
ইনিংস ব্রেকে রবিন উথাপ্পা আর মার্ক বাউচার আন্দাজ করছিলেন কত ওভারে কেকেআর রান তুলে দেবে। একজন বললেন ৮ ওভার। অন্যজন ১১। কে ভেবেছিল একটু পরে দুই ওভারে নাইটরা ২ উইকেট হারিয়ে ভয়ঙ্কর মুশকিলে পড়বে। হিসেব বলছিল কেকেআর যদি ১৪.১ ওভারের মধ্যে জেতে তাহলে পয়েন্ট টেবলে পাঁচ থেকে একে ঊঠে আসবে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি আসেইনি। নারিন (৫) ও ডি’কককে (২) জেনসেন-বার্টলেট ফেরত পাঠিয়ে শুরুতেই কষে ঝাঁকুনি দেন। কে না জানে লো স্কোরিং ম্যাচ কত কঠিন হয়। পাঞ্জাবের ১১১ রান তাড়া করতে গিয়ে কেকেআরও অতঃপর গুটিয়ে গেল ৯৫ রানে। ১৬ রানে হার। আইপিএলে এটাই সবথেকে কম রান করে জয়। পাঞ্জাব কিংস জিতেছে ২৯ বল বাকি রেখে।

আরও পড়ুন-নেতাজি ইনডোরে ইমামদের সভা, নবান্ন সভাঘরে দিঘার প্রস্তুতি, আজ জোড়া বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর

শুরুর বিপদ কাটিয়ে পরের ৫০ রান উঠে এসেছিল ৩১ বলে। রাহানে ও রঘুবংশীর এই পার্টনারশিপ আবার নাইটদের চালকের আসনে বসিয়ে দেয়। কিন্তু চাহালের প্রথম বলই জায়গায় পড়তে দেখে শ্রেয়স স্লিপ আর শর্ট লেগ দিয়ে ঘিরে ফেলেন। এই চাপ কমাতে রাহানে (১৭) এরপর সুইপ মারতে গিয়ে এলবি হয়ে গেলেন। তবে রিপ্লেতে ধরা পড়ল বল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে যাচ্ছিল। রাহানে রিভিউ নেননি। সম্ভবত নন স্ট্রাইকার রঘুবংশীর কথায়। এরপর সেই চাহালেই বিদ্ধ হলেন রঘুবংশী (৩৭)। কেকেআর তখন দশম ওভারে ৭২/৪।
মুশকিল হচ্ছে যে, একবার উইকেট পড়তে শুরু করলে মোমেন্টাম খুব তাড়াতাড়ি প্রতিপক্ষের হাতে চলে যায়। এখানে সেটাই হল। চাহাল ততক্ষণে বিধ্বংসী চেহারা নিয়েছেন। শেষ কবে টি-২০ ম্যাচে স্লিপ, সিলি পয়েন্ট, শর্ট লেগ নিয়ে বল করেছেন! রিঙ্কু (২) তাঁর বলে স্ট্যাম্পড হয়ে গেলেন। রামনদীপও (০) ফিরে গেলেন তাঁর বলে। তার আগে ভেঙ্কটেশ (৭) ম্যাক্সওয়েলের শিকার হন। হর্ষিত (৩) জেনসেনের ভিতরে আসা বলে বোল্ড। তবু রাসেল ছিলেন। গোটা দুয়েক ছক্কায় আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু এই রাসেল আর আগের রাসেল(১৭) নন। জেনসেনের অফ দ্য পিচ বল এত জোরে ভিতরে এল যে তিনি সামলাতেই পারেননি।
এই উইকেটে কী এমন ছিল যে পাঞ্জাব কিংসও ১১১ রানে গুটিয়ে গেল। সেটাও ১৫.৩ ওভারে। প্রশ্ন উঠছে। রিকি পন্টিং নিশ্চয়ই ভুল খুঁজতে বুঝবেন। কিন্তু এই ব্যাটিং ভরাডুবির কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাবেন বলে মনে হয় না। এটা কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের সর্বনিম্ন স্কোর। পাঞ্জাবের ইনিংসে কোনও পার্টনারশিপ হয়নি এটা ঘটনা। দল একটু বেশিই টপ অর্ডার নির্ভর হয়ে পড়েছিল। এটাও ঘটনা। তবে নাইটদের ফিল্ডিং যেমন ভাল হয়েছে, তেমনই বোলাররাও ভাল বল করলেন। যে যখন হাতে বল পেলেন, রাহানেকে উইকেট উপহার দিলেন।

আরও পড়ুন-নববর্ষে মুখ্যমন্ত্রীর নতুন গান, গাইলেন শ্রীরাধা

প্রভশিমরন (৩০) আর প্রিয়াংশ (২২) যেভাবে শুরু করেছিলেন তাতে কিন্তু মনে হচ্ছিল পাঞ্জাবের রান অনেক দূর যাবে। পাওয়ার প্লে-তেও বড় রানের দিকে এগোচ্ছিল তারা। কিন্তু ৩.২ ওভারে ৩৯/০ থেকে ৬ ওভারের শেষে তাদের রান দাঁড়াল ৫৪/৪। মনে হতে পরে পাঞ্জাব ইনিংসে আচমকা এই ধস কে নামালেন। সেটা হর্ষিত রানা। দুই পাঞ্জাব ওপেনারের সঙ্গে অধিনায়ক শ্রেয়সের (০) উইকেটও তাঁর দখলে। এজন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য রামনদীপের। নিজের মাঠে ডিপ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে পরপর কটা ক্যাচ নিয়ে পাঞ্জাব ইনিংসকে চাপে ফেলে দেন।
রাহানে হর্ষিতকে প্রথম স্পেলে টানা তিন ওভার বল করিয়ে গেলেন। সোজা হিসেব, উইকেট আসছে মানে চালিয়ে যাও। এরমধ্যে জস ইনগ্লিশকে (২) বরুণ এসে বোল্ড করে দিয়েছেন। ৫৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে শ্রেয়সরা তখন ভয়ানক চাপে। অথচ, প্রথম তিন ওভারে হর্ষিত, নরখিয়া আর বৈভব বেশ মার খেয়েছেন। এই ফরম্যাটে হাফভলি বল দেওয়া অপরাধ। বল ফেলতে হবে গুড লেংথের সামান্য আগে। যাতে ব্যাটাররা বল পর্যন্ত যেতে না পারে। দুই পাঞ্জাব ওপেনার এই সুবিধাটাই নিয়ে যান। কিন্তু হর্ষিত শেষপর্যন্ত দু’জনকে ফিরিয়ে দিয়ে নাইটদের স্বস্তি দিয়েছেন।
পাওয়ার প্লে-তে হর্ষিত গোটা দুয়েক উইকেট নিয়ে পাঞ্জাবকে সেই যে চাপে ফেলে দিলেন, তারা সেখান থেকে আর বেরোতে পারেনি। তিনি শেষপর্যন্ত ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। দুটি করে উইকেট বরুণ ও নারিনের। এই ম্যাচের পর পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচে ৩৬ উইকেট হয়ে গেল নারিনের। এটাই সর্বোচ্চ। নরখিয়া ও বৈভব ১টি করে উইকেট পেয়েছেন। পাঞ্জাব ইনিংসে ম্যাক্সওয়েল (৭), ওয়াধেরা (১০) রান করতে পারেননি। শশাঙ্ক সিং শুধু শেষদিকে ১৮ রান করে যান।
শ্রেয়সের এদিন টসে জিতে আগে ব্যাট করাকে কেউ কেউ হারাকিরি বললেন। উইকেটে যে বোলারদের জন্য কিছু আছে সেটা ধরতে পারেননি। নিউ চণ্ডীগড় বলুন বা মুল্লানপুর, এখানকার মাঠে এবার মাত্র দুটো ম্যাচ হয়েছে। তারপরও উইকেট নিয়ে কিছুটা ধাঁধা ছিল। শ্রেয়স অবশ্য পরিষ্কার বললেন, যারা এখানে আগে ব্যাট করছে তারা জিতছে। আর উইকেট দেখে ভালই লাগছে। রাহানে আবার বলে দিলেন, তিনি টসে জিতলে বোলিং নিতেন। রাহানের দাবি, কেকেআরের যা ব্যাটিং লাইন আপ তাতে রান তাড়া করে খুব একটা কঠিন ব্যাপার হবে না। পরে মনে হল শ্রেয়স বড্ড সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।
লম্বা অপেক্ষার পর মঙ্গলবার কেকেআরে অভিষেক হল আন্দ্রে নরখিয়ার। চোটের জন্য এতদিন ম্যাচে নামতে পারেননি তিনি। কিন্তু এখানে যে তিনি খেলবেন তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছিল গত দু’দিনের নেটে। এক টানা ১৪০ কিমি গতিতে বল করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ফাস্ট বোলার। এই ম্যাচে মইন আলির জায়গায় খেলেন তিনি। এতে একটা বার্তা স্পষ্ট। নাইটরা ধরে নিয়েছিল এই উইকেট সিমারদের পাশে থাকবে। তাই স্পিনার কমিয়ে একসঙ্গে খেলানো হল তিন সিমার নরখিয়া, বৈভব ও হর্ষিতকে। নরখিয়া ৩ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ওয়াধেরার উইকেট নিয়েছেন।

Latest article