কমল মজুমদার, জঙ্গিপুর: শীতের আমেজ আর মিঠে কড়া রোদ গায়ে মেখে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে। আর এই জেলার জঙ্গিপুর এলে এখানকার সবথেকে খ্যাত মিষ্টি ছানাবড়া একবার চেখে দেখেন না এমন পর্যটক মেলা ভার। তবে অনেক মিষ্টির দোকানের মালিকই আফসোস করেন, একসময় বর্ধমানের মিহিদানা, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়ার সঙ্গে স্বাদ এবং গুণমানে যে মিষ্টির সমানে সমানে টক্কর চলত, এখন অন্য বিভিন্ন মিষ্টির কাছে সেই ছানাবড়ার কদর কিছুটা কমেছে।
আরও পড়ুন-পাখির চোখ সুপার সিক্স, আগ্রাসী ফুটবলই হাতিয়ার অস্কারের
তবে কালো ও গোলাকৃতি, কিছুটা শক্ত এই মিষ্টি দিয়েই এখনও মুর্শিদাবাদ জেলাবাসী যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়ন করা পছন্দ করেন। বহু ঐতিহাসিক বলেন, একবার মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী ব্রিটিশদের জন্য নিজের বাড়িতে একটি ‘পার্টি’ দিয়েছিলেন। সেই সময় জনৈক পটল ওস্তাদকে তিনি দায়িত্ব দেন এমন একটি মিষ্টি তৈরির জন্য যা খেয়ে সাহেবরা তারিফ করবেন। কথিত যে, তখন পটল ওস্তাদই ছানাবড়া মিষ্টি আবিষ্কার করেন এবং তাঁর হাতের তৈরি মিষ্টি খেয়ে মহারাজা নন্দকুমারের তারিফ করেন ব্রিটিশরা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন এলেও জনপ্রিয় এই মিষ্টির স্বাদ সম্পর্কে অবগত পর্যটকেরা। জঙ্গিপুর, সুতি, রঘুনাথগঞ্জে ঘুরতে এলে হাঁড়িভর্তি ছানাবড়া কিনে অনেকেই বাড়ি ফেরেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে লোকসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী পর্যন্ত প্রত্যেকেই বহরমপুরের এই মিষ্টি খেয়ে তারিফ করে গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের এক মিষ্টির দোকানের মালিক শৌভিক ঘোষ বলেন, ‘অন্য মিষ্টি তৈরির থেকে ছানাবড়া তৈরির জন্য একজন কারিগরের অনেক বেশি সময় লাগে। ছানাকে চিনির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে গোলাকৃতি করে তারপর তা ঘি বা ডালডায় ভাজা হয়। এরপর রসে ভিজিয়ে রাখতে হয়।’ তৈরির পদ্ধতিটি শুনতে সোজা লাগলেও জটিল প্রক্রিয়ার জন্য এখন খুব কম সংখ্যক পারদর্শী কারিগর মেলে। আহিরণ ব্যারেজ মার্কেটে মিষ্টির দোকানের মালিক মনোজ দাস বলেন, ছানাবড়া তৈরির উপকরণের দাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় অন্য মিষ্টি ৭-১০ টাকায় বিক্রি করা গেলেও ভাল মানের ছানাবড়া ১৫-২০ টাকা প্রতি পিস খরচ পড়ে যায়। তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এখনও যে ছানাবড়ার ভাল বাজার রয়েছে তা স্বীকার করে রঘুনাথগঞ্জের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা জানান, কেবলমাত্র রঘুনাথগঞ্জের মিষ্টির দোকান থেকেই বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার ছানাবড়া বিক্রি হয়। এর বেশিটাই কেনেন জেলার বাইরের মানুষেরা।