বর্ষার মরশুমে বৃষ্টি উপভোগ করার জন্য অনেকেই ডানা মেলেন। কারণ চেনা চৌহদ্দির বাইরে বৃষ্টি উপভোগ করার মজাই আলাদা। কেউ যান সমুদ্রে, কেউ পাহাড়ে, কেউ জঙ্গলে। বর্ষাবাসের সেরা ঠিকানা কিন্তু মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি। কেন? এটাই বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান। ফলে এমন একটি জায়গায় বর্ষার মরশুম কাটানো মানে বিরল অভিজ্ঞতা লাভ। রীতিমতো স্বপ্নের মতো। ঘরের জানলা খুলে দেখতে পাবেন, বাইরে ঝমঝম ঝমঝম। বৃষ্টির জলতরঙ্গ মনের মধ্যে খুশির ঢেউ তুলবে। বাইরে বেরলে আনন্দ দ্বিগুণ। নিজে ভিজবেন, পাশাপাশি দেখবেন সবুজ প্রকৃতির ভেজা। ছাতা মাথায় বেরলে একরকমের আনন্দ, ছাতা ছাড়া বেরলে আরেকরকম আনন্দ। সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
বর্তমানে বাঙালির ভ্রমণ মানচিত্রে চেরাপুঞ্জি (Cherrapunji) একটি আকর্ষণীয় নাম। ১৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত জায়গাটা। স্থানীয় নাম ‘সোহরা’।
খাসি সাহিত্য ও সংস্কৃতির পীঠস্থান চেরাপুঞ্জি। শিলং শহর থেকে দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার। দীর্ঘ যাত্রাপথ। পাহাড়ের বুক চিরে এগিয়ে চলেছে রাস্তা। সন্তর্পণে ছুটে চলে গাড়ি। চোখে পড়বে ছোট ছোট গ্রাম, সবুজ উপত্যকা, কৃষিজমি, পাইন গাছের ছায়া, রকমারি ফলের বাগান, টেবলটপ পাহাড়, কয়লার খাদান। মেঘ-বৃষ্টির দেশ, অবিরাম ধারা ভিজিয়ে দেবে সমস্তকিছু। বৃষ্টিই এখানকার মূল আকর্ষণ। পাশাপাশি আরও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। ঘুরে দেখা যায় সেইগুলোও।
চেরাপুঞ্জির (Cherrapunji) মধ্যেই অবস্থিত মওসিনরাম। এখানে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়। বছরে প্রায় ২৩০০ মিমি। রয়েছে প্রাকৃতিক গুহা, রক ও রিতমাংসির ভিউ পয়েন্ট নামের দর্শনীয় স্থান। দেখতে পারেন স্ট্যালাগ মাধই পাথরের শিবলিঙ্গ। এ এক বিস্ময়কর আরণ্যক প্রাচীন গুহা, যার দৈর্ঘ্য ও গভীরতা আজও অজানা। প্রবেশপথে সাজানো আছে বেশ কিছু মনোলিথ পিলার তোরণ। অন্যতম আকর্ষণ ডবল ডেকার রুট ব্রিজ। এখানে সিঁড়ি বেয়ে ২,৫০০ ফুট উপরে উঠতে হয়। নেমে যেতে হয় বিকেলের মধ্যে। পায়ে হেঁটে গেলে দেখা মিলবে ঘন জঙ্গল, ঝরনা, নদী ও নদীর উপরের এক সুন্দর লিভিং রুট ব্রিজের।
চেরাপুঞ্জির নোহকালীকাই ফলস এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত। বর্ষায় অপূর্ব সুন্দর হয়ে ওঠে। এখানে ট্রেকিংয়ের সুযোগ আছে। তবে বর্ষায় নয়, শীতের সময়। চেরাপুঞ্জিতে আছে রামকৃষ্ণ মিশন। মিশনের ঘরবাড়ি ও নৃতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা ঘুরে দেখা যায়। ভৌতিক পরিবেশ হিসেবে জনশ্রুতি আছে মোসমাই কেভের। এই গুহা ঘুরে দেখলে অন্যরকম রোমাঞ্চ হবে। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ মোসমাই ফলস। চেরাপুঞ্জি বাজার থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটা বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম জলপ্রপাত।
আরও পড়ুন-কৃষকবন্ধু ও বাংলা শস্যবিমার আর্থিক সাহায্য নিয়ে কৃষকদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী
ঘুরে আসা যায় মকডক ভিউ পয়েন্ট থেকে। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে পাহাড়ের ঢেউ খেলানো রূপ দেখা যাবে।
চারিদিকে সবুজের সমারোহ ও হিমশীতল একটি পার্ক থাংখারাং পার্ক। সারা বছর বহু পর্যটক ভিড় জমান। ঘুরে দেখেন। কালীকাই ফলস অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। নানা ধরনের অর্কিড ও রঙিন প্রজাপতির মেলা আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এই জলপ্রপাতের চারপাশের পরিবেশ। গেলে হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে। এছাড়াও আছে রেইনবো ফলস, সেভেন সিস্টারস ঝরনা, ইকো পার্ক, আরওয়া কেভ, খরম্মা স্টোনের মতো আরও কিছু দর্শনীয় স্থান।
চেরাপুঞ্জির আসল সৌন্দর্য বৃষ্টি। বর্ষার দিনে ঝরনাগুলো জলে পরিপূর্ণ থাকে। জুন-অগাস্টের মধ্যে গেলে মন ভরে যাবে। অনেকেই বেশ কয়েকদিন কাটিয়ে আসেন মেঘ-বৃষ্টির দেশে। পাহাড় জঙ্গল ঘেরা নিরিবিলি পরিবেশে বর্ষাবাস করেন। আপনিও ঘুরে আসুন।
কয়েকটা বিষয় জেনে নিন। পাহাড়ি পথে হাঁটার জন্য ভাল গ্রিপ আছে এমন ট্রাভেলিং বা ট্রেকিং জুতো সঙ্গে নিতে হবে। অবশ্যই রেনকোট, ছাতা, টর্চ সঙ্গে রাখবেন। ডবল ডেকার রুট ব্রিজে যেতে হলে প্রায় ২,৫০০ ফুট সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে হবে। তাই শারীরিক সক্ষমতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সকাল সকাল গিয়ে বিকেলের মধ্যে ফেরে আসতে হবে। চেরাপুঞ্জির সব ঝরনাই দিনের বেশিরভাগ সময় মেঘে ঢাকা থাকে। তাই ঝরনার পরিপূর্ণ রূপ দেখার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে পারেন। তাহলে? ভাবনাচিন্তা দূরে সরিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। চেরাপুঞ্জি ঘুরে আসুন সপরিবারে।
কীভাবে যাবেন?
আগে শিলং পৌঁছে যান। শিলং থেকে শেয়ার গাড়ি কিংবা ট্যাক্সিতে চড়ে সহজেই চেরাপুঞ্জি যেতে পারবেন। চেরাপুঞ্জি (Cherrapunji) বা শিলং দলবেঁধে যাওয়া সবচেয়ে ভাল। তাতে খরচ কম পড়ে। আলাদা আলাদা ভাবে না ঘুরে গাড়ি রিজার্ভ করেও পুরো চেরাপুঞ্জি বেড়ানো যায়।
কোথায় থাকবেন?
চেরাপুঞ্জিতে (Cherrapunji) থাকার জন্য বেশ কিছু রিসর্ট রয়েছে। সিজন অনুযায়ী ভাড়া কমবেশি হয়ে থাকে। হলিডে রিসর্ট চেরাপুঞ্জি থেকে ১৪ কিমি দূরে। এখানে ব্যবস্থা ভালই। খরচ নাগালের মধ্যে। এ-ছাড়াও আছে পালা রিসর্ট, ক্যাফে চেরাপুঞ্জি, কুটুমাদান রিসর্ট, পোলো অর্কিড রিসর্ট, গ্রিন ভ্যালি রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড অ্যাকোমোডেশন, ডি-ক্লাউড গেস্ট হাউস, লা কুপার ইনের মতো থাকার জন্য কিছু ভাল ব্যবস্থা। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। তবে আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল।