বাড়ছে বেতন, চিকিৎসকদের জন্য বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

এছাড়া সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি ছিলেন বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের চিকিৎসকরাও।

Must read

আজ, সোমবার চিকিৎসকদের মুখোমুখি হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ধনধান্য স্টেডিয়ামে সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব সহ স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তারা। এছাড়া সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি ছিলেন বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের চিকিৎসকরাও।

আরও পড়ুন-চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ১০ মাসে আয় ৩৮, ৪০০ কোটি টাকা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন প্রথমেই মঞ্চ থেকে আবার মনে করালেন, তিলোত্তমার শাস্তির দাবিতে তিনি নিজে রাস্তায় হেঁটেছিলেন। এমনকী ‘অপরাজিতা বিল’ও এনেছেন, যা এখনও পড়ে রয়েছে। তিলোত্তমার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে নিজের বক্তব্য শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”বাম আমলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অবহেলা করা হয়েছে। একজন রাজ্যমন্ত্রী ওই দফতর দেখতেন। তাই টিমটিম করে চলত সব কিছু। আমি নিজের হাতে দফতরটা রেখেছি, কারণ একজন রাজ্যমন্ত্রীর পক্ষে এটা দেখা সম্ভব নয়। বামফ্রন্ট আমলে চিকিৎসার অবহেলা হতো। এই বিষয়টা সামগ্রিক ভাবে নজর রাখতে হয়, দেখতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজারটা ভাল করলেও বেরোবে না। একটা খারাপ কাজ করলে এমন প্রচার হয়, যাতে মনে হয় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কেউ কোনও কাজ করছেন না। চিকিৎসক মানে সেবা-নিষ্ঠা-জ্ঞান-মানবতা-সমবেদনা। আজকাল ফেক ওষুধও বেরিয়ে গেছে। মানুষের লোভ এত বেড়ে গেছে, একটা ভাল কাজকে খারাপ করে দিতে এক সেকেন্ড লাগে। আপনারা ছিলেন বলেই আজ এত ভাল সব কিছু হয়েছে। আমি আগে যেতাম পিজি, শম্ভুনাথ, মেডিক্যাল কলেজ– এইসব সরকারি হাসপাতালে। সব জায়গায় ছোট্ট ছোট্ট গেট ছিল। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বেরোনোর উপায় নেই। আমরা তখনই গেটগুলো আগে বড় করি, হাসপাতাল রং করি, নাইট শেল্টারের ব্যবস্থা করি। আগে দেখতে ভাল হওয়া দরকার, তার পরে গুণ বিচার করা হবে।”

নিয়োগ প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”জেলা হাসপাতালগুলোকে বলছি, হঠাৎ রেফার করবেন না। কলকাতায় সামলানো মুশকিল হয়ে যায়। আমরা রাজ্যে ৪৩৫৪টি এমবিবিএস সিট বাড়িয়েছি। ২৬ হাজার নার্সিং সিট বেড়েছে। তবে নিয়োগ হচ্ছে আরও। কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ের নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। কারণ ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে একটা মামলা করা হয়েছে। কিছু দুষ্টু লোক আছে যারা কাজের কাজ করে না। অকাজের কাজ করে। কত নিয়োগ আটকে আছে।”

আরও পড়ুন-নেতৃত্বে জ্যোতিপ্রিয়, পথে নামল ফ্যাম

এরপরেই তিনি পুলিশকে সতর্ক করে বলেন, ”দুর্ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। সঠিক পদক্ষেপ করার প্রয়োজন আছে। গলির কর্নারে ওয়াচ টাওয়ার লাগান। এমপি, এমএলএ-রা দরকার হলে তাদের ল্যাডের টাকা দেবে। আমি পছন্দ করি ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা। আমি কোন হরিদাস যে দাঁড়াতে পারব না! ভিআইপি যাবে বলে অন্য গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া ঠিক নয়। কোনও ভিআইপি-র জন্য গাড়ি বন্ধ থাকবে না। সাইবার ক্রাইম ডেঞ্জারাস। পুলিশকে শুধু ঘুরলে হবে না। বুদ্ধিটা সবসময় কাজে লাগাতে হবে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, “কিছু এক্স সার্ভিসম্যানকে নিয়ে নাও। তাঁদের দিয়ে অনেক জায়গায় কাজ করাতে পারি। পুলিশকে আরও বেশি সতর্ক করতে হবে। দরকার হলে মোবাইল ভ্যান বাড়িয়ে দাও। আমি পছন্দ করি ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা। আমি কোন হরিদাস যে দাঁড়াতে পারব না।”

আরও পড়ুন-৮৪টি ওষুধ অত্যন্ত বিপজ্জনক স্বীকার কেন্দ্রের রিপোর্টেই

প্রসঙ্গত, এদিন আরো একবার তিনি প্রতুল মুখ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করে বলেন, “আমি সাধারণত মৃত মানুষকে দেখতে যাই না। আমার কাছে জীবিত অবস্থার মানুষটিই আসল। প্রতুলদাকে দেখতে গিয়ে কাছে দাঁড়িয়ে ডাকলাম। প্রতুল দা ও প্রতুল দা, আমি মমতা। বিশ্বাস করুন উনি চোখ খুললেন, চোখ দুটো জলে ভরে গেল। হঠাৎ পালস ড্রপ করে গেল ৯৫ থেকে ৯৩-তে। হৃদয়ে ব্যাথা হচ্ছে। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছে। দুটো হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন কি না জানিনা। ইশারায় বললেন পারবেন না। তবু আমার মনে আশা ছিল। তবে আমি বই থেকে জেনেছি, আমি রিসার্চ করিনি যে আত্মা মারা গেলেও তার মধ্যে একটা বোধ থাকে। তার প্রাণটা কিন্তু থাকে অনেকক্ষণ।”

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

এরপরেই চিকিৎসকদের জন্য একের পর এক বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন ইন্টার্ন, হাউসস্টাফ, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি, পোস্ট ডক্টরেট ট্রেনি- সবার বেতন ১০,০০০ টাকা করে বাড়ানো হচ্ছে। আগে সরকারি হাসপাতালের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা যেত। সেই পরিধি বাড়িয়ে ৩০ কিলোমিটার করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্যালাইন-কাণ্ডে যে সব জুনিয়র ডাক্তারদের সাসপেন্ড করা হয়েছিল, তাঁদের সাসপেনশন তুলে দেওয়া হল। সর্বস্তরের সিনিয়র ডাক্তারদের বেতন বাড়ল ১৫,০০০ টাকা করে।”

 

Latest article