প্রতিবেদন : আমি যখন যাদবপুরের সাংসদ, তখন থেকেই এখানে যাতায়াত। জায়গাটার সঙ্গে একটা মমত্ব বোধ জড়িয়ে গিয়েছে। একটা আত্মার সম্পর্ক। রবিবার পুজো উদ্বোধনের মাঝেই নবনীড় বৃদ্ধাশ্রমে বসে একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবার আসেন, এবারও অন্যথা হল না নেত্রীর। ঠান্ডা লেগে গলা বসে যাওয়ায় বক্তব্য ছিল সংক্ষিপ্ত। বললেন, আপনারা যেভাবে আশীর্বাদ করেছেন সারাজীবন এভাবেই যেন আশীর্বাদ পাই। আমি কৃতজ্ঞ। কোভিডের জন্য দু’বছর আপনারা বেরোতে পারেননি কোথাও। কিন্ত শুধুমাত্র আমার নির্বাচন বলেই সব ভুলে ভোট দিতে গিয়েছেন। আমি চিরঋণী।
আরও পড়ুন: ২০ জেলার ২৩৭ টি পুজোর সূচনা! পঞ্চমীতে নবনীড়েও মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হয়ে সারা বছর নবনীড়ের যাবতীয় খোঁজখবর রাখেন মন্ত্রী, চেতলার ঘরের ছেলে ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদ নিজেও সেকথা বললেন। নবনীড়ে এখন ৮৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকেন। তাঁদের অনেকেরই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামায় অসুবিধে। এখবর জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দিয়ে লিফট বসিয়ে দিয়েছেন। এদিন ফিরহাদ হাকিম বললেন, মমতাদি আমায় মাসে অন্তত তিনবার জিজ্ঞাসা করেন নবনীড়ের খবর। খোঁজ নেন সকলে কেমন আছেন। কোনও অসুবিধা হচ্ছে না তো। কোভিডের জন্য গতবছর পুজোয় বাসে করে বেড়ানো হয়নি। সেকথা মনে করিয়ে উপস্থিত ইন্দ্রনীল সেন বললেন, কোভিড চলে গেলে আবার সকলে মিলে ঠাকুর দেখতে যাওয়া হবে। আর ঠাকুর দেখতে গিয়ে একজন নাকি হারিয়ে গিয়েছিলেন। পরে জানা যায় তিনি সিংহী পার্কে ফুচকা খাচ্ছিলেন। ইন্দ্রনীল সেন ও ফিরহাদ হাকিম তাঁকে খুঁজে আনেন। এই হারিয়ে যাওয়া নিয়ে সেবার কী পরিমাণ টেনশন হয়েছিল, সেকথা বলতে গিয়ে হেসে গড়িয়ে পড়ছেন ইন্দ্রনীল আর ফিরহাদ। পাশে মাটির ভাঁড়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে হাসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর যাঁদের নিয়ে এতসব ঘটনা, তাঁরাও তখন হেসে কুটিপাটি।
ফিরহাদ হাকিমের মা বেঁচে থাকতে নবনীড়ে আসতেন আবাসিক মহিলাদের সঙ্গে গল্পগাছা করতে। সেকথা স্মরণ করে ফিরহাদ বললেন, আমাদের কারও মা বেঁচে নেই। আপনারা আমাদের মা। এখানে আপনাদের দেখতে আসি। আপনারা ভাল থাকলে আমরাও ভাল থাকব। এভাবেই পঞ্চমীর বিকেলে নবনীড়ে জমে উঠল ঘরোয়া আড্ডা। কোভিডের কারণে নবনীড়ের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ঠাকুর দেখতে বা অঞ্জলি দিতে বাইরে বেরোতে পারেন না। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নবনীড়েই মা দুর্গার পুজার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। এবছরও পুজো হচ্ছে।
মা দুর্গা এসে গেছেন। পঞ্চমী থেকে অষ্টমী নিরামিষ। কিন্তু এখানকার আবাসিকদের আবদারে নবমীতে মাংস-ভাত দিয়ে জমিয়ে ভূরিভোজ। নবনীড়ে পঞ্চমীর আড্ডা শুধু কথাতেই থেমে থাকেনি। ছিল গানও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসতেই মহিলা আবাসিকরা ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গেয়ে স্বাগত জানান। ইন্দ্রনীল সেন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ও সুরে এবারের পুজোর গান ‘স্বর্গাদপী গরীয়সী তুমি মা, তুমি মা জগৎ জননী’ গেয়ে শোনান প্রথমে। এরপর মাত্র পাঁচ-ছয়দিন আগে গাড়িতে যেতে যেতে যে গানটি লিখেছেন সেই ‘মাটির ছোট্ট কুটীরে, আমার স্বপ্ন দেখার গভীরে ঢুকে পড়েছে চাঁদ’ গেয়ে শোনান। শেষ হয় আড্ডা।
আরও পড়ুন: মহা পঞ্চমীতেও ৩৬৬ জন এলেন তৃণমূল কংগ্রেসে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানকার আবাসিকদের জন্য তাঁর গানের সিডি নিয়ে এসেছিলেন। শাড়ি-সহ অন্যান্য উপহারের সঙ্গে সকলে গানের সিডিও পেলেন এদিন। ফিরে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়ির কালীপুজোয় নবনীড়ের সকলকে যাওয়ার আমন্ত্রণ করে গেলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ধীরপায়ে গাড়ির দিকে এগোচ্ছেন তখন মহিলা আাবাসিকরা দু’হাত তুলে বলছেন, আবার এসো মা। আসলে মমতাই যে আদতে তাঁদের শেষ জীবনের স্বজন। বড় আপনজন। তাই তাঁর চলে যাওয় দেখতে দেখতে তাঁরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশীর্বাদ করেন, তুমিও ভাল থাকো মা। এদিন আলিপুর বডিগার্ড লাইন ও নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘের পুজোরও উদ্বোধন করেন।